দুই পাশে বসতবাড়ি। কোনোটি কাঁচা, আবার কোনোটি পাকা। মাঝ দিয়ে চলে গেছে পিচঢালাই রাস্তা। রাস্তাটি পেরিয়ে মানুষজনকে যেতে হয় অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজসহ নানা কাজে। কিন্তু ওই রাস্তার মাঝখানে ইটের দেয়াল তুলে দেওয়ায় মানুষজনের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ১৫ দিন ধরে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছে ৪০টি পরিবারের ১৭০ মানুষ।

ঘটনাটি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর এলাকার। রাস্তাটি দিয়ে দৌলতপুর হয়ে সাগুনীতে যাওয়া যায়।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের লোকজন বসতবাড়ির মাঝের ব্যক্তিমালিকানার একটি কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচল করে আসছিলেন। আর ওই রাস্তার ২০ থেকে ২৫ মিটার উত্তরে সিএস রেকর্ডের রাস্তার জায়গায় এলাকাবাসীর অনেকেই ঘর তুলে বসবাস করতেন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ওই কাঁচা রাস্তার দুই কিলোমিটার পাকা করার উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সে সময় ওই গ্রামের বাসিন্দা আলী হোসেন ও তাঁর পরিবারের লোকজন রাস্তার কিছু অংশ নিজেদের জমি দাবি করে রাস্তা নির্মাণে বাধা দেয়। সে সময় আলী হোসেন ব্যক্তিমালিকানার জমির বদলে সিএস রেকর্ডের রাস্তাটি পাকা করার উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন করেন।

দৌলতপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সে সময় তাঁরা গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তিমালিকানার রাস্তাটি পাকা করার পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু সে সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হকের ভিটায় যাতায়াতের জন্য ব্যক্তিমালিকানার রাস্তাটি পাকা করে নেন তিনি। রাস্তাটি পাকা করার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় লোকজনকে ভয়ভীতিও দেখানো হয়। পুলিশ দিয়ে হয়রানিও করা হয়।

আলী হোসেনের ছেলে মো.

মুসলিম বলেন, ‘যখন রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন বলা হয়েছিল, সিএস রেকর্ডের রাস্তাটি পাকা হবে। কিন্তু কাজের সময় দেখা গেল, আমাদের ব্যক্তিমালিকানার রাস্তাটি পাকা হচ্ছে। যখন দেখলাম, আমাদের জায়গাটি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, তখন আমার বাবা আদালতের আশ্রয় নেন। ২০২০ সালে মামলায় আমাদের পক্ষে রায় পাই। এরপর আমরা আমাদের মালিকানার জমি হেফাজতে নিই।’ মামলার রায়ের পর আলী হোসেন ও তাঁর ছেলেরা রাস্তার ইট তুলে জায়গাটি বেড়া দিয়ে ঘিরে দেন। পরে রাস্তার ওপর কয়েকটি গর্ত করে রাখেন।

এ ঘটনার পর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে সিএস রেকর্ডের রাস্তাটি উদ্ধারে উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। সে সময় মনু মিয়া, আকতার হোসেন, মুক্তার হোসেন, মো. খোকাসহ কয়েকজনকে রেকর্ডের রাস্তার দখল ছেড়ে দিতে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পেয়ে তাঁরা রাস্তার জায়গা থেকে তাঁদের স্থাপনা সরিয়ে নেন। মনু মিয়া বলেন, ‘রেকর্ডের রাস্তার দখল ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ পেয়ে আমরা ছয়টা ঘর ভেঙে ফেলি। কিন্তু আকতার ও মুক্তার দখল ছাড়েননি। এতে রেকর্ডের রাস্তটিও চালু হয়নি। এ কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’

গত ৩০ ডিসেম্বর মনু মিয়া তাঁর ছেলেদের নিয়ে হঠাৎই এলজিইডির ওই পাকা রাস্তায় ইটের দেয়াল তুলে মানুষজনের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেন। এতে দুর্ভোগে পড়ে যান এলাকাবাসী। তাঁদের এখন অন্য মানুষজনের জায়গা-জমি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী লোকজন এ সমস্যার প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) শরণাপন্ন হন। পরে ইউএনও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) পাঠিয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে একটি সমঝোতার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এখনো বিষয়টির সুরাহা হয়নি।

গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকাবাসীর চলাচলের এলজিইডির পিচঢালাই রাস্তার মাঝখানে ঠায় দাঁড়িয়ে ইটের পাকা দেয়াল। এলাকার লোকজন অলিগলি দিয়ে ঘুরে বড় সড়কে উঠছেন। খুদে শিক্ষার্থীসহ কেউ কেউ দেয়াল টপকে পেরিয়ে যাচ্ছে। সে সময় ওই এলাকার বাসিন্দা সুমি আক্তার ও ললিতা রানী দুটি শিশুকে সঙ্গে নিয়ে দেয়ালটি টপকে যান।

