‘একদিন আমার সফলতার গল্প লিখবেন আপনারা’
Published: 14th, January 2025 GMT
২ মাস ২০ দিন পর দ্বিতীয়বারের মতো মেয়েটির বাসায় যাওয়া হলো। প্রথমবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছিল। আবহাওয়ার মতোই মন ভারী ছিল মেয়েটির। পড়াশোনার খরচ কীভাবে চলবে, কীভাবে নিজেরা চলবেন, তা নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। আর দ্বিতীয়বার সেই বাড়িতে গিয়ে মেয়েটিকে দেখা গেল ভিন্নভাবে। তাঁর মধ্যে আজ ‘কিছু একটা হওয়ার’ আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। মেয়েটির নাম তানজিলা আক্তার শিলা (২১)। ১১ বছর বয়সে আগুনে তাঁর সারা শরীর পুড়ে যায়। ডান পা কেটে ফেলতে হয়। তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাঁর জীবিকার ব্যবস্থা হয়েছে। পড়ালেখা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি পেয়েছেন প্রথম আলো ট্রাস্টের চার বছরের শিক্ষাবৃত্তি।
রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে তানজিলা এবার জিপিএ-৪ পেয়ে বাণিজ্য বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তানজিলার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল গত বছরের ৮ অক্টোবর নারী অ্যাম্পুটি ফুটবলের ক্যাম্পে। যৌথভাবে স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্স (শি) এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) অঙ্গহানি হয়েছে, এমন নারী-পুরুষদের জন্য পাঁচ দিনব্যাপী ওই ফুটবল প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল।
রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে তানজিলা এবার জিপিএ-৪ পেয়ে বাণিজ্য বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তানজিলার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল গত বছরের ৮ অক্টোবর নারী অ্যাম্পুটি ফুটবলের ক্যাম্পে। যৌথভাবে স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্স (শি) এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) অঙ্গহানি হয়েছে, এমন নারী-পুরুষদের জন্য পাঁচ দিনব্যাপী ওই ফুটবল প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল।খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা ও অনটনের মধ্যে লড়াই করে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া তানজিলার গল্প আরও গভীরভাবে শোনার জন্য প্রথমবার তাঁদের বাসায় যাওয়া হয়েছিল গত বছরের ১৮ অক্টোবর। আর দ্বিতীয়বার যাওয়া হলো ৮ জানুয়ারি।
রাজধানীর পশ্চিম রামপুরায় উলনবাজারের কাছে তানজিলাদের বাসা। দেয়ালঘেরা জায়গায় উঠান ঘিরে কয়েকটি ঘর। তেমনই একটি ঘরে মাসে ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় তানজিলা থাকেন মা রোকেয়া বেগম (৫৫) ও একমাত্র ভাই মাসুদ রানার (২৩) সঙ্গে। তানজিলা চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। তিন বছর আগে বাবা মনির হোসেন অন্যত্র বসবাস শুরু করলে ভাইয়ের ওপর সংসারের চাপ বাড়ে। ভাই রাইড শেয়ারিং পাঠাওয়ের গাড়ি চালান।
তানজিলার অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে ১০ বছর আগে ২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর। শিক্ষকের বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে তাঁর মুখমণ্ডলসহ পুরো দেহ পুড়ে যায়। তিন মাস তাঁর চিকিৎসা হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। ওই সময় ডান পায়ে সংক্রমণ হলে পা ঊরু থেকে কেটে বাদ দেন চিকিৎসকেরা। তানজিলার সঙ্গে দগ্ধ হয়ে মারা যায় তাঁর বড় বোন রুমা আক্তারের মেয়ে আশরাফী (৭)।
তানজিলা বলেন, ‘আমাকে প্রতিবন্ধী বলা যায়, বলেন! আমি তো সব পারি ’.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যমজ বোনের ডেন্টালে ভর্তির সুযোগে আনন্দ, প্রথমবারের মতো আলাদা হওয়ার কষ্ট
টাঙ্গাইলের সখীপুরে যমজ বোন ডেন্টাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। গতকাল রোববার ডেন্টাল কলেজে বিডিএসে ভর্তি পরীক্ষার (২০২৪-২৫) ফলাফলে যমজ বোন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এই দুই বোন হলেন সামিয়া জাহান ওরফে আফসানা ও সাদিয়া জাহান ওরফে শাহানা। সামিয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে এবং সাদিয়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
এর আগে সখীপুরে আরেক শিক্ষক দম্পতির যমজ মেয়ে যারিন তাসনিম বুয়েটে এবং যাহরা তাসনিম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।
আরও পড়ুনএক বোনের বুয়েটে আরেকজনের মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ, প্রথমবার আলাদা হচ্ছেন তাঁরা০১ মার্চ ২০২৫সামিয়া ও সাদিয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, সখীপুর পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাহারতা এলাকার বাসিন্দা আল আমিন মিয়া ও আফিয়া আক্তার দম্পতির যমজ মেয়ে সামিয়া ও সাদিয়া। এর আগে দুই বোন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন।
যমজ বোনদের বাবা আল আমিন আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ওরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হবে। তাঁর দুই মেয়ে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ–৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এর আগে এসএসসি ও জেএসসিতে তাঁরা জিপিএ–৫ পেয়েছিলেন।
সামিয়া জাহান ও সাদিয়া জাহান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা একসঙ্গে মায়ের পেটে ছিলেন। একসঙ্গে বড় হয়েছেন। এক বিছানায় ঘুমিয়েছেন। একই টেবিলে, একই বিদ্যালয়ে ও একই কলেজে পাশাপাশি বসে পড়াশোনা করেছেন। এখন স্বপ্নপূরণে ও ভবিষ্যৎ জীবন গড়তে দুজনকে দেশের দুই প্রান্তে চলে যেতে হবে। একজন আরেকজনকে ছেড়ে থাকবেন, ভাবতেই তাঁদের কষ্ট হচ্ছে।
বাবা আল আমিন মিয়া উপজেলার বড়চওনা-কুতুবপুর কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং জামায়াতে ইসলামীর সখীপুর উপজেলা শাখার আমির। মা আফিয়া আক্তার স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
সখীপুর পাইলট উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কাইউম বলেন, ‘ওরা আমাদের বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছিল। ওরা আমাদের বিদ্যালয়ের গর্ব। এবার ওই দুই বোন ডেন্টাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে শুনে খুব খুশি হয়েছি।’