ঠাকুরগাঁওয়ে পাকা রাস্তার ওপর ইটের দেয়াল, বিপাকে ৪০ পরিবার
Published: 14th, January 2025 GMT
দুই পাশে বসতবাড়ি। কোনোটি কাঁচা, আবার কোনোটি পাকা। মাঝ দিয়ে চলে গেছে পিচঢালাই রাস্তা। রাস্তাটি পেরিয়ে মানুষজনকে যেতে হয় অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজসহ নানা কাজে। কিন্তু ওই রাস্তার মাঝখানে ইটের দেয়াল তুলে দেওয়ায় মানুষজনের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ১৫ দিন ধরে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছে ৪০টি পরিবারের ১৭০ মানুষ।
ঘটনাটি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর এলাকার। রাস্তাটি দিয়ে দৌলতপুর হয়ে সাগুনীতে যাওয়া যায়।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের লোকজন বসতবাড়ির মাঝের ব্যক্তিমালিকানার একটি কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচল করে আসছিলেন। আর ওই রাস্তার ২০ থেকে ২৫ মিটার উত্তরে সিএস রেকর্ডের রাস্তার জায়গায় এলাকাবাসীর অনেকেই ঘর তুলে বসবাস করতেন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ওই কাঁচা রাস্তার দুই কিলোমিটার পাকা করার উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সে সময় ওই গ্রামের বাসিন্দা আলী হোসেন ও তাঁর পরিবারের লোকজন রাস্তার কিছু অংশ নিজেদের জমি দাবি করে রাস্তা নির্মাণে বাধা দেয়। সে সময় আলী হোসেন ব্যক্তিমালিকানার জমির বদলে সিএস রেকর্ডের রাস্তাটি পাকা করার উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন করেন।
দৌলতপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সে সময় তাঁরা গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তিমালিকানার রাস্তাটি পাকা করার পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু সে সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হকের ভিটায় যাতায়াতের জন্য ব্যক্তিমালিকানার রাস্তাটি পাকা করে নেন তিনি। রাস্তাটি পাকা করার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় লোকজনকে ভয়ভীতিও দেখানো হয়। পুলিশ দিয়ে হয়রানিও করা হয়।
আলী হোসেনের ছেলে মো.
এ ঘটনার পর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে সিএস রেকর্ডের রাস্তাটি উদ্ধারে উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। সে সময় মনু মিয়া, আকতার হোসেন, মুক্তার হোসেন, মো. খোকাসহ কয়েকজনকে রেকর্ডের রাস্তার দখল ছেড়ে দিতে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পেয়ে তাঁরা রাস্তার জায়গা থেকে তাঁদের স্থাপনা সরিয়ে নেন। মনু মিয়া বলেন, ‘রেকর্ডের রাস্তার দখল ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ পেয়ে আমরা ছয়টা ঘর ভেঙে ফেলি। কিন্তু আকতার ও মুক্তার দখল ছাড়েননি। এতে রেকর্ডের রাস্তটিও চালু হয়নি। এ কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
গত ৩০ ডিসেম্বর মনু মিয়া তাঁর ছেলেদের নিয়ে হঠাৎই এলজিইডির ওই পাকা রাস্তায় ইটের দেয়াল তুলে মানুষজনের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেন। এতে দুর্ভোগে পড়ে যান এলাকাবাসী। তাঁদের এখন অন্য মানুষজনের জায়গা-জমি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী লোকজন এ সমস্যার প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) শরণাপন্ন হন। পরে ইউএনও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) পাঠিয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে একটি সমঝোতার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এখনো বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকাবাসীর চলাচলের এলজিইডির পিচঢালাই রাস্তার মাঝখানে ঠায় দাঁড়িয়ে ইটের পাকা দেয়াল। এলাকার লোকজন অলিগলি দিয়ে ঘুরে বড় সড়কে উঠছেন। খুদে শিক্ষার্থীসহ কেউ কেউ দেয়াল টপকে পেরিয়ে যাচ্ছে। সে সময় ওই এলাকার বাসিন্দা সুমি আক্তার ও ললিতা রানী দুটি শিশুকে সঙ্গে নিয়ে দেয়ালটি টপকে যান।
সুমি আক্তার বলেন, ‘এভাবেই দোকানে সদাই করতে যাচ্ছি। এতে কষ্টের শেষ নাই। যাঁরা রাস্তাটা বন্ধ করে দিছেন, তাঁরা বলছেন, এই রাস্তার জায়গাটার মালিক নাকি তাঁরা! তাঁরা এখন বলছেন, আমরা যেন রেকর্ডের রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। কিন্তু ওই রাস্তা তো চলাচলের অবস্থায় নাই।’
