চট্টগ্রামে পটিয়ার পাহাড়ে বাগানে শসা ও লেবু তুলতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত হন আবদুল হামিদ (৬৫) নামের এক বাগানমালিক। তিনি মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে তাঁর স্বজনেরা দাবি করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে পটিয়া ও চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকায় বেশ কয়েকটি অপহরণের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পটিয়া ও চন্দনাইশের দুর্গম পাহাড়গুলোতে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এসে নানা অপরাধ করে গা ঢাকা দিচ্ছেন বলে ওই এলাকার জনপ্রতিনিধি ও বাগানমালিকদের অভিযোগ।

গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে উপজেলার পূর্ব হাইদগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও বাগানমালিক আবদুল হামিদকে মুক্তি দেন অপহরণকারী ব্যক্তিরা। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, গতকাল সকাল সাতটার দিকে উপজেলার সাতগাছিয়া দরবার শরিফ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে শ্রীমাই পাহাড়ে নিজ বাগান থেকে আবদুল হামিদকে অপহরণ করা হয়।

গতকাল বিকেলে মুক্তি পাওয়া বাগানমালিকের বড় ছেলে মোহাম্মদ কায়সার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শ্রীমাই পাহাড়ে তাঁদের একটি বাগান রয়েছে। বাগানে ৪০ বছর ধরে লেবু, নানা জাতের সবজি, শসার চাষ করেন তাঁরা। রয়েছে মাছের খামারও। গতকাল সকাল সাতটার দিকে তাঁর বাবা আবদুল হামিদ, ছোট ভাই মো.

দিদার ও আরও দুই শ্রমিক বাগান থেকে শসা ও লেবু তুলতে যান। তাঁর বাবা ও ছোট ভাইয়ের তথ্য মতে, ১১ থেকে ১২ জন পাহাড়ি সন্ত্রাসী তাঁদের অপহরণ করেন। এ সময় দুই শ্রমিক ও ছোট ভাইকে ছেড়ে দিয়ে তাঁর বাবাকে আটকে রাখেন সন্ত্রাসীরা। চার লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে বাবাকে ছাড়িয়ে নিতে বলেন। পরে মুঠোফোনে বেলা ১টার দিকে ৩০ হাজার টাকা পাঠানোর পর সন্ধ্যার আগে আবদুল হামিদকে ছেড়ে দেন তাঁরা।

এ বিষয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল গণি বলেন, আবদুল হামিদকে সকালে বাগান থেকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অপহরণ করেন। সন্ধ্যার দিকে মুক্তিপণের মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছেন বলে জেনেছেন। পাহাড়ি এলাকার বাগানমালিকেরা পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আতঙ্কে রয়েছেন।

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জায়েদ মোহাম্মদ নাজমুন নুর বলেন, এই ব্যাপারে তিনি কোনো তথ্য পাননি। কোনো অভিযোগও কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বৈঠকে অভিযোগ শুনেই ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল কাদের ভূঁইয়াকে এক দিনের মধ্যেই প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ শনিবার সকালে এক মতবিনিময় সভায় ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনার পর পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিকে ফোন দিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় চকরিয়া থানার ওসি মিথ্যা মামলা দিয়ে লোকজনকে হয়রানি করছেন জানিয়ে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক সাংবাদিক। এরপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন।

সভায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালান ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে মাদকের চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে। গুজব-ছিনতাই, অপহরণ নিয়ন্ত্রণে রেখে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে এক ঘণ্টার ওই সভায় শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি); সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএন, আনসার, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি, দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) এবং সীমান্তনিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়। উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের বিপুল এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে থাকলেও কাগজে–কলমে সেটি মিয়ানমারের। তারপরও আমরা নানাভাবে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি।’

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কক্সবাজারে অপহরণের ঘটনা বেশি, এর কারণ রোহিঙ্গা। ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের যত তাড়াতাড়ি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে যাবে, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।’

বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা কক্সবাজারের মাদক চোরাচালান, গুজব, ছিনতাই, অপহরণ, সীমান্তনিরাপত্তা, হাইওয়ের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। পর্যটক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ যেন বজায় থাকে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে সার্বিক বিষয়ে নজরদারি রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উখিয়াতে বিজিবির নতুন ব্যাটালিয়নের যাত্রা শুরু

দুই দিনের সরকারি সফরে গতকাল শুক্রবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কক্সবাজার আসেন। আজ শনিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে দুপুরে কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের প্রশিক্ষণ মাঠে উখিয়াতে নবগঠিত ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) স্টেশনের সদর দপ্তর, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং কে-নাইন ইউনিট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণ ও আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের সুস্থতা কামনা করে ব্যাটালিয়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের সীমান্ত রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বিজিবির ওপর ন্যস্ত। সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা, চোরাচালান, নারী ও শিশু এবং মাদক পাচারসংক্রান্ত অপরাধ দমন, আন্তরাষ্ট্রীয় সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধ, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রশাসনকে সহায়তা দিচ্ছে বিজিবি। নবগঠিত উখিয়া ৬৪ ব্যাটালিয়নও বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপহরণের পর স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১
  • পেরেক-গাঁথা কাঠ দিয়ে পেটানো হয় দুজনকে
  • বৈঠকে অভিযোগ শুনেই ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা