আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘মনোবল ঘাটতির’ সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা
Published: 14th, January 2025 GMT
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েই চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে। পতিত সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করায় তাদের মনোবল তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আর এই ‘মনোবল ঘাটতি’কে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে অপরাধীরা।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকারের সামনে যেসব বিষয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসছে, তার মধ্যে অন্যতম আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতি।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ফিরে না আসার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। দুটি কারণে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। প্রথমত; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেকেই এসব কাজে যুক্ত হচ্ছেন। দ্বিতীয়ত; আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয় উঠতে পারেনি।
একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাইনুল হাসান সোহেল। গত ২৪ ডিসেম্বর রাত ৯টার পর টিকাটুলির মোড়ের অফিস থেকে রিকশায় সেগুনবাগিচার ডিআরইউতে যাচ্ছিলেন। রিকশাটি দৈনিক বাংলা মোড়ে আসলে একদল ছিনতাইকারী গতিরোধ করে। এক সময় তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটি তারা ছিনিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী এই সাংবাদিক রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘ছিনতাইকারীরা মোবাইল টার্গেট করে আক্রমণ করে। তারা আমার হাত ও পায়ে আঘাত করে। এক পযার্য়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরি। রাস্তায় প্রকাশ্যে ও মতিঝিলের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ছিনতাইকারীরা যেভাবে আক্রমণ করেছে, সেক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি হলেও হতে পারত।’’
গত, ৮ জানুয়ারি এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ ছিনতাই হওয়া মোবাইলটি উদ্ধার করতে পারেনি।
মতিঝিল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘আমরা শুধু মোবাইল উদ্ধারই নয়, অপরাধীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।’’
শুধু সাংবাদিক নয়, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে শুধু সর্বস্বই খোয়াচ্ছন না, অনেককে জীবন দিতে হয়েছে জনবহুল এই শহরে।
ফ্লাইওভার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন হাফেজ কামরুল হাসান। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে চায় ছিনতাইকারীরা। ছিনতাইকারীদের বাধা দেওয়ায় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে বুকে আঘাত করে কামরুলের। ফ্লাইওভারের ওপর লুটিয়ে পড়লে ছিনতাইকারীরা তার কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন ও নগদ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। অবশ্য এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হঠাৎ করে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, মিরপুর, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, হাজারীবাগ, শাহ আলী, এমনকি গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। সন্ধ্যা নামতেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে ছিনতাইচক্রের সদস্যরা। প্রায়শই গুরুতর আহত, এমনকি প্রাণহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ছিনতাই মামলা যেসব থানায় বেশি
অন্তর্বর্তী সরকার ঢাকায় পুলিশের জনবলে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। পুলিশের সর্বোচ্চ পদ আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার পদে পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে বেশি আলোচনায় রয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকা।
এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ দিনে ঢাকায় গড়ে তিনটি করে ছিনতাই মামলা হয়েছে মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, হাতিরঝিল ও শাহজাহানপুর থানায়। দুটি করে ছিনতাই মামলা হয়েছে হাজারীবাগ, মিরপুর ও শাহআলী থানায়। একটি করে ছিনতাই মামলা হয়েছে ১৬টি থানায়। জানুয়ারিতে ১১৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ১২১টি, মার্চে ১৩৮টি, এপ্রিলে ৯৭টি, মে মাসে ১১৫টি, জুনে ১০৩টি, জুলাইতে ১০১টি এবং আগস্টে ৭০টি ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা হয়েছে। এর আগের বছর
জানুয়ারিতে ১০৭টি, ফেব্রুয়ারিতে ৯৭টি, মার্চে ১১১টি, এপ্রিলে ১১৮টি, মে মাসে ৯৫টি, জুনে ১০৫টি, জুলাইতে ৯৪টি, আগস্টে ১০৪টি, সেপ্টেম্বরে ১০৬টি, অক্টোবরে ১০৬টি, নভেম্বরে ৭৯টি এবং ডিসেম্বরে ১০৫টি। মোট ১২২৭। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ৯১টি, ফেব্রুয়ারিতে ৮৫টি, মার্চে ৯৪টি, এপ্রিলে ১০৭টি, মে মাসে ৮৫টি, জুনে ৮৫টি, জুলাইতে ৯৭টি, আগস্টে ১০৭টি, সেপ্টেম্বরে ১০৯টি, অক্টোবরে ১০২টি, নভেম্বরে ৯২টি এবং ডিসেম্বরে ৭৪টি। সব মিলিয়ে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন সাতজন। এ ছাড়া অনেকে গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢাকার ৫০টি থানা এলাকায় গত ১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ দিনে অন্তত ৩৪ জন ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মামলা করেছেন। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগী। এ সময় একজন ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন।
রেহাই পাচ্ছেন না সাংবাদিকরাও
কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ঢাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে প্রাণ রক্ষার্থে খুইয়েছেন ক্যামেরা, মোবাইল, টাকা আর ব্যাগ। গত ১৩ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ফটো সাংবাদিক মো.
১৬ ডিসেম্বর ছুটির দিন সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে থেকে মফিজুল ইসলাম সাদিক নামের একজন সংবাদকর্মীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ছিনতাই হয়ে যায়।
তিনি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘মোবাইলটি ছোঁ মেরে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী। আশপাশে চিৎকার করলেও আমার কথা কেউ শোনেনি।’’ পরে অবশ্য মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনি থানায় জিডি করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ডাকাতি
হাতিরঝিল থানা এলাকায় ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ নভেম্বর।
মামলার এজাহার বলা হয়, পশ্চিম রামপুরার বাসিন্দা হোসনে আরা বেগমের বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ছয় ব্যক্তি প্রবেশ করেন। তারা হোসনে আরার স্বামী আবদুল বাশার চৌধুরীকে মারধর করে আলমারিতে রাখা ৪০ হাজার ডলার, নগদ ১১ লাখ টাকা, ১০ ভরি সোনার গয়না লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতির এই ঘটনায় ১ ডিসেম্বর হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর আদাবরে। গত ২৮ নভেম্বর আদাবরের একটি বাসায় গিয়ে ডাকাতেরা চার লাখ টাকার মালামাল লুট করে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করে অভিযান চলছে
ঢাকার ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে, কারা ছিনতাই করে, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ডিএমপির প্রত্যেক বিভাগের ডিসি, এডিসি ও এসিকে নজরদারি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক রাতে তারা গাড়ি নিয়ে মুভে থাকছেন এবং তদারকি করছেন। এ ছাড়া ডিএমপি কন্ট্রোল রুম থেকে ওয়ারলেসে পেট্রোগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং তারা সজাগ আছে কি না, সেটিও তদারকি করা হচ্ছে। আবার যারা এসব ছিনতাইয়ের কাজে অভ্যস্ত, তাদের আদালতে প্রেরণ করলে তারা অতি সহজেই জামিনে বের হয়ে আসছে এবং আবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে।
ঢাকা মহানগরীতে ২ কোটির মত মানুষের বসবাস। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব ছিনতাইকারী যেন সহজে জামিন না পায়, এজন্য আদালত বা সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছে পুলিশ।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর চেষ্টা করছি ঢাকা শহরে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির মত ঘটনা যেন না হয়। ইতোমধ্যে ডিএমপির সবগুলো বিভাগ ও গোয়েন্দা বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারা ছিনতাইকারীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। গত কয়েকদিনের প্রায় দুই শতাধিকের বেশি ছিনতাইকারীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ইদানিং মোবাইল ছিনতাই বেড়েছে। মোবাইল ছিনতাই প্রতিরোধেও পুলিশ মোড়ে মোড়ে কাজ করছে। এ ছাড়া জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেলে মুহূর্তেই ছুটে যাচ্ছে পুলিশ।’’
এদিকে, ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশের পাশাপাশি এলিট ফোর্স র্যাবও কাজ করছে। এজন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাবের ব্যাটেলিয়নের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে ছিনতাই প্রতিরোধে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘সম্প্রতি চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে র্যাব। র্যাবের প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নে সংশ্লিষ্ট এলাকার অপরাধপ্রবণ জায়গাগুলো নির্ধারণ করা হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় কোন সময়ে চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ বেশি হচ্ছে, সে অনুযায়ী টহল কার্যক্রমসহ চেকপোস্ট বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যরাত এবং ভোরে বাসসহ বিভিন্ন টার্মিনালে যখন যাত্রীরা নামেন, তখন ওইসব এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। ইতোমধ্যে র্যাব বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারও করেছে।’’