ইটের দেয়ালের পূর্ব দিকে এক–দুজন করে ভুক্তভোগী লোকজনের ভিড়। তাঁদের একজন জ্যোৎস্না বেগম রাস্তাটি দেখিয়ে দিয়ে বললেন, রাস্তটি দিয়ে সহজে বাঁশগাড়ায় গিয়ে ওঠা যায়। এখন রাস্তার ওপর দেয়াল দেওয়ায় তাঁদের চলাফেরা বন্ধ হয়ে গেল। অন্য মানুষের বাড়ি ও বাগানের ভেতর দিয়ে চলফেরা করতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত মানুষের চলাচলের রাস্তায় এ রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা যায় কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মনু মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পাকা রাস্তার জায়গাটা তো ব্যক্তিমালিকানাধীন, তাই দেয়াল তুলেছি। রেকর্ডের রাস্তার ওপর ঘর ভেঙে নিতে প্রশাসন নোটিশ দেওয়ার পর আমরা ঘর সরিয়ে নিলাম। কিন্তু প্রশাসন এত দিনেও রাস্তাটি চালু করতে পারেনি। আমাদের দুই দিক থেকে ক্ষতি হচ্ছিল। বিষয়টি ইউএনওকে জানালে তিনি রেকর্ডের রাস্তার জায়গা ছেড়ে দিয়ে নিজেদের জায়গায় যা ইচ্ছা তা করতে বলেন। এরপর আমরা সেখানে দেয়াল তুলে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছি। এতে আমরা কোনো অন্যায় করিনি।’
পীরগঞ্জের ইউএনও রমিজ আলম বলেন, ‘মানুষজন যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন, সেটি সরকারি জায়গায় হোক অথবা কারও ব্যক্তিগত জায়গায় হোক, কেউ তা বন্ধ করতে পারবেন না। রাস্তা বন্ধের বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এসি ল্যান্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁর মাধ্যমে জানতে পেরেছি, অভিযুক্ত ব্যক্তি যিনি রাস্তাটি বন্ধ করেছেন, তিনি অন্যায় করেছেন। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আরও পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেব।’
ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় এলজিইডি পাকা রাস্তা নির্মাণ করতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এলজিইডি ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘আপনারা হয়তো ভুল করছেন। এলজিইডি রাস্তা পাকা করলে রেকর্ডেরই রাস্তাতেই করছে। পাঁচ বছর আগের ইস্যু নিয়ে এখন আলোচনা না ওঠানোই ভালো।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দেবীগঞ্জে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে লেখা হয়েছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে পৌরসভার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এই লেখা সাধারণ মানুষের নজরে আসে। তবে, কারা এই স্লোগান লিখেছেন, তা কেউ দেখেননি।
পৌরসভার শহীদ আব্দুল মান্নান সড়ক সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ চত্বর, নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের দেয়ালে লাল, কালো ও নীল রঙের কালি দিয়ে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় শেখ হাসিনা’ এবং ‘শেখ হাসিনা তুমি আস্থা’- এমন স্লোগান লেখা হয়েছে।
এদিকে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অফিসিয়াল পেজ থেকে আজ দুপুর ১টায় দেবীগঞ্জের বিভিন্ন দেয়ালে লেখা স্লোগানের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয়। এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাতের আঁধারে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লিখছে তারা। উপজেলা ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সজাগ রয়েছে।"
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, “গত ৫ আগস্টের পর শুধু দেবীগঞ্জ নয়, পুরো পঞ্চগড়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এসব দেওয়াল লিখন লক্ষ্য করা গেলেও প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। এসব লেখা ’২৪ বিপ্লবের চেতনাকে ম্লান করার চেষ্টা করছে। যা রুখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান- তাদের (ছাত্রলীগ নেতাকর্মী) দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের অপতৎপরতা রুখে দিতে পঞ্চগড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।”
দেবীগঞ্জ থানার ওসি সোয়েল রানা মোবাইলে বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। এখনি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। বিষয়টি দেখছি আমরা।”
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