প্রেগনেন্সি-পূর্ববর্তী যত্ন হলো গর্ভধারণের আগে নারী এবং তাঁর স্বামীর পরিবারের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক প্রস্তুতি। এমন যত্নের লক্ষ্য, গর্ভধারণের জন্য শরীরকে সুস্থ ও সঠিকভাবে প্রস্তুত করা; যাতে সন্তান সুস্থ অবস্থায় জন্ম নিতে পারে এবং মা-ও সুস্থ থাকেন।
প্রেগনেন্সি-পূর্ববর্তী যত্নের গুরুত্ব
প্রেগনেন্সি-পূর্ববর্তী যত্নের মাধ্যমে গর্ভধারণের আগে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে, তা কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, পুষ্টিকর খাবার ও সঠিক ওষুধ গ্রহণ গর্ভাবস্থার জন্য ভালো শারীরিক পরিস্থিতি তৈরি করতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা
প্রেগনেন্সির আগে নারীর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
গাইনোকোলজিক্যাল পরীক্ষা: মাসিক স্বাস্থ্য, গর্ভধারণের ইতিহাস এবং কোনো জটিলতা রয়েছে কি না, তা যাচাই করা।
জেনেটিক কাউন্সেলিং: কোনো জেনেটিক অসুখের ঝুঁকি বা পরিবারের ইতিহাস পরীক্ষা করা, যেমন থ্যালাসেমিয়া।
ব্লাড টেস্ট: রক্তের গ্রুপ, রক্তে শর্করা এবং ইনফেকশনের (যেমন: হেপাটাইটিস) উপস্থিতি পরীক্ষা করা।
ভিটামিন ও মিনারেল চেক: বিশেষ করে ভিটামিন ডি এবং আয়রন লেভেল পরীক্ষা করা।
থাইরয়েড পরীক্ষা: থাইরয়েডের অবস্থাও খতিয়ে দেখা জরুরি।
রক্তচাপ পরীক্ষা।
পুষ্টি ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস
ফলিক অ্যাসিড: গর্ভধারণের আগে ফলিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। নিউরোলজিক্যাল সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এটি। সাপ্লিমেন্টও শুরু করা যায়।
প্রোটিন ও আয়রন: মাংস, ডাল, শাকসবজি ও বাদাম থেকে প্রোটিন এবং আয়রন নেওয়া উচিত।
ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁত শক্ত করার জন্য ক্যালসিয়াম গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা গর্ভধারণের আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রেগনেন্সির আগে শরীরের মাংসপেশি ও হাড় শক্ত করতে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।
মানসিক স্বাস্থ্য
গর্ভধারণের আগে মানসিক স্বাস্থ্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই যা প্রয়োজন:
যোগব্যায়াম, মেডিটেশন ও সঠিক বিশ্রাম।
স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের সহায়তা।
জীবনযাপন-সম্পর্কিত অভ্যাস
ধূমপান ও মদ্যপান বাদ দেওয়া।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন ডি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোবায়োটিক গ্রহণ।
কিছু টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে মা ও শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
যথেষ্ট পরিমাণ ঘুম শরীর পুনরুদ্ধারে ও গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়ক।
বন্ধু, পরিবার ও সমবয়সী মায়েদের সঙ্গে আলোচনা এবং তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ।
মনে রাখবেন, প্রেগনেন্সি-পূর্ববর্তী যত্নের মাধ্যমে গর্ভধারণের আগে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক প্রস্তুতির পাশাপাশি সুস্থ শিশুর জন্মের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
ডা.
শারমিন আব্বাসি, গাইনোকোলজিস্ট ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৪ বাসিন্দা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে ওই যুবকদের গুলিতে স্থানীয় চার বাসিন্দা আহত হন। সোমবার রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকদের পরিচয় তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ। গুলিবিদ্দ স্থানীয় চার বাসিন্দা হলেন ওবায়দুল হক (২২), মামুনুর রশিদ (৪৫), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও আব্বাস উদ্দিন (৩৮)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় মসজিদে ডাকাত পড়েছে এমন প্রচারের পর লোকজন জড়ো হয়ে অটোরিকশায় করে আসা দুই যুবককে আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যুবক নিহত হন।
এক যুবকের লাশের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই যুবককে আটকের আগে গুলির ঘটনায় আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এখনো ওই দুই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।