দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী মালদ্বীপের পাসপোর্ট
Published: 14th, January 2025 GMT
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছে মালদ্বীপের পাসপোর্ট (৫৩তম)। মালদ্বীপের পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ৯৪টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। এর পরেই আছে ভারত (৮৫তম), ভুটান (৯০তম) ও শ্রীলঙ্কা (৯৬তম)।
গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত সূচক থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ১৯৯টি দেশের পাসপোর্ট ও ২২৭টি ভ্রমণ গন্তব্য বিবেচনায় নিয়ে এ সূচক তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
হ্যানলির এই সূচকে চলতি বছরে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচকে শীর্ষে অবস্থান দখল করেছে সিঙ্গাপুর। দেশটির নাগরিকরা ভিসা ছাড়া কিংবা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় বিশ্বের ১৯৫টি গন্তব্যে ভ্রমণ করতে পারেন।
সূচকে দ্বিতীয় স্থানে আছে জাপান। দেশটির নাগরিকরা ১৯৩টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় ভ্রমণ করতে পারেন।
তৃতীয় স্থানে যৌথভাবে থাকা ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও স্পেনের নাগরিকরা ১৯২টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় প্রবেশ করতে পারেন।
যৌথভাবে চতুর্থ স্থানে রয়েছে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও সুইডেন। এসব দেশের নাগরিকরা ১৯১টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় ভ্রমণ করতে পারেন।
যৌথভাবে পঞ্চম স্থানে থাকা বেলজিয়াম, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারীরা ১৯০টি গন্তব্যে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় যেতে পারেন।
হ্যানলির এই পাসপোর্ট সূচকে একেবারে তলানিতে আছে আফগানিস্তান (১০৬তম)। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটির পাসপোর্টধারীরা মাত্র ২৬টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন।
কোনো দেশের পাসপোর্ট দিয়ে কয়টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় প্রবেশ করা যায়, এ তথ্যের ভিত্তিতে শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচক তৈরি করে দ্য হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স। ১৯৯ দেশের সূচকে কিছু কিছু দেশ যৌথ অবস্থান পাওয়ায় এ বছর হেনলি মোট ১০৬টি অবস্থান নির্ধারণ করেছে।
গত ১৯ বছর ধরে বিশ্বের কোন দেশের পাসপোর্ট কতটা শক্তিশালী, তা নিয়ে প্রত্যেক বছর র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি তিন মাস পর এ সূচক প্রকাশ করা হয়।
২০২৫ সালের সূচকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের সঙ্গে যৌথভাবে ১০০তম অবস্থানে আছে। চলতি বছরের সংস্করণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের ২২৭টি গন্তব্যের মধ্যে বর্তমানে ৪০টিতে ভিসা ছাড়া কিংবা অন- অ্যারাইভাল ভিসায় ভ্রমণ করা যায়।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের ১০ দেশ
১.
২. জাপান
৩. ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও স্পেন
৪. অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও সুইডেন
৫. বেলজিয়াম, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য
৬. অস্ট্রেলিয়া ও গ্রিস
৭. কানাডা, মাল্টা ও পোল্যান্ড
৮. চেক প্রজাতন্ত্র ও হাঙ্গেরি
৯. যুক্তরাষ্ট্র ও এস্তোনিয়া
১০. লাটভিয়া, লিথুনিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও স্লোভেনিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল পাসপোর্টের ১০ দেশ
১. আফগানিস্তান
২. সিরিয়া
৩. ইরাক
৪. ইয়েমেন
৫. পাকিস্তান
৬. সোমালিয়া
৭. নেপাল
৮. ফিলিস্তিন, লিবিয়া ও বাংলাদেশ
৯. উত্তর কোরিয়া
১০. ইরিত্রিয়া
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষক আত্মহত্যা করলে মানুষের মুখে খাবার তুইলা দিব কারা’
‘আমার আব্বা এনজিও এবং সারের দোকান থেকে ঋণ নিয়া পেঁয়াজ চাষ করছিল। দুই বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ হইছে দেড় লাখ টাকা। কিন্তু বিক্রি করে পাইছে মাত্র ৫৮ হাজার টাকা। ঋণ শোধের চিন্তায় আব্বা পেঁয়াজ ক্ষেতেই বিষপানে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলো। আব্বা পেঁয়াজ বিক্রি করছিল ৬০০ টাকা মণ। অথচ এহন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি অয় ২ হাজার টাকায়। কারণ এহন কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ নাই। আমার আব্বার মতো কৃষকরা যদি এভাবে ঠইকা আত্মহত্যা করে, তাইলে দেশের মানুষের মুখে খাবার তুইলা দিব কারা?’
