পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন পাওয়া দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) আবেদন স্থগিত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইসঙ্গে এ কোম্পানি নিয়ে যৌথভাবে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএসইসি ও ডিএসই কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিএসইসির ৯৩৯তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ৯ জুন শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯১১তম কমিশন সভায় দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের কিউআইও অনুমোদন দেওয়া হয়।
গত ৫ ডিসেম্বর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন লিখিতভাবে সম্মতিপত্র (কনসেন্ট লেটার) দেয়। এরপর দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের কিউআইও আবেদন গ্রহণের জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সম্প্রতি দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের সেবা প্রদান সংক্রান্ত চুক্তি, মুনাফা ও আয় নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, যা কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এর আলোকে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
এসএমই খাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে দুয়ার সার্ভিসেস পিএলসিকে ৫ কোটি টাকার কিউআইও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুয়ার সার্ভিসেস প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ৫০ লাখ শেয়ার যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে ইস্যু করে বাজার থেকে ৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট (দুয়ার স্কুল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, ডি-কুরিয়ার, কল সেন্টার ও ট্র্যাকিং সিস্টেম ও এআই সফটওয়্যার), ক্লাউড কম্পিউটিং ও আনুষঙ্গিক খরচসহ ইস্যু ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করবে।
দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের ২০২২-২৩ অর্থবছরে শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখানো হয়েছে ৪.
ঢাকা/এনটি/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নজরদারিতে ৬ ব্রোকারের কার্যক্রম, তদন্ত করবে বিএসইসি
পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত ছয়টি ব্রোকারেজ হাউজের সার্বিক কার্যক্রম নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ব্রোকারেজ হাউজগুলোর নাম হলো-সিনহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নং-৬৭), আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নং-১২৯), এসআইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নং-৯৪), বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নং-৩০), আইএফআইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নং-১৯২) ও গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নং-৫৯)।
জানা গেছে, তদন্ত কমিটি ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মার্জিন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেগেটিভ ইক্যুইটিসহ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেতিবাচক ইক্যুইটি কেন বাড়ছে ও এর জন্য কারা দায়ী, নেতিবাচক ইক্যুইটির পরিমাণ, প্রভিশনস বা মার্জিন অ্যাকাউন্টের বিপরীতে রক্ষিত তহবিল, প্রভিশনসের ঘাটতি, মার্জিন অ্যাকাউন্টে অননুমোদিত লেনদেনসহ আরো বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখবে।
আরো পড়ুন:
অর্ধবার্ষিকে দুই কোম্পানির মুনাফা কমেছে
বিশেষ তহবিলের আকার ও সময় বাড়ানোর সুপারিশ ডিবিএর
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন থেকে জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসির জারি করা পৃথক দুইটি আদেশ ছয়টি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রেরণ করা হয়েছে।
সিনহা সিকিউরিটিজ, আইসিবি সিকিউরিটিজ ও এসআইবিএল সিকিউরিটিজের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক উম্মে সালমা, সহকারী পরিচালক আলী আহসান এবং অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. রবিউল হক।
এছাড়া বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ, আইএফআইসি সিকিউরিটিজ ও গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মুসতারি জাহান, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এবং সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল বাতেন।
তথ্য অনুযায়ী, বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে সিনহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড, এসআইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ লিমিটেড, আইএফআইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুল ১৭ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত) বিধিমালা, ২০০০ এর বিধি ১৫ ও ১৬ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন তিনজন করে মোট ৬ জন কর্মকর্তাকে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কার্যক্রম তদন্ত করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো। পরিদর্শক কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন এবং পরিদর্শন প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবেন।
তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে
ছয়টি ব্রোকারেজ হাউজের মার্জিন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেগেটিভ ইক্যুইটিসহ বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, প্রকৃত নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ, প্রভিশনস, প্রভিশনসের ঘাটতি, মার্জিন অ্যাকাউন্টে অনুমতিবিহীন লেনদেন শনাক্ত করা এবং এর কারণ চিহ্নিত করা, ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ কেন বাড়ছে তা চিহ্নিত করা, এজন্য কারা দায়ী তা চিহ্নিত করা।
ব্রোকারেজ হাউজগুলো কেন আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশনস বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে-সেটার কারণ চিহ্নিত করা। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজগুলোর এ সংক্রান্ত কি কি সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করতে তা চিহ্নিত করা।
২০১৬ সাল থেকে একাধিকবার সময় চেয়েও ব্রোকারেজ হাউজগুলো কেন আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশনস বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে-তা চিহ্নিত করা। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক সমস্যা থাকেলে সেটাও চিহ্নিত করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ব্রোকারেজ হাউজগুলো কার্যক্রমে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। তদন্ত প্রতিবেদনে কোন অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
ঢাকা/এনটি/এসবি