Prothomalo:
2025-03-04@04:29:16 GMT

প্রজনন পালকে মেটে জিরিয়া

Published: 14th, January 2025 GMT

নতুন একটি পাখির সন্ধানে ‘বার্ডিংবিডি ট্যুরস’-এর তত্ত্বাবধানে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাতে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হলাম। সকালে কক্সবাজার জেটিঘাটে পৌঁছেই নূরুল আফসারের স্পিডবোট সোনাদিয়ার দিকে ছোটালাম। চলার পথে প্রথমেই পাখিগুলোকে মহেশখালী চ্যানেলে খুঁজলাম। কিন্তু পেলাম না। এরপর সৈকত পাখির আসল আস্তানা কালাদিয়া চরের দিকে গেলাম।

সকাল ১০টায় যখন ওখানে পৌঁছালাম, তখন ভাটা শুরু হয়ে গেছে। জোয়ারের পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নোনাজলের ভেতর থেকে উঁকি মারছে টুকরা টুকরা বালুচর। চরের কাছাকাছি এসে চার-পাঁচ শ সৈকত পাখিকে সদ্য জেগে ওঠা বালুচরে খাদ্যের সন্ধান করতে দেখলাম। স্পিডবোট থেকে হাঁটুপানিতে নেমে ধীরে ধীরে ওদের দিকে এগোতে থাকলাম। খানিকটা এগোচ্ছি আর থেমে থেমে ক্লিক করছি। পাখি ও আমাদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্বসীমা অতিক্রম করামাত্রই ওরা উড়ে আকাশে চক্কর মেরে পাশের ক্ষুদ্র চরে গিয়ে বসল।

এভাবে ঘণ্টাখানেক পাখিগুলোর পেছনে ঘুরে ১০ প্রজাতির ছবি তুললাম। তাদের মধ্যে বেশ কিছু জিরিয়াকে অন্য রকম লাগল। হঠাৎ দেখায় নতুন প্রজাতি বলে ভুল হলো। ওদের মুখমণ্ডল হয়ে দেহের নিচটা, বিশেষত পেটের অংশ, কুচকুচে কালো। ডজনখানেক বড় আকারের জিরিয়ার প্রায় অর্ধেকেই এ রকম। বাকিগুলো ধূসর, যাদের দেখেই বুঝতে পারলাম কালচে পাখিগুলো এখনো প্রজনন পালকে রয়েছে। সচরাচর আমরা সোনাদিয়ায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে আসি। তখন পাখিগুলোর প্রজনন পালক ফিকে হয়ে যায়। এবার যেহেতু সেপ্টেম্বরে এসেছি, তাই সদ্য আসা পাখির অনেকগুলোকেই প্রজনন পালকে দেখতে পাচ্ছি। দিন যত এগোবে, ততই ওদের রং ফ্যাকাশে হতে থাকবে।

 কালাদিয়া চরে প্রজনন পালকে দেখা পাখিগুলো এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান শীতের পরিযায়ী পাখি মেটে বা বড় জিরিয়া–বাটান। পশ্চিমবঙ্গে মোতি বাটান নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম গ্রে–ব্ল্যাক-বেলিড প্লোভার। চ্যারাড্রিইডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Pluvialis squatarola। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও ভুটান বাদে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ওদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দৈর্ঘ্য ২৭ থেকে ৩১ সেন্টিমিটার। ওজন ১৬৫ থেকে ৩৯৫ গ্রাম। প্রজননকালে দেহের ওপরের পালক ধূসর বা ছাইবর্ণ হয়; তার ওপর থাকে ছোট ছোট মুক্তোর দানার মতো সাদা ফোঁটা। মুখমণ্ডল, গলা, বুক ও পেট হয় কালো। কপালের ওপর থেকে গলা বেয়ে একটি সাদা পট্টি ডানার গোড়ায় এসে শেষ হয়। লেজতল সাদা ও লেজের ডগায় থাকে ধূসর বন্ধনী। ওড়ার সময় ডানার নিচের বড় কালো ছোপ ও ‘ভি’ আকারের সাদা দাগ চোখে পড়ে। চোখের রং কালো। চঞ্চু, পা ও পায়ের পাতা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রজননকাল বাদে বাকি সময় দেহতলের এই কালো রং থাকে না।

শীতকালে চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের উপকূল বরাবর এবং সিলেট ও রাজশাহী বিভাগের জলাভূমি ও নদীতে ওদের দেখা মেলে। দিবাচর ও জলচর পাখিগুলো ছোট থেকে বড় একক বা অন্য সৈকত পাখির সঙ্গে মিশ্র দলে বিচরণ করে। উপকূলের সৈকত বা নদী ও জলাশয়ের তীরে অথবা জোয়ার-ভাটার ডুবোচরে নরম কাদায় চঞ্চু ঢুকিয়ে খুদে শামুক, কাঁকড়া, পোকামাকড়, চিংড়ি ইত্যাদি খুঁজে খায়। কখনো কখনো বীজ ও গাছের কাণ্ডও খেতে পারে। সচরাচর ওড়ার সময় ‘পিইই-উ-ইই—-’ শব্দে ডাকে।

