এইচএমপিভি প্রতিরোধে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্দেশনা জারি
Published: 14th, January 2025 GMT
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) প্রতিরোধে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ নির্দেশনা জারি করে। বেবিচক বলছে, সাধারণ যাত্রী, বিমানবন্দরে কর্তব্যরত কর্মীসহ উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো ক্রুদের এসব নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
আরও পড়ুনহিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস কী১০ জানুয়ারি ২০২৫নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যাত্রী কিংবা কর্মীদের কারও জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিলে তা অবিলম্বে বিমানবন্দর হেলথ সার্ভিস টিমকে জানাতে হবে। পাশাপাশি বিমানবন্দরে মাস্ক পরা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর জন্য জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশেষ করে এইচএমপিভি ছড়িয়েছে, এমন দেশগুলো থেকে আসা ফ্লাইটের ক্ষেত্রে যাত্রার স্থানে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ফ্লাইটে কোনো যাত্রী বা ক্রুর মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে, তা অবিলম্বে বিমানবন্দর স্বাস্থ্য ইউনিটকে জানাতে হবে। ক্রু ও যাত্রীদের জন্য নির্দেশনা প্রচার করতে হবে।
আরও পড়ুনদেশে চলতি বছর প্রথমবারের মতো এইচএমপিভি শনাক্ত১২ জানুয়ারি ২০২৫উপসর্গযুক্ত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে বিমানবন্দর হেলথ সার্ভিস টিমকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সুষ্ঠুভাবে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা দিতে তাদের বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনএইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে আমাদের যা জানা দরকার১২ জানুয়ারি ২০২৫বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এইচএমপিভির উপসর্গ সাধারণ শ্বাসতন্ত্রের অসুস্থতার মতো, যা দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে সতর্কতা অবলম্বন করলে সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব। সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এ বিষয়ে জানাতে প্রয়োজনে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হেলথ টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। মুঠোফোন নম্বর: ০১৭৯৯৪৩০০৩৩। অথবা কল সেন্টারে ১৩৬০০ নম্বরে যেকোনো সময় যোগাযোগ করা যাবে।
আরও পড়ুননতুন ভাইরাস এইচএমপিভি সম্পর্কে যা জানতে হবে০৮ জানুয়ারি ২০২৫এ বিষয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, এইচএমপিভির সংক্রমণ প্রতিরোধে সব অংশীদারকে এই নির্দেশনাগুলো মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। যাত্রী, কর্মী ও দর্শনার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও পড়ুনবাংলাদেশে এইচএমপিভি শনাক্ত, লক্ষণ দেখে যেভাবে বুঝবেন১২ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শাবান মাসে রমজানের প্রস্তুতি
শাবান মূলত পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত তথা রোজা-নামাজ ইত্যাদি আমল করতেন। রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে মনের ভূমি কর্ষণ, শাবান মাসে আরও বেশি ইবাদতের মাধ্যমে মনের জমিতে বীজ বপন; রমজান মাসে সর্বাধিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সফলতার ফসল তোলা।
প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ ও সালাম প্রদানের নির্দেশনা-সংবলিত আয়াতটি শাবান মাসেই অবতীর্ণ হয়। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা নবীজির (সা.) প্রতি পরিপূর্ণ রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ নবীজির (সা.) জন্য রহমত কামনা করেন; হে বিশ্বাসী মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে
সালাম পেশ করো।’
(সুরা-আহজাব, আয়াত: ৫৬)
ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় শাবান মাস। নফল রোজা ও নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-কালাম, দান-সদকাহ-খয়রাত, ওমরাহ ইত্যাদির মাধ্যমে এই মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়।
রাসুল (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এই দোয়া বেশি বেশি পড়তেন– ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমাদান আমাদের নসিব করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫ তারিখের রাতকে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। ফারসি পরিভাষায় শব অর্থ রাত, বারাআত মানে মুক্তি; শবেবরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবেবরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’ তথা মুক্তির রজনী। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যদিবসের রজনী বলা হয়েছে।
শাবান মাসের রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, একদা মহানবীকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন রোজার ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সম্মানার্থে শাবান মাসে কৃত রোজার ফজিলত বেশি। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন দানের ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজান মাসে কৃত দানের ফজিলত বেশি।’ (বায়হাকি)
হজরত উসামা বিন জায়েদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! শাবান মাসে আপনাকে যত রোজা রাখতে দেখি, অন্য মাসে এত
পরিমাণ রোজা রাখতে দেখিনি। অর্থাৎ আপনি কেন এ মাসে এত বেশি রোজা রাখেন?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এটি এমন একটি মাস, যা রজব এবং রমজানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি মাসের মধ্যে পড়ে। আর অধিকাংশ মানুষ এ মাসটি সম্পর্কে গাফেল থাকে। অর্থাৎ উদাসীন থাকে। যার ফলে তারা ভালো আমল করে না। তারা ভাবে, রমজান তো আছেই।’ (নাসাঈ)
হাদিস সূত্রে জানা যায়, শাবান মাস আসার আগেই মহানবী (সা.) দুই হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবাদেরও পড়তে বলতেন– ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবাও ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরির রমাদান।’ (মুসনাদে আহমাদ)
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও। তাই এ মাসকে বলা হয় মাহে রমজানের আগমনী বার্তা।
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘মহানবী (সা.) কখনও নফল রোজা রাখতে শুরু করলে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি বিরতি দেবেন না। আর রোজার বিরতি দিলে আমরা বলতাম যে, তিনি মনে হয় এখন আর নফল রোজা রাখবেন না। আমি মহানবী (সা.)-কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি নফল রোজা রেখেছেন।’ (মুসলিম)
মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের শাবান মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করার তৌফিক দান করুন।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা