দ্বিমুখী সংকটে পড়েছে ভারতের অর্থনীতি। একদিকে দেশটির মুদ্রা রুপির দরপতন হচ্ছে, আরেক দিকে দেশটির শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা বেরিয়ে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার উভয় ক্ষেত্রেই ধস নেমেছে। এ নিয়ে দেশটির সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমসের

রুপির মান আবারও রেকর্ড পড়েছে; উত্থানের দিক থেকে নয়, পতনের দিক থেকে। গতকাল রুপির বিপরীতে ডলার ৬৬ পয়সা বেড়ে ৮৬ দশমিক ৭০ রুপি হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আজকালের মধ্যেই তা ৮৭-তে উঠবে কি না। গত দুই বছরে এক দিনে রুপির এতটা দরপতন হয়নি। একই সঙ্গে গতকাল ভারতের শেয়ারবাজারেরও পতন হয়েছে। সেনসেক্স ১ হাজার ৪৯ দশমিক ৯০ পয়েন্ট নেমে ফিরেছে ৭৬ হাজারের ঘরে; স্থির হয়েছে ৭৬ হাজার ৩৩০ পয়েন্টে। টানা চারটি লেনদেনে সূচক পড়েছে মোট ১ হাজার ৮৬৯ পয়েন্ট। বাজার মূলধন কমেছে ২৪ দশমিক ৬৯ লাখ কোটি রুপির।

আজ অবশ্য রুপির দর কিছুটা বেড়েছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় প্রতি ডলারে পাওয়া যাচ্ছিল ৮৬ দশমিক ৫৩ রুপি। এ ছাড়া শেয়ার সূচকও বেড়েছে। সেনক্সেক ও নিফটি উভয়ই সকালের অধিবেশনে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।

২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, ট্রাম্প নানা রকম বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবেন। মূলত চীনকে লক্ষ্য করে তিনি এসব করবেন তা ঠিক, কিন্তু তাতে ভারতেরও অসুবিধা হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে ভারতের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়েছে। সূচকের পতনের এটাই মূল কারণ বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

রুপির দরপতনের সঙ্গে এই শেয়ার বিক্রির যোগ আছে বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রুপির মান রেকর্ড নিচে নেমেছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে; আমদানিকারকদের ডলার লাগছে বেশি। অনেকে অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগের জন্য ডলারকে বেছে নিচ্ছেন। এত দিক দিয়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বিনিময় হার বাড়ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের রপ্তানিকারকদের সংগঠন ফিয়ো বলছে, ডলারের সাপেক্ষে মুদ্রার পতনের হার অন্যান্য দেশে আরও বেশি। গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতীয় রুপির দর কমেছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। মালয়েশিয়ার রিঙ্গিতের দাম কমেছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ, ফিলিপিনসের পেসোর ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ডলারের ৪ দশমিক ১ শতাংশ ও জাপানি ইয়েনের ৮ শতাংশ।

ভারতের বিভিন্ন মহলের দাবি, শীর্ষ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করছিল বলেই অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভারতীয় মুদ্রার দরপতন হয়েছে কম। গতকাল থেকে তারা ডলার বিক্রি কমিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, অনেক পণ্য তৈরিতে আমদানি করা কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। রুপির বিনিময় হার হ্রাস পাওয়ায় এসব পণ্যের আমদানির খরচ বাড়বে। ফলে এসব দিয়ে প্রস্তুত পণ্যের দামও কমবে। ভারত বিদেশ থেকে ভোজ্যতেলও কেনে। তবে আরবিআইয়ের পক্ষেও ডলার ছেড়ে রুপির দরপতন থামানো মুশকিল। এতে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার দুর্বল হয়। এতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ বুধবার

পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতন অব্যাহত আছে। এতে পুঁজি হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ফিরে আসার প্রত্যাশায় ফের সক্রিয় হন বিনিয়োগকারীরা। তবে, দীর্ঘ আট মাসেও তা দৃশ্যমান না হওয়া বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ। এমন পরিস্থিতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমআইএ)।

আগামীকাল বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) সমন্বয়ক ও প্রধান মুখপাত্র মো. নুরুল ইসলাম মানিক রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের কারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবিতে আগামীকাল বুধবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন থেকে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। সকল বিনিয়োগকারী ও অংশীজনকে এ বিক্ষোভ মিছিলের অংশ নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

এদিকে গত ১৫ এপ্রিল বিএসইসি ও আইসিবির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

ঢাকা/এনটি/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএসইসি চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ
  • পুঁজিবাজারে টানা দরপতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ
  • রাশেদ মাকসুদ ও আবু আহমেদের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ
  • পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত, বিক্ষোভের ডাক
  • পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ বুধবার
  • পুঁজিবাজারে অধিকাংশ কোম্পানির দরপতন