রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। দুই দলের উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই দেখতে ভক্তদের অপেক্ষা করতে হয় আইসিসি বা এসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্ট পর্যন্ত। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ঠিক আগে নেটফ্লিক্স নিয়ে আসছে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে একটি বিশেষ তথ্যচিত্র।  

এই তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের মাঠের লড়াই ও তার পেছনের গল্প। এতে থাকছেন সুনীল গাভাস্কার, বীরেন্দর শেবাগ, শোয়েব আখতারসহ আরও অনেক কিংবদন্তি। তথ্যচিত্রটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা: ভারত বনাম পাকিস্তান’। এটি মুক্তি পাবে ৭ ফেব্রুয়ারি।  

নেটফ্লিক্স তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্যচিত্রের পোস্টার প্রকাশ করেছে। পোস্টারে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, ‘দুটি জাতি। একটি মহাকাব্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ১৬০ কোটির প্রার্থনা। একটি লিগ্যাসির রোমাঞ্চকর সাক্ষী হতে আসুন। এর মতো কিছুই আর হতে পারে না।’

Two nations.

One epic Rivalry. 1.6 Billion prayers.
Come witness the thrill of a legacy like no other in The Greatest Rivalry: India vs Pakistan, arriving on 7th February, only on Netflix.#TheGreatestRivalryIndiaVsPakistanOnNetflix #TheGreatestRivalryIndiaVsPakistan pic.twitter.com/zva657sI3i

— Netflix India (@NetflixIndia) January 13, 2025

তথ্যচিত্রে ১৯৭৮ সালে দুই দলের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো তুলে ধরা হবে। মাঠের উত্তেজনার পাশাপাশি খেলোয়াড়দের মানসিক চাপ, প্রস্তুতি এবং প্রতিটি ম্যাচের পেছনের অজানা কাহিনিগুলো থাকবে এতে।  

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন সহজ কাজ নয়। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক পাকিস্তান। তবে ভারত সরকার দল পাঠাতে রাজি না হওয়ায় টুর্নামেন্টের জন্য হাইব্রিড মডেল বেছে নেওয়া হয়েছে। এই মডেলের অধীনে ভারতের ম্যাচগুলো হবে দুবাইতে। ফলে বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং শাহীন আফ্রিদিদের ভারতীয় দলের মুখোমুখি হতে আরব আমিরাতে পাড়ি জমাতে হবে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তানের হাইভোল্টেজ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২৩ ফেব্রুয়ারি, দুবাইতে। তার আগে মুক্তি পেতে যাওয়া এই তথ্যচিত্র ভক্তদের উত্তেজনা আরও বাড়াবে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

তবু দুবাই আপন নয়!

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমির চার দলের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া আসরের চার ভেন্যুর তিনটিতেই গিয়েছে। নিউজিল্যান্ড সবক’টিতে গিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা তো ভারতকে সেমির সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে দুবাই এসে বসে আছে। তারা আবার লাহোরে ফিরে গেছে। সবাই যখন ভেন্যুতে ভেন্যুতে ঘুরে ক্লান্ত, ব্যতিক্রম তখন ভারত। সেই যে তারা দুবাই এসেছিল, এখনও সেখানেই আছে। বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, উইন্ডিজের কয়েকজন সাবেক আইসিসির কড়া সমালোচনা করেছেন। 

তবে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা বিষয়টিকে মোটেও অনৈতিক কিছু ভাবছেন না। গত কয়েক দিনের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সেমিফাইনাল-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে রোহিত কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলেন, দুবাই তাদের বাড়ি নয়। তবে দুবাই তাদের বাড়ি না হলেও আজকের সেমিতে যে স্পিন বড় ভূমিকা রাখতে পারে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত রোহিত।

ভিভ রিচার্ডস, নাসের হুসেইন, মাইক আর্থারটন, রিকি পন্টিং, ওয়াকার ইউনুসদের মতো সাবেকরা আইসিসির কড়া সমালোচনা করে দাবি করেন, এক ভেন্যুতে সব ম্যাচ খেলায় ‘এ’ গ্রুপের অন্য দলগুলোর তুলনায় ভারত কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বাড়তি সুযোগ পেয়েছে। এখন সেমিও তারা একই ভেন্যুতে খেলবে। এমনকি তারা যদি ফাইনালে ওঠে, সেটাও দুবাইয়ে হবে। তবে বিষয়টিকে বাড়তি সুবিধা হিসেবে মানতে নারাজ রোহিত। 

