Prothomalo:
2025-01-31@12:01:38 GMT

প্রজনন পালকে মেটে জিরিয়া

Published: 14th, January 2025 GMT

নতুন একটি পাখির সন্ধানে ‘বার্ডিংবিডি ট্যুরস’-এর তত্ত্বাবধানে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাতে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হলাম। সকালে কক্সবাজার জেটিঘাটে পৌঁছেই নূরুল আফসারের স্পিডবোট সোনাদিয়ার দিকে ছোটালাম। চলার পথে প্রথমেই পাখিগুলোকে মহেশখালী চ্যানেলে খুঁজলাম। কিন্তু পেলাম না। এরপর সৈকত পাখির আসল আস্তানা কালাদিয়া চরের দিকে গেলাম।

সকাল ১০টায় যখন ওখানে পৌঁছালাম, তখন ভাটা শুরু হয়ে গেছে। জোয়ারের পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নোনাজলের ভেতর থেকে উঁকি মারছে টুকরা টুকরা বালুচর। চরের কাছাকাছি এসে চার-পাঁচ শ সৈকত পাখিকে সদ্য জেগে ওঠা বালুচরে খাদ্যের সন্ধান করতে দেখলাম। স্পিডবোট থেকে হাঁটুপানিতে নেমে ধীরে ধীরে ওদের দিকে এগোতে থাকলাম। খানিকটা এগোচ্ছি আর থেমে থেমে ক্লিক করছি। পাখি ও আমাদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্বসীমা অতিক্রম করামাত্রই ওরা উড়ে আকাশে চক্কর মেরে পাশের ক্ষুদ্র চরে গিয়ে বসল।

এভাবে ঘণ্টাখানেক পাখিগুলোর পেছনে ঘুরে ১০ প্রজাতির ছবি তুললাম। তাদের মধ্যে বেশ কিছু জিরিয়াকে অন্য রকম লাগল। হঠাৎ দেখায় নতুন প্রজাতি বলে ভুল হলো। ওদের মুখমণ্ডল হয়ে দেহের নিচটা, বিশেষত পেটের অংশ, কুচকুচে কালো। ডজনখানেক বড় আকারের জিরিয়ার প্রায় অর্ধেকেই এ রকম। বাকিগুলো ধূসর, যাদের দেখেই বুঝতে পারলাম কালচে পাখিগুলো এখনো প্রজনন পালকে রয়েছে। সচরাচর আমরা সোনাদিয়ায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে আসি। তখন পাখিগুলোর প্রজনন পালক ফিকে হয়ে যায়। এবার যেহেতু সেপ্টেম্বরে এসেছি, তাই সদ্য আসা পাখির অনেকগুলোকেই প্রজনন পালকে দেখতে পাচ্ছি। দিন যত এগোবে, ততই ওদের রং ফ্যাকাশে হতে থাকবে।

 কালাদিয়া চরে প্রজনন পালকে দেখা পাখিগুলো এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান শীতের পরিযায়ী পাখি মেটে বা বড় জিরিয়া–বাটান। পশ্চিমবঙ্গে মোতি বাটান নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম গ্রে–ব্ল্যাক-বেলিড প্লোভার। চ্যারাড্রিইডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Pluvialis squatarola। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও ভুটান বাদে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ওদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দৈর্ঘ্য ২৭ থেকে ৩১ সেন্টিমিটার। ওজন ১৬৫ থেকে ৩৯৫ গ্রাম। প্রজননকালে দেহের ওপরের পালক ধূসর বা ছাইবর্ণ হয়; তার ওপর থাকে ছোট ছোট মুক্তোর দানার মতো সাদা ফোঁটা। মুখমণ্ডল, গলা, বুক ও পেট হয় কালো। কপালের ওপর থেকে গলা বেয়ে একটি সাদা পট্টি ডানার গোড়ায় এসে শেষ হয়। লেজতল সাদা ও লেজের ডগায় থাকে ধূসর বন্ধনী। ওড়ার সময় ডানার নিচের বড় কালো ছোপ ও ‘ভি’ আকারের সাদা দাগ চোখে পড়ে। চোখের রং কালো। চঞ্চু, পা ও পায়ের পাতা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রজননকাল বাদে বাকি সময় দেহতলের এই কালো রং থাকে না।

শীতকালে চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের উপকূল বরাবর এবং সিলেট ও রাজশাহী বিভাগের জলাভূমি ও নদীতে ওদের দেখা মেলে। দিবাচর ও জলচর পাখিগুলো ছোট থেকে বড় একক বা অন্য সৈকত পাখির সঙ্গে মিশ্র দলে বিচরণ করে। উপকূলের সৈকত বা নদী ও জলাশয়ের তীরে অথবা জোয়ার-ভাটার ডুবোচরে নরম কাদায় চঞ্চু ঢুকিয়ে খুদে শামুক, কাঁকড়া, পোকামাকড়, চিংড়ি ইত্যাদি খুঁজে খায়। কখনো কখনো বীজ ও গাছের কাণ্ডও খেতে পারে। সচরাচর ওড়ার সময় ‘পিইই-উ-ইই—-’ শব্দে ডাকে।

মে থেকে জুনের মাঝামাঝি প্রজননকাল। এ সময় উত্তর মেরুর মরুভূমি ও তুন্দ্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ ঢাকা মাটিতে সামান্য গর্ত করে নুড়ি পাথর, শৈবাল ইত্যাদি দিয়ে স্ত্রী পাখি বাসা বানায় ও তাতে চারটি শক্ত খোসাযুক্ত ডিম পাড়ে। ডিমের রং কালো বা গাঢ় বেগুনি-ধূসর দাগ–ছোপসহ গোলাপি, সবুজ বা বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে ডিমে তা দিলেও এ ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকাই বেশি। ডিম ফোটে ২৬ থেকে ২৭ দিনে। আর্দ্র এলাকায় স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ছানাদের লালন–পালন করে। ছানারা প্রায় ২৩ দিন বয়সে উড়তে শেখে। আয়ুষ্কাল প্রায় ছয় বছর।   

আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সামারিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ

চলতি বছর সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে সমীক্ষায়।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এরপরে পরে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫তম অবস্থানে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে উত্তর কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে মোট সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার ১০০ সেনা। 

অন্যদিকে, মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। মিয়ানমারের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫ হাজার সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬ হাজার সেনা। 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