মে থেকে জুনের মাঝামাঝি প্রজননকাল। এ সময় উত্তর মেরুর মরুভূমি ও তুন্দ্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ ঢাকা মাটিতে সামান্য গর্ত করে নুড়ি পাথর, শৈবাল ইত্যাদি দিয়ে স্ত্রী পাখি বাসা বানায় ও তাতে চারটি শক্ত খোসাযুক্ত ডিম পাড়ে। ডিমের রং কালো বা গাঢ় বেগুনি-ধূসর দাগ–ছোপসহ গোলাপি, সবুজ বা বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে ডিমে তা দিলেও এ ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকাই বেশি। ডিম ফোটে ২৬ থেকে ২৭ দিনে। আর্দ্র এলাকায় স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ছানাদের লালন–পালন করে। ছানারা প্রায় ২৩ দিন বয়সে উড়তে শেখে। আয়ুষ্কাল প্রায় ছয় বছর।   

আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্ত্রী ব্যাঙ মৃত্যুর অভিনয় করে কেন

বলা হয় স্ত্রী ব্যাঙের নাক অনেক উঁচু। সব পুরুষ সঙ্গীকে তাদের পছন্দ না। কিন্তু পুরুষ ব্যাঙ কি আর তাদের কথা শোনে? জোর করে প্রেম আদায় করার সময় স্ত্রী ব্যাঙ মূর্ছা যায়, মৃত্যুর ভান করে। জার্মানির বার্লিনে অবস্থিত জাদুঘর ফার ন্যাচারকুন্ডের গবেষকরা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলেন, স্ত্রী ব্যাঙ প্রায়ই অবাঞ্ছিত প্রেমিকদের এড়াতে মৃত্যুর ভান করে। অসাধারণ এক অভিনয়ের মাধ্যমে তারা নিজের মৃত্যুর ভান করে অবাঞ্ছিত প্রেমিকদের এড়িয়ে চলে।

সাধারণভাবে কিছু ব্যাঙ প্রজাতির প্রজননকাল কম। প্রজননকাল কম বলে অনেক বেশি সঙ্গমের প্রয়োজন হয় তাদের। সাধারণত বসন্তকালে পুরুষ ব্যাঙ ও স্ত্রী ব্যাঙের মধ্যে সঙ্গম বেড়ে যায়। তবে কিছু স্ত্রী ব্যাঙ এ ক্ষেত্রে দূরে থাকতে চায়। তারা প্রতিবছর প্রজননে অংশ নিতে আগ্রহ দেখায় না। আর প্রকৃতিতে পুরুষ ব্যাঙের সংখ্যা স্ত্রী ব্যাঙের চেয়ে বেশি বলে প্রবল প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। অনেক পুরুষ ব্যাঙ একটি স্ত্রী ব্যাঙের জন্য লড়াই করে। পুরুষ ব্যাঙের জোরপূর্বক মনোযোগ আকর্ষণের ফলে স্ত্রী ব্যাঙ প্রায়ই মারা যাওয়ার ভান করে। আগে মনে করা হতো, অবাঞ্ছিত আক্রমণের কারণে স্ত্রী ব্যাঙ অসহায় হয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে মৃত্যুর ভান করে তারা।

আক্রমণাত্মক পুরুষ ব্যাঙের সংস্পর্শে আসার পরে স্ত্রী ব্যাঙ মৃত্যুর ভান করে। একে টনিক ইমমোবিলিটি বলে। এ অবস্থায় স্ত্রী ব্যাঙ তাদের হাত ও পা শক্ত করে সটান হয়ে শরীর স্থির করে ফেলে। পুরুষ ব্যাঙ তাদের ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত স্ত্রী ব্যাঙ স্থির থাকে। গবেষকেরা মনে করছেন, ব্যাঙের রক্তে কর্টিকোস্টেরনের উপস্থিতি এ সময় বেড়ে যায়। অবাঞ্ছিত পুরুষ ব্যাঙের সঙ্গে লড়াই করতে আগ্রহ থাকে না স্ত্রী ব্যাঙের। তাই স্থির হয়ে মৃত্যুর ভান করে তারা। গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৪৬ শতাংশ স্ত্রী ব্যাঙ এই কৌশলে পালিয়ে যায়।

সূত্র: এ-জেড অ্যানিমেলস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে রং বদলাতে পারে যে শিয়াল
  • স্ত্রী ব্যাঙ মৃত্যুর অভিনয় করে কেন