গাজীপুর মহানগরীর সারাব এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ হওয়া ১৬টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করছেন কর্মহীন শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক–সংলগ্ন চক্রবর্তী ও আশপাশের এলাকায় কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা।

আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে কারখানাটির শ্রমিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এরপরও কারখানা খুলে দেওয়া না হলে আমরা যাঁরা টিম লিডার আছি, তাঁরা বসে নতুন ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

কারখানার শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ জানায়, এসব কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে কয়েক দফায় চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর বিক্ষোভে শ্রমিকদের কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর তাঁরা আর কোনো বিক্ষোভ না করে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য শ্রমিকেরা লিফলেটও বিতরণ করেন। আগের ঘোষণা অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক গাজীপুর মহানগরীর চক্রবর্তী এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। মানববন্ধনটি আশুলিয়ার জিরানি হয়ে নবীনগর এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

জিরানি বাজার এলাকায় অবস্থান করা ‘টিম লিডার’ ও কারখানাটির শ্রমিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সব কারখানার ব্যাংকিং–ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার পাশাপাশি অন্যান্য বকেয়াগুলো দিতে হবে। আমাদের দাবি আদায় না হলে পুনরায় নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানান খায়রুল ইসলাম নামের আরেক শ্রমিক।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, বেক্সিমকোর ১৬টি কারখানা প্রায় এক মাস আগে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সকাল থেকে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালন করছেন।

গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বন্ধের কারণ হিসেবে সরকার জানায়, কারখানাগুলোতে অর্ডার না থাকা ও ব্যাংকে ঋণখেলাপি থাকায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ফেরি সার্ভিস বন্ধে চক্রান্তের অভিযোগ

সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া-সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া রুটে চালু হওয়া ফেরি সার্ভিস বন্ধের ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও সন্দ্বীপে পৃথক কর্মসূচিতে এ অভিযোগ করেন সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। তারা বলেন, ‘একটি সিন্ডিকেট আবহাওয়ার দোহাই দিয়ে ফেরি সার্ভিস বন্ধের পাঁয়তারা করছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় সাময়িক বন্ধ রাখা হলেও, অন্য সময়ে ফেরি চালু রাখা সম্ভব। এ ছাড়া সিট্রাক দিতে মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করলেও বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ তা অমান্য করে ফেরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সন্দ্বীপবাসী মেনে নেবে না।’ এদিকে সন্দ্বীপের বাসিন্দা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, ‘নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফের সঙ্গে কথা হয়েছে। ফেরি তুলে নেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফেরি তুলে নেওয়ার আগেই 
বিকল্প সিট্রাক দেওয়া হবে। পন্টুনও কোথাও সরানো হচ্ছে না।’
গত ২৪ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ সমুদ্র পথে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছয়জন উপদেষ্টা ও দু’জন বিশেষ সহকারী উপস্থিত ছিলেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রাখে প্রধান উপদেষ্টাও। এতে উচ্ছ্বসিত হন যাতায়াতে দীর্ঘদিন চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে আসা সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। গত ২০ এপ্রিল এই রুটে ফেরি সার্ভিস সাময়িক বন্ধের একটি আদেশ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার থেকে ফেরি চলাচল বন্ধের কথা জানান বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সামুদ্রিক এই রুটে ফেরিটি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসির এমন সিদ্ধান্তের খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। এরপর থেকে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা, এই রুটে চলাচলরত কপোতাক্ষ ফেরি ও পন্টুন সরিয়ে না নেওয়ার দাবি জানানো হয়।  
সাংবাদিক সালেহ নোমানের সভাপতিত্বে ও সমাজকর্মী আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন– চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসাইন, সন্দ্বীপ পৌরসভা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মোশারফ হোসেন দিদার, সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি ফোরকান উদ্দীন রিজভী, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আকবর ভূইয়া, সমাজকর্মী অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুজা-উদ-দৌলা সজিব, যুগ্ম আহ্বায়ক নুর নবী, গণঅধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-নারীবিষয়ক সম্পাদক নাসরিন আক্তার, মিলাদ উদ্দীন মুন্না, খাদেমুল ইসলাম, এমআরকে তারেক, নুর নবী রবিন, মিলাদ হোসাইন, মাহবুবুর রহমান, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেয় সন্দ্বীপের সংগঠন ‘ছাত্র ফোরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ল স্টুডেন্ট ফোরাম, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার স্টুডেন্ট ফোরাম, নাবিক বহুমুখী সমবায় সমিতি, চট্টগ্রাম কলেজ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, আমরা সন্দ্বীপবাসী, নাগরিক সমাজ, ইসলামিক ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ও যুব পরিষদ, আলোকিত সংঘ, সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন, উড়িরচর সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, সন্দ্বীপ ইসলামী কালচারাল ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি নেতা ও সন্দ্বীপের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘যদি ফেরি বন্ধ করে, আমাদের লাশের ওপর দিয়ে বন্ধ করতে হবে। আমরা ফেরি এখান থেকে যেতে দেব না। ফেরি এখানে থাকবে। প্রতিকূল পরিবেশে বন্ধ রাখা হলেও অনুকূল পরিবেশে যেন ফেরি চলাচল চালু থাকে।’ 
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, ‘আগে লাল বোটের মাধ্যমে যাতায়াতে অনেক লোক হতাহত হয়েছেন। আমরা চাই নিরাপদ যাত্রীবাহন ফেরি যেন চালু থাকে। একটি সিন্ডিকেট আমাদের ফেরি বন্ধের চক্রান্ত চালাচ্ছে, যেটা আমরা কখনও হতে দেব না। সন্দ্বীপের মানুষ অনেক কষ্ট করেছেন।  যে কষ্টের দিন আমারা ফেলে এসেছি সে দিনে আর ফিরতে চাই না। আমরা চাই চক্রান্ত প্রতিহতের মাধ্যমে যাতায়াতের সুব্যবস্থা যেন অব্যাহত থাকে।’
এদিকে, সন্দ্বীপ উপজেলা কমপ্লেক্স অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সন্দ্বীপ উপজেলা যুবদলের আহ্ববায়ক প্রভাষক নিঝুম খান। এতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আলাউদ্দীন শিকদার, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলমগীর হোসাইন ঠাকুর, সন্দ্বীপ প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ওমর ফয়সাল, ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা মীর ইসমাঈল, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আজমত আলী বাহাদুর, জামায়াতে ইসলামীর সন্দ্বীপ উপজেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা আবু তাহের, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মনির তালুকদার, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাসেম মাস্টার প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
  • জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদের ভাইকে কোপানোর ঘটনায় মামলা, প্রতিবাদ কর্মসূচি
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কর্মসূচি, ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদককে নোটিশ
  • ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধন
  • সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ: শামীম ওসমান পালালেও তারা দোসরা বিশৃঙ্খলায়
  • পদ্মার খেয়াঘাট ইজারা বন্ধ দাবি চরের বাসিন্দাদের
  • সোনারগাঁয়ে ব্যাটারি কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন 
  • ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্ম বাতিল চায় ছাত্রদল
  • মানিকগঞ্জে জামানতের টাকা ফেরত না পেয়ে এনজিওর মালিকের বাড়িতে ভাঙচুর
  • ফেরি সার্ভিস বন্ধে চক্রান্তের অভিযোগ