জামাই–শ্বশুরের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা
Published: 14th, January 2025 GMT
গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিনিরাইল গ্রামের ফসলের জমিতে প্রতি বছরের মতো এবারো বসেছে আড়াইশ বছরের পুরনো মাছের মেলা। এটি মূলত মাছের মেলা হলেও সবাই একে জামাই মেলা বলেই জানে। বিনিরাইল ও আশপাশের গ্রামের জামাইরা এ মেলার মূল ক্রেতা। জামাইরা যেমন বড় মাছ কিনে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য মেলায় আসেন, তেমনি শ্বশুররাও জামাইকে মেহমানদারী করার জন্য বড় মাছ কিনতে আসেন। মেলা যেন জামাই–শ্বশুরের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতার মাঠ।
বিনিরাইল গ্রামে প্রতিবছর অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। মেলায় সকাল থেকেই বসেছে সারি সারি মাছের দোকান। সামুদ্রিক বড় মাছের পাশাপাশি এখানে দেশীয় প্রজাতির নানা মাছের সমাহার। মাছের মেলায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানা রকম অঙ্গ ভঙ্গি ও সুরে সুরে হাঁক ডাক করছেন দোকানিরা। বড় মাছ মাথার ওপরে তুলে জানান দিচ্ছেন মেলার বড় মাছটি তিনি এনেছেন। দোকানিদের এমন চটকদারিতে ক্রেতারাও ঝুঁকছেন স্টলগুলোতে। মেলায় ৩ শতাধিক মাছের স্টল ছাড়াও রয়েছে আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি, নিমকি-মোরালি, হাওয়াই মিঠাই, বস্ত্র, হস্ত ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যেরও বাহার।
কথিত আছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা-অর্চনাকে ঘিরে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ১৮শতকে মেলাটির প্রচলন হয়। মূলত মাছ মেলা হিসেবে শুরু হলেও পরবর্তীতে এটি জামাই মেলা নামে পরিচিতি পায়। প্রতি বছর মেলাকে কেন্দ্র করে বিনিরাইল ও আশপাশের কয়েক গ্রামের শ্বশুররা তাদের মেয়ের জামাইকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানায়। মেয়েরা তাদের স্বামীদের নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। জামাইরা মেলা থেকে মাছ কিনে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যায়। সেই থেকেই এ মেলা জামাই মেলা নামে পরিচিতি পায়।
কথা হয় মেলায় ঘুরতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থীর সাথে। তারা জানান, মেলা উপলক্ষে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করে আনা এই এলাকার মানুষের রীতিতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর এই মেলায় দল বেঁধে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে তারা ঘুরতে আসেন।
এ সময় কেউ কেউ জানান, তারা একেবারেই নতুন। এ মেলা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক বেশি ভাইরাল, তাই দেখতে এসেছেন। মেলাকে ঘিরে বিনিরাইলের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।
মেলার মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছরই এই মেলায় তারা আসেন। অন্য বছর বেচাকেনা ভালো থাকলেও এবারের বেচাকেনা খুবই মন্দা ভাব যাচ্ছে। তারা সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ বিক্রি করেন। মেলায় কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভিড় বেশী। তবে বেচা-কেনা যাই হউক স্থানীয় মানুষের সাথে সম্পর্কের কারণে প্রতি বছরই আসেন তারা।
এ অঞ্চলের জামাইরা তাদের শ্বশুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ পেয়ে বেড়াতে এসে মাছ কিনে শ্বশুর বাড়ি যায়। আবার শ্বশুররাও বড় মাছ কিনে জামাইদের সমাদর করেন। ব্যবসার পাশাপাশি জামাই শ্বশুরের এই যুদ্ধ দেখতে বেশ ভালো লাগে বলেও জানান তারা।
কথা হয় মেলায় মাছ কিনতে আসা এলাকার কয়েকজন জামাই ক্রেতার সাথে। তারা জানান, তারা এ উপজেলায় বিয়ে করেছেন। প্রতিবছরই এ মেলা উপলক্ষে দাওয়াত পান তারা। এবারও শ্বশুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ পেয়ে বৌ নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। আর বেড়াতে আসলেই মেলা থেকে বড় মাছ কিনে শ্বশুর বাড়িতে যান এবং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ মেলা যেনো তাদের জন্য মিলন মেলা।
আয়োজকরা জানান, শুরুতে মেলা অনুষ্ঠিত হতো ক্ষুদ্র পরিসরে। এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। এটি এক সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মেলা হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। ব্রিটিশ আমল থেকে আয়োজন করে আসা বিনিরাইলের মেলার বয়স আড়াইশ বছর ছাড়িয়েছে। তাই বেড়েছে মেলার পরিধিও। মেলাটি এখন স্থানীয়দের কাছে ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা গাজীপুর জেলার সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবেও স্বীকৃত।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, “বিনিরাইলের মাছের মেলাটি স্থানীয় একটি ঐতিহ্য। বহু বছরের পুরনো এই মেলাকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে রয়েছে নানা ধরণের কথা। তবে ইতিহাস ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে গ্রাম-গঞ্জে এ ধরণের আয়োজন সত্যি আমাদের চিরায়ত বাংলার রূপই ফুটে উঠে।”
ঢাকা/রফিক/ইমন
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম আলোর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি উৎসব আগামী ১৫ ও ১৬ মে
আগামী ১৫ ও ১৬ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি উৎসব’। এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো হতে যাচ্ছে এই উৎসব, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-সংক্রান্ত খবর ও তথ্য জানতে পারবেন। এ ভর্তি উৎসবের আয়োজন করছে প্রথম আলো।
আজ সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি উৎসব’ নিয়ে আয়োজিত প্রস্তুতিমূলক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে এই উৎসবে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। গতবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারের উৎসবকে আরও কীভাবে ভালো করা যায়, সে বিষয়ে বিভিন্ন রকমের প্রস্তাব ও পরামর্শ দেন তাঁরা। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এসব পরামর্শ নিয়ে এবারের উৎসবকে কীভাবে আরও বেশি ভালো করা যায়, সেই প্রচেষ্টা করা হবে।
আয়োজকেরা জানান, ভর্তি উৎসবসংক্রান্ত তথ্যের জন্য ই–মেইল করা যাবে- ([email protected]) এই ঠিকানায় এবং ফোন করা যাবে (০১৪০৪৪৪০০৫০) এই নম্বরে।
এর আগে ২০২৩ সালের ২৩ ও ২৪ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘জিপিএইচ ইস্পাত-প্রথম আলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি উৎসব’। ওই বছর ভর্তি উৎসবে ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইএমকে সেন্টারসহ মোট ৪৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। তখন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্টল থেকে ভর্তির তথ্য, বৃত্তির খবর এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারেন। উৎসবে ছিল বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা সংলাপ। এ ছাড়া উৎসবে আসা দর্শনার্থীদের জন্য ছিল র্যাফল ড্রর মাধ্যমে মোটরসাইকেল, ল্যাপটপ, মুঠোফোনসহ বেশ কিছু আকর্ষণীয় পুরস্কার।
গত বছর এই উৎসবের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হলেও পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত সেটি করা যায়নি। এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উৎসবে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়োজনের কলেবরও বাড়বে বলে আশা করছেন আয়োজকেরা।
‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি উৎসব’ নিয়ে আয়োজিত প্রস্তুতিমূলক মতবিনিময় সভায় এই উৎসবের নানা দিক তুলে ধরেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান। আজ সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে