বহিষ্কৃত সেই যুবদল নেতাসহ ৬ জনের নামে মামলা
Published: 14th, January 2025 GMT
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে বিদ্যালয় থেকে ধরে এনে শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। সোমবার সকালে ভুক্তভোগী শিক্ষকের স্ত্রী সিফাত-ই মনোয়ারা বাদী হয়ে অভিযুক্ত যুবদল নেতা রাশেদুল ইসলাম রনিকে প্রধান আসামি করে ছয় জনের নামে কালিয়াকৈর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ। তিনি জানান, অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে দ্রুতই অভিযান চালানো হবে।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সরকারি হাইস্কুলের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক বশির উদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনায় রোবরাব রাতেই যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রনিকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রশাসনকে চাপে রাখা
গত ৫ আগস্টের পর জেলা যুবদলের এই নেতা নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অফিস ঘেরাও করে অনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা চালায়। উপজেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা তাদের কথামত কাজ না করলে শিক্ষার্থী নিয়ে ঘেরাও করার হুমকি দেওয়া হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, যুবদল নেতা রনিসহ রাজিব আহম্মেদ, সজিব হোসেন, আতিক হোসেন, রনি আহম্মেদ, পিয়াল হাসান, রাফি আহমেদসহ ৩-৪ জন যুবদল ও ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থেকে নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এসবের প্রতিবাদ করলে তারা সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে তার অফিস বা প্রতিষ্ঠানে হামলা ঘেরাও কর্মসূচির হুমকি দিত বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, রাশেদুল ইসলাম রনির নেতৃত্বে ৫-৬ জন যুবক নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে নানা কাজের চাপ দিত। তাদের কথামত কাজ না করলে নানা ভাষায় চাপ সৃষ্টি করতো।
আরেক যুবদল নেতার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি
যুবদল নেতা রাশেদুল ইসলাম রনির নির্দেশে গত ৩ ডিসেম্বর চন্দ্রা এলাকায় নর্দান ও নর্ভান ফ্যাক্টারির সামনে আটাবহ ইউপি যুবদল সদস্য আল মামুনকে আটক করে ছাত্রদল নেতা রিপন আহমেদ ও রাকিব আহমেদসহ ৭-৮ জন যুবক। ওই সময় ওই নেতাকর্মীরা মামুনের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরে তাকে খুন জখমের হুমকি দিয়ে চলে যায় হামলাকারীরা। ওই ঘটনায় যুবদল নেতা আল মামুন বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কমিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে মামুন জানান।
বহিষ্কৃত যুবদল নেতার সংবাদ সম্মেলন
চাঁদা না পেয়ে বিদ্যালয় থেকে ধরে এনে শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় বহিস্কৃত যুবদল নেতা রাশেদুল ইসলাম রনি সোমবার দুপুরে কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি একটি লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন। সেখানে তাদের হামলায় আহত বশির উদ্দিনকে নিয়ে বিষধাগার করে হামলার ঘটনায় এ নেতা জড়িত নয় বলে দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহসভাপতি রনি সরকার, সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, যুবদল কর্মী শরীফ আল মামুন। অপর দিকে বঙ্গবন্ধু সরকারি হাইস্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী সালমান ফারসি সৈকত, রায়হান হোসেন।
আহত শিক্ষককের পরিবারে আতংক
চাঁদা না পেয়ে বিদ্যালয় থেকে ধরে এনে শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় শিক্ষক বশির উদ্দিনের পরিবারের সদস্য ও আহত সাবেক শিক্ষার্থী রেজভি আহম্মেদ রাজিবের পরিবারের সদস্যের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় থানার একটি অভিযোগ দেওয়া হলেও পুলিশ গত ছব্বিশ ঘণ্টায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার না করায় আহতদের পরিবারের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতাসহ আতংক বিরাজ করছে।
তাদের পরিবারের অভিযোগ, সোমবার দুপুরে থানার পাশে কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবে প্রধান অভিযুক্ত বহিস্কৃত যুবদল নেতা রাশেদুল ইসলাম রনি এ শিক্ষককে নিয়ে মিথ্যাচার করে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় আহতদের পরিবার ও বিভিন্ন মাধ্যম থানার ওসিকে বিষয়টি জানিয়ে গ্রেপ্তারের দাবি তুললেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। আহতদের পরিবারের দাবি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি করেন।
কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ বলেন, শিক্ষকের স্ত্রীর দেওয়া অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। দ্রুতই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। তবে প্রেসক্লাবে অভিযুক্ত রনির সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি জানতে পারলেও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনকে ‘বলিউডি রোমান্টিক কমেডি’ বলল প্রেস উইং
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রতিবেদনের বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই; এটি শুধুই একটি বলিউডি রোমান্টিক কমেডি।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ফ্যাক্টস ফেসবুকে তাদের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে লিখেছে- ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলিউডের রোমান্টিক কমেডির চেয়েও বাস্তবতার সাথে কম মিল রয়েছে।’
প্রেস উইং ফ্যাক্টস আরও বলেছে, ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ কৌশল ব্যবহার করছে, যা দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রক্সি হিসেবে কাজ করা শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেওয়া এবং বাংলাদেশের জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে অসম্মান করার উদ্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের যে জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলো গত জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে, তাকে টার্গেট করা হচ্ছে।
হাইব্রিড যুদ্ধের অংশ হিসেবে তথ্য পরিচালনা বা ‘অপতথ্য’ ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে লক্ষ্যবস্তুকে অভ্যন্তরীণ এবং তার স্বাভাবিক বন্ধু ও মিত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়।
বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা সাধারণত একেবারে মনগড়া একটি গল্প দিয়ে শুরু হয়, যার কোনো বাস্তব ভিত্তি বা প্রমাণ থাকে না, বরং নামহীন ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বানানো হয় এবং তা বন্ধুত্বপূর্ণ বা নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
প্রেস উইং ফ্যাক্টস উল্লেখ করে-‘যদি গল্পটি যথেষ্ট চটকদার হয়, তাহলে অন্যান্য সংবাদমাধ্যম এটি তুলে নেবে এবং প্রচারের ফলে এটি বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘একপর্যায়ে, যারা বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান কিন্তু বিশদ বিশ্লেষণের সময় পান না, তারাও এই গল্পটি সত্য বলে বিশ্বাস করতে পারেন, যা মূলত একজন প্রোপাগান্ডাবিদের কল্পনাপ্রসূত ধারণা ছাড়া আর কিছুই না।’
ফ্যাক্টস আরও উল্লেখ করেছে, মিথ্যা প্রচারণা ও অপতথ্যে বিশ্বাস করে মানুষ যখন যার বিরুদ্ধে প্রচার হচ্ছে, তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে, তখন তা পুরোপুরি সফল হয়।
এই ক্ষেত্রে, প্রতিপক্ষ হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের নিজস্ব সার্বভৌম রাষ্ট্র পরিচালনার আকাঙ্ক্ষা। আর স্বেচ্ছায় এই মিথ্যা প্রচারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই; এটি শুধুই একটি বলিউডি রোমান্টিক কমেডি।
ফ্যাক্টস আনন্দবাজারের উদ্দেশে বলেছে, ‘আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি প্রকৃত সাংবাদিকতা করবেন, যেখানে সত্য ঘটনা অনুসন্ধান করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, নাকি মিথ্যা প্রচারণার অংশ হিসেবে মিথ্যা গল্প ছড়িয়ে একটি বন্ধুপ্রতীম দেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবেন?’