ঘাম ঝরানো কষ্টের ফসলের দাম না পেয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরে কৃষক সাইফুল শেখ অত্মহত্যা করেন। তাঁর করুণ পরিণতির কথা কাঁদতে কাঁদতে তুলে ধরলেন মেয়ে রোজেফা খাতুন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ক্ষুদ্র কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মূল্য বঞ্চনা’ তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোজেফা কৃষক বাঁচানোর আকুতি জানালেন করুণ স্বরে।
খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি) আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে মেহেরপুরের প্রান্তিক কৃষক সাইফুল শেখের আত্মহত্যার ঘটনা সরেজমিন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বক্তারা বলেন, কৃষিপ্রধান দেশে কৃষকের আত্মহত্যা শুধু ট্র্যাজেডি নয়, লজ্জাজনক। কাঠামোগত শোষণের শিকার হয়ে প্রান্তিক কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ শোষণ থেকে কৃষককে বাঁচাতে কৃষিমূল্য কমিশন গঠন, ন্যায্য বাজার ব্যবস্থাপনা তৈরি, ঋণ ব্যবস্থাপনা সহজীকরণ ও আমদানি নীতির সংস্কার প্রয়োজন।
খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের সভাপতি এম জয়নুল আবেদীন বলেন, কৃষক যখন তাঁর ফসল বাজারে তোলেন, তখনই দেখা যায় সে কৃষিপণ্যটি আমদানি করা হচ্ছে। ফলে কৃষক তাঁর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। কৃষককে মেরে ফেলে সস্তায় কৃষিপণ্য কেনার অধিকার কারও নেই। উৎপাদক ও ভোক্তা– দু’জনের কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করার আহ্বান জানান জয়নুল আবেদীন।
কীভাবে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেটার উদাহরণ তুলে ধরে খানির সহসভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন, ফসল যখন কৃষকের ঘরে থাকে, তখন এর দাম থাকে না; কিন্তু ফসল যখনই মহাজনের হাতে যায়, তখনই দাম বেড়ে যায়। মেহেরপুরের কৃষক সাইফুল শেখ যখন পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আত্মহত্যা করছেন, তখন পেঁয়াজের মণপ্রতি দাম ছিল ৬০০ টাকা। ঠিক তার দুই সপ্তাহ পর মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম উঠেছে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। অথচ এখন আর কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ নেই। মুনাফা লুটছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা আত্মহত্যার ঘটনা দেখছি; কিন্তু কৃষক যখন পেশা পরিবর্তন করে ভ্যান চালানো শুরু করেন, তা কি আত্মহত্যা নয়?
ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কৃষকরা মহাজনের কাছ থেকে, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে চড়া সুদে ঋণ নেন। প্রতি সপ্তাহে তাঁকে তা পরিশোধ করতে হয়। যখন ফসল ঘরে আসে, তখন মহাজন ও এনজিও প্রতিনিধিরা এসে হাজির হয় ঋণের টাকার জন্য। তখন বাধ্য হয়ে তাঁকে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে কৃষককে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার পথ সহজ করা ও মৌসুমি ঋণ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা চরম অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সম্প্রতি সরকার যে ধানের দাম নির্ধারণ করেছে, সেটা কৃষকের জন্য লাভজনক হবে না।
কৃষক দাদন নেন মহাজনের কাছ থেকে; কিন্তু ব্যাংকে যান না উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ব্যাংকে এত কাগজপত্র দিতে হয় যে, কৃষক ঋণ নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। ব্যাংক ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়াটা কৃষকের জন্য সহজতর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে খানির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠক উম্মে সালমা। সেখানে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে– লোকসান ঠেকাতে সরকারের সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ও চাল কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করা, কৃষকের ফসল বিক্রির সুবিধার্থে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা, ফসল সংরক্ষণের জন্য কৃষি জোনভিত্তিক কমিউনিটি সংরক্ষণাগার নির্মাণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য শস্য বীমা চালু, ফসলহানি হলে ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা।
পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক-প্রানের নির্বাহী প্রধান নুরুল আলম মাসুদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ইনসিডইন বাংলাদেশের অপারেশন অফিসার মো. মুশফিকুর রহমান ও একশনএইডের উপব্যবস্থাপক অমিত রঞ্জন দে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এক কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ২২ থেকে ২৫ টাকা হলেও কৃষকদের ১৪ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। প্রতি বিঘায় খরচ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হলেও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় মণ। ভেজাল পেঁয়াজ বীজ ও কীটনাশক প্রয়োগ করে দেশব্যাপী কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।