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমি-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি এর ব্যাখ্যা দেন, ‘প্রতিবার এই মাঠের পিচ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। আমরা এখানে যে তিনটি ম্যাচ খেলেছি, প্রতিটিতে পিচ ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করেছে। এটা আমাদের বাড়ি নয়, এটা দুবাই। এখানে আমরা খুব বেশি ম্যাচ খেলি না। আমাদের জন্যও এই মাঠ নতুন।’ 

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমির পূর্বে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করছেন রোহিত, ‘এখানে চার বা পাঁচটি পিচ ব্যবহৃত হয়েছে। আমি জানি না, সেমিফাইনাল কোন পিচে হবে। কিন্তু যাই ঘটুক না কেন, আমাদের এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। যে পিচই দেওয়া হোক না কেন, আমাদের সেখানেই খেলতে হবে।’

রোহিত নিজের এই মন্তব্যের স্বপক্ষে নিউজিল্যান্ড ম্যাচের উদাহরণও দেন, ‘নিউজিল্যান্ডের বোলাররা যখন বোলিং করছিলেন, তখন আমরা দেখতে পেলাম কিছুটা সুইং করছে। প্রথম দুই ম্যাচে আমাদের বোলারদের বোলিংয়ের সময় কিন্তু আমরা তেমন কিছু দেখিনি। শেষ ম্যাচে আমরা কিন্তু ততটা স্পিন হতেও দেখিনি। কাজেই প্রতিটি পিচেই ভিন্ন কিছু ঘটছে। এখানে কোন পিচ কী হবে কিংবা কী হবে না, সেটা আমরা একেবারেই জ্ঞাত নই।’ 

তবে রোহিতের চাওয়া উইকেটে যেন বোলারদের জন্য কিছু থাকে, ‘যদি বোলারদের জন্য উইকেটে কিছু থাকে, তাহলে ম্যাচটা বেশ জমজমাট হয়। তাই একেবারে ফ্ল্যাট পিচের পক্ষে আমি নই। যদি উইকেট চ্যালেঞ্জিং হয়, সেটা হোক পেস বা স্পিন, তাহলে ম্যাচটা ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়।’

স্কোয়াডে পাঁচ স্পিনার নেওয়া এবং শেষ ম্যাচে চার স্পিনার খেলানোর কারণও বলেছেন রোহিত, ‘এখানকার উইকেট দেখে এবং গত দুই মাস দুবাইয়ে যা হয়েছে, সেটা শুনে আমরা বুঝতে পেরেছি যে পিচ মন্থর হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইএল টি২০ দেখে আমাদের মনে হয়েছে, এখানে স্লো বোলাররা বেশি কার্যকর হবে। যদি বাড়তি ব্যাটারের প্রয়োজন হয়, তাহলে পন্ত (ঋষভ) তো রয়েছেই। কাজেই একজন বাড়তি স্পিনার রাখার বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে।’ 

তার মানে নিউজিল্যান্ডের মতো সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও চার স্পিনার নিয়ে নামছে ভারত। কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল, রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে থাকছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া বরুন চক্রবর্তী। তাই আজও সুযোগ পাচ্ছেন না পেসার হারশিত রানা। তবে এক মাঠে খেলায় যে সুবিধা হয়েছে, সেটা সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে রোহিত ঠিকই স্বীকার করেছেন, ‘এখানে আমরা পাঁচ-ছয় দিন আগে এসেছি এবং আইসিসি একাডেমি মাঠে দারুণ কিছু প্রস্তুতি সেশন কাটিয়েছি। সৌভাগ্যক্রমে একাডেমি মাঠের পিচ ও মূল স্টেডিয়ামের পিচ প্রায় একই রকম। যে কারণে গত ম্যাচে আমরা উইকেটের সঙ্গে খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পেরেছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