সুমি আক্তার বলেন, ‘এভাবেই দোকানে সদাই করতে যাচ্ছি। এতে কষ্টের শেষ নাই। যাঁরা রাস্তাটা বন্ধ করে দিছেন, তাঁরা বলছেন, এই রাস্তার জায়গাটার মালিক নাকি তাঁরা! তাঁরা এখন বলছেন, আমরা যেন রেকর্ডের রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। কিন্তু ওই রাস্তা তো চলাচলের অবস্থায় নাই।’

ইটের দেয়ালের পূর্ব দিকে এক–দুজন করে ভুক্তভোগী লোকজনের ভিড়। তাঁদের একজন জ্যোৎস্না বেগম রাস্তাটি দেখিয়ে দিয়ে বললেন, রাস্তটি দিয়ে সহজে বাঁশগাড়ায় গিয়ে ওঠা যায়। এখন রাস্তার ওপর দেয়াল দেওয়ায় তাঁদের চলাফেরা বন্ধ হয়ে গেল। অন্য মানুষের বাড়ি ও বাগানের ভেতর দিয়ে চলফেরা করতে হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত মানুষের চলাচলের রাস্তায় এ রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা যায় কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মনু মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পাকা রাস্তার জায়গাটা তো ব্যক্তিমালিকানাধীন, তাই দেয়াল তুলেছি। রেকর্ডের রাস্তার ওপর ঘর ভেঙে নিতে প্রশাসন নোটিশ দেওয়ার পর আমরা ঘর সরিয়ে নিলাম। কিন্তু প্রশাসন এত দিনেও রাস্তাটি চালু করতে পারেনি। আমাদের দুই দিক থেকে ক্ষতি হচ্ছিল। বিষয়টি ইউএনওকে জানালে তিনি রেকর্ডের রাস্তার জায়গা ছেড়ে দিয়ে নিজেদের জায়গায় যা ইচ্ছা তা করতে বলেন। এরপর আমরা সেখানে দেয়াল তুলে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছি। এতে আমরা কোনো অন্যায় করিনি।’

পীরগঞ্জের ইউএনও রমিজ আলম বলেন, ‘মানুষজন যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন, সেটি সরকারি জায়গায় হোক অথবা কারও ব্যক্তিগত জায়গায় হোক, কেউ তা বন্ধ করতে পারবেন না। রাস্তা বন্ধের বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এসি ল্যান্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁর মাধ্যমে জানতে পেরেছি, অভিযুক্ত ব্যক্তি যিনি রাস্তাটি বন্ধ করেছেন, তিনি অন্যায় করেছেন। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আরও পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেব।’

ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় এলজিইডি পাকা রাস্তা নির্মাণ করতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এলজিইডি ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘আপনারা হয়তো ভুল করছেন। এলজিইডি রাস্তা পাকা করলে রেকর্ডেরই রাস্তাতেই করছে। পাঁচ বছর আগের ইস্যু নিয়ে এখন আলোচনা না ওঠানোই ভালো।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এবার ১২ হাজার শিক্ষার্থীকে ইফতার করালো রাবি প্রশাসন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অধ্যায়নরত ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতারের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সোমবার (৩ মার্চ) দ্বিতীয় রোজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসরের নামাজের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা দলে দলে কেন্দ্রীয় মসজিদে আসতে শুরু করেন। এ সময় মসজিদের ভেতরে এবং মসজিদ সংলগ্ন বাগানে তারা ইফতারির জন্য সারিবদ্ধভাবে বসেন। এ ছাড়াও নারীদের জন্য মসজিদের বাগানে আলাদাভাবে ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়। এতে মসজিদ প্রাঙ্গণে তৈরি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ।

আরো পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণইফতার আয়োজন করে অভিনব প্রতিবাদ

রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ভোটগ্রহণ জুনে

ইফতারে অংশগ্রহণ করতে আসা ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “আজকের আয়োজন অনেক ভালো ছিল। এখানে সবার সঙ্গে ইফতার করতে এসে খুবই ভালো লাগছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটা দিন মনে হচ্ছে ঈদের মতো। প্রশাসনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন আহমেদ বলেন, “গতকালের তুলনায় আজকের আয়োজন অনেক ভালো। কাল সব এলোমেলো ছিল। কিন্তু আজকের আয়োজন গোছালো হয়েছে। এত মানুষের সঙ্গে আগে কখনো ইফতার করিনি। অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করছে। মনে হচ্ছে এখানে মেলা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য।”

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতারে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খান (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান (শিক্ষা), রেজিস্ট্রার ইফতেখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার প্রমখ।

সার্বিক বিষয়ে জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, “আমরা আজ প্রায় সাড়ে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতার আয়োজন করেছি। যা গতকালের তুলনায় তিনগুণ। আমরা আশা করছি আজ সব ঠিকঠাক মতো হবে। এজন্য সবার সাহায্য প্রয়োজন, যাতে কোন উশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না হয়।”

প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাসব্যাপী ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রোজার প্রথমদিন রবিবার (২ মার্চ) ৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু আয়োজনের তুলনায় অধিক রোজাদার উপস্থিত হওয়ায় ইফতারে সঙ্কট দেখা দিলে শিক্ষার্থীদের ভাগাভাগি করে নিতে দেখা গেছে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