পিলখানা হত্যাযজ্ঞের মামলার রায় বাতিল বা স্থগিত করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কারাবন্দি সব বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) জওয়ানকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন, হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত পরিকল্পনাকারী, ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কারা নির্যাতিত বিডিআর পরিবার ও বিডিআর কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে করা এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবিসহ চার দফা তুলে ধরা হয়েছে। 

অপর দাবিগুলো হচ্ছে, পূর্বের রায় বহাল রাখার ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে তদন্ত কমিশনের প্রজ্ঞাপন থেকে ‘ব্যতীত’ নামক শব্দটি ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠার ‘ঙ নম্বর’ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করতে হবে। শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে যে ১৮ হাজার ৫১৯ জন বিডিআর জওয়ানকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে, তাদের সম্পূর্ণ সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির পদমর্যাদা এবং কমিশনের অন্য সদস্যদের হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা দিতে হবে। এ ছাড়া কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের নিরাপত্তায় গাড়ি এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। একইসঙ্গে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় পূর্বের বিচারের রায় বহাল রাখার ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে এসে প্রকৃত মাস্টারমাইন্ড, রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দুটি সুশৃঙ্খল বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। একইসঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার অবৈধ ক্ষমতাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সুসংহত করার উদ্দেশ্য ছিল দেশি বিদেশি চক্রান্তের নীল নকশার সফল বাস্তবায়ন। কিন্তু হাসিনা এই হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে বিডিআর বিদ্রোহ বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে তদন্তের নামে তদন্ত হেফাজতে ৪৭ জন নিরীহ বিডিআর জওয়ানকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যে সমস্ত বিডিআর জওয়ান সত্য প্রকাশ করতে যাচ্ছিল তাদেরই তদন্তের নামে মেরে ফেলা হয় এবং তাদের হাত থেকে পিলখানার পেশ ইমামও রক্ষা পাননি।

বিডিআর পরিবারের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিচার কার্যক্রমের নাটক সুচারুভাবে সম্পন্ন করার পুরস্কার হিসেবে পিপি অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে টেকনোক্র্যাট কোটায় আইনমন্ত্রী আর সরকারি পিপি মোশারফ হোসেন কাজলকে দুদকের পিপি, দায়রা জজ মোহাম্মদ জহিরুল হককে দুদকের কমিশনার এবং দায়রা জজ ড.

আক্তারুজ্জামানকে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

উত্তপ্ত ১০ মিনিটেই ভেস্তে যায় ট্রাম্প-জেলেনস্কি আলোচনা

উত্তপ্ত ১০ মিনিটের বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে ভেস্তে গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও  ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির বৈঠকের আলোচনা। হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠকটি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় আর বিশৃঙ্খলার মধ্যে শেষ হয়েছে। 

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে বৈঠকে সংবাদ মাধ্যমের সামনেই বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এর জের ধরে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে চলে যেতে বলা হয় এবং পূর্ব নির্ধারিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়। ট্রাম্প কথা কাটাকাটির সময় জেলেনস্কিকে কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য বলেন এবং একইসঙ্গে তিনি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন’ বলে অভিযোগ করেন। তবে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কোনো আপস করবেন না।

বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেছেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন জেলেনস্কি’। জবাবে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কোনো আপস করবেন না। শুধু ট্রাম্প নয়, জেলেনস্কির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও। ওভাল অফিসে বসে বিতণ্ডায় জড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জেলেনস্কি অসম্মান করেছেন মন্তব্য করে ভ্যান্স বলেন, ‘আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না।’ মাথা নেড়ে ভ্যান্সের কথায় সায় দেন ট্রাম্প। এ সময় গলার স্বর উঁচু করে জেলেনস্কি উত্তর দেন, ‘বহুবার বলেছি, আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ।’

এ রকম উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ১০ মিনিটেই ভেঙে যায় ট্রাম্প-জেলেনস্কি আলোচনা। এর জের ধরে জেলেনস্কি হোয়াইট হাউস থেকে চলে যান। পরে পূর্ব নির্ধারিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়। জেলেনস্কির এবারের ওয়াশিংটন সফরে ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওভাল অফিসের বৈঠকটি বাকযুদ্ধে পরিণত হয়, যার একদিকে ছিলেন মি. জেলেনস্কি আর অন্যদিকে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।

ওই বৈঠকে সংবাদ মাধ্যমের সামনেই বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ভলোদিমির জেলেনস্কি। ডোনাল্ড ট্রাম্প কথা কাটাকাটির সময় জেলেনস্কিকে কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য বলেন এবং একইসঙ্গে তিনি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন’ বলে অভিযোগ করেন। তবে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কোনো আপস করবেন না।’ 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের আশা ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা করে হোয়াইট হাউস ছাড়বেন। এর মধ্যে খনিজ চুক্তিতে সই করবেন যা তার দেশের ভবিষ্যতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অংশীদারিত্ব দেবে এবং তিনি তার দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের জন্য আরও বেশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তাকে চাপ দেওয়ার পর বিশ্ব গণমাধ্যমের সামনেই নজিরবিহীন এক পরিস্থিতিতে পড়লেন জেলেনস্কি। ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার পর শক্তিশালী সহযোগীর চাপ সত্ত্বেও পিছিয়ে গেলেন জেলেনস্কি। ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলো যে বৈঠকে তিনি ‘অসম্মানজনক’ আচরণ করেছেন।

এই ঘটনার পর ট্রাম্প ও তার যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আগেই তাকে হোয়াইট হাউস ছাড়তে বলা হয়। শেষ পর্যন্ত খনিজ চুক্তিও আর হলো না।

‘যখন শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, তখন ফিরে আসবেন,’ ট্রাম্প লিখেছেন তার সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথে। জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র ও ওভাল অফিসকে ‘অপমান করেছেন’ বলেও লিখেছেন ট্রাম্প।

অন্যদিকে জেলেনস্কিও এই ঘটনা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটি প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান সেখানে। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার তিনি বলেন, প্রকাশ্যে যে বাদানুবাদ হলো সেটা ঠিক ছিল না, তবে ট্রাম্প ও তার সম্পর্কের পুনরুদ্ধার সম্ভব। তিনি বলেন, ‘কারণ এই সম্পর্ক শুধু দু’জন প্রেসিডেন্টের মধ্যকার সম্পর্কের চেয়েও বেশি কিছু। আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ও আছে এখানে।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অতিরিক্ত ও সহকারী পুলিশ সুপার পদের ১২৪ কর্মকর্তাকে বদলি
  • উত্তপ্ত ১০ মিনিটেই ভেস্তে যায় ট্রাম্প-জেলেনস্কি আলোচনা