জামালপুরে ২৫০ জন শীতার্তের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জামালপুর শহরের মুকুন্দবাড়ি এলাকায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এই কম্বল বিতরণ করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

আজ বেলা ১১টার দিকে কম্বল বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়। সূর্যের তাপ সবে বাড়তে শুরু করেছে। এই সময় কম্বল নেন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় থেকে আসা মনোয়ারা বেগম (৬৬)। মুখভরা হাসি দিয়ে তিনি বলেন, ‘নদীর পাড়ে বাড়ি। আইতের (রাত) বেলা ঘরে বাতাস হু হু করে ঢোকে। তখন খুব জাড় (ঠান্ড) লাগে। আইতে খুব কষ্ট হয়। এই কম্বলে ভালো হইলো। আইতে এহন জাড় কম করবে।’

কম্বল পেয়ে ৪৮ বছর বয়সী বারুয়ামারি গ্রামের মর্জিনা বেগম বলেন, ‘হোডেলে (হোটেল) মেছিয়ারি করি। হারা দিন (সারা দিন) হোডেলে কাম করি। আইতে বাইত (বাড়ি) যাই। অহন (তখন) খুব জাড় লাগে। আমগোরে এলাকায় বেশি জাড়। খেতা (কাঁথা) দিয়ে জাড় কাটে না। রাইতে হাইরে জাড় করে! বাবাগো, তুমগোরে কম্বলডা পাইয়া খুব উপকার হইলো। কম্বলডা গায়ে দিয়ে আইতের বেলায় বাড়িত যাইতে পামু।’

শহরের হরিপুর এলাকা থেকে কম্বল নিতে আসেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো.

ফরিদ (৩৫)। কম্বল হাতে পেয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে ঘোড়ায় করে বের হই। দিন শেষে সন্ধ্যার দিকে ঘোড়া আবার বাড়িতে নিয়ে আসে। এভাবেই সপ্তাহে ছয় দিন ভিক্ষা করি। আমার স্ত্রীও প্রতিবন্ধী। খুব কষ্ট করে চলি। নদীর খুব কাছেই বাড়ি। রাতে খুব শীত করে। এই প্রথম কম্বল পাইলাম। কম্বলডা ভালা আছে। খেতা আর কম্বল মিলে রাতে গায়ে দিমু। এবার আর শীত করব না।’

শহরের বেলটিয়া এলাকা থেকে কম্বল নিতে আসেন আজিরন বেগম (৭০)। কম্বল হাতে পেয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে মানষের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে ঝিয়ের কাজ করি। দিন শেষে সন্ধ্যার দিকে আবার বাড়িতে আসি। আইতে (রাত) খুব জাড় করে। খেতা (কাথা) দিয়ে জাড় যায় না। কম্বলডা ভালা আছে। খেতা আর কম্বল মিলে রাতে গায়ে দিমু। এইবার আর শীত করব না।’

লাঠিতে ভর করে কম্বল নিতে আসেন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বাসিন্দা রহিমা বেগম (৬৫)। তিনি বলেন, ‘আমার পুলাপানরা (ছেলেমেয়ে) ঢাহাত (ঢাকা) থাহে। বুইড়া বয়সে কই যামু। রাইতে খুব শীত করে। দুইডা খেতা গায়ে দেই। শীত তো মানে না। বাপু, তুমরাই প্রথম কম্বল দিলা। কম্বলডা মুডা (মোটা) আছে। খেতা আর কম্বল মিলে রাতে গায়ে দিমু। এইবার আর শীত করব না। আমগোর মতো বুইড়া-বুড়িগোরে খুঁইজে খুঁইজে কম্বল দিলা। এডা খুব ভালো হইছে।’

আরও পড়ুনকুষ্টিয়ায় ১২০ জন অসহায় শীতার্ত পেলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল২০ ঘণ্টা আগে

কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন জামালপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা নাজমুল হাসান, সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান ও জান্নাতুল নাঈমা, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম খান, দপ্তর সম্পাদক জিনেদিন জিদান, প্রচার সম্পাদক ফাহিম মোনায়েম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাসেল মিয়া, অর্থ সম্পাদক লামিয়া আক্তার, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক চৌধুরী সামিতা তাবাসমুম, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক রাকিবুর রহমান ও ম্যাগাজিন সম্পাদক প্রত্যাশা পাল।
শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে ৭০০টি কম্বল দিয়েছে আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। এর মধ্যে ২৫০টি কম্বল আজ জামালপুরে বিতরণ করা হয়েছে।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল। হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০০০১১১৯৪। রাউটিং নম্বর: ০৮৫২৬২৫৩৯ ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।

আরও পড়ুন‘এলা তোমরা মোক নয়া কম্বল দিলেন, মোর কষ্ট দূর হইলো’০৮ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলের পর দুই আ.লীগ নেতার বাসায় হামলা

সিলেটে সকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করার পর বিকাল ও সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার এবং ছাত্রলীগের এক নেতারা বাসায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।

বুধবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিলেটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য  শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় বিকালে হামলা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায়ও হামলা চালানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নোয়াখালীতে বিনোদনকেন্দ্রে হামলা, পুলিশসহ আহত ৭

রাঙ্গুনিয়ায় আহত আ.লীগ নেতার মৃত্যু

হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।

সিলেট নগরীর শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর (নাদেল) বাসভবনের ‘ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের কার্যালয়ে’ হামলা চালায় একদল মানুষ। তারা মিছিল নিয়ে তার বাসায় ঢুকে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক তরুণ-যুবক গিয়ে এ হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালান। বাসাটিতে আনোয়ারুজ্জামানের পরিবারের কেউ থাকেন না। দুজন তত্ত্বাবধায়ক বাসার দেখাশোনা করেন।

মেজরটিলা এলাকায় অবস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তদের একটি দল। সন্ধ্যা সাতটায় রুহেলের বাসায় হামলার সময় তাঁর মা ও বোন বাসায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অবশ্য এসব হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বুধবার সকাল থেকে সিলেট নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাঠে নামে। তারা ভিডিওতে দেখা যাওয়া চার-পাঁচজন মিছিলকারীকে ধরে পুলিশে হাতে তুলে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। এতে ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।

এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাদেলের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, মিছিলকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