ঢাকা/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইজতেমায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। ইজতেমা এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহল জোরদার ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে পর্যাপ্ত র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে র্যাব হেডকোয়ার্টার থেকে জানানো হয়, সার্বিকভাবে সব ধরনের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সার্বক্ষণিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাবও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে তুরাগ নদীর তীরে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসলমানসহ সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রতি বছর ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য দেশি-বিদেশি মুসল্লির আগমন ঘটে।
এ বছর তিন ধাপে ৩ দিন করে ইজতেমা মোট ৯ দিন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় ধাপে ৩-৫ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় ধাপে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন নিশ্চিতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে র্যাব ফোর্সেস অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।
র্যাব জানায়, সামগ্রিকভাবে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর, র্যাব-১ সহ ঢাকাস্থ ৫টি ব্যাটালিয়ন আগামী ৩০ জানুয়ারি হতে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি হতে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোতায়েন থাকবে। ইজতেমা এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া র্যাব সদর দপ্তর হতে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে।
ইজতেমা মাঠ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ইউনিফর্মে টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সুইপিং টিম দ্বারা তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য র্যাবের স্পেশাল টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং পর্যাপ্ত স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমগ্র ইজতেমা ময়দান ঘিরে উঁচু ভবনসমূহে বাইনোকুলারসহ র্যাব সদস্য নিয়োগ এবং র্যাবের অবজারভেশন পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও, র্যাব কর্তৃক ইজতেমাস্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে সমগ্র ইজতেমা এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। নৌ-পথে যে কোনো বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধকল্পে চলমান টহলের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক নৌ-টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে তিন ধাপে আয়োজিত ইজতেমা মধ্যবর্তী সময়ে কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইজতেমা এলাকার আশপাশে উচ্ছৃঙ্খলতা, মাদকসেবন, ছিনতাই, পকেটমার, মলমপার্টি ইত্যাদির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য বিদেশি খিত্তা এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সতর্ক দৃষ্টি ও নজরদারি রাখা হয়েছে।
মুসল্লিদের গাড়ি পার্কিং এলাকাসহ ইজতেমা এলাকায় অবৈধ টোল বা চাঁদা আদায় করতে না পারে, সে বিষয়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইজতেমামুখী যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশির জন্য চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ড, টঙ্গী কালীগঞ্জ রোড, উত্তরা নর্থ টাওয়ারের সম্মুখে এবং আশুলিয়া কামারপাড়া এলাকায় নিয়মিত চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
ইজতেমা এলাকায় র্যাবের চিকিৎসাকেন্দ্র সার্বক্ষণিকভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। র্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিকভাবে আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকবে।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের দিনে আগত ও ঘরমুখী মুসল্লিরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য র্যাবের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা চলমান থাকবে। বিশ্ব ইজতেমা কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী অপপ্রচার/গুজব রোধে র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে নজরদারি অব্যাহত রাখছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে কোনো ব্যক্তি/স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টা/অপপ্রচার কঠোরহস্তে দমন করতে প্রস্তুত রয়েছে র্যাব।
এ ছাড়াও যে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে র্যাবের সহযোগিতা পেতে টহল ইনচার্জ অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত র্যাব ব্যাটালিয়নকে অবহিত করণসহ র্যাবকে (র্যাব কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বরে মোবাইল: ০১৭৭৭৭২০০২৯) জানানোর জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/এনএইচ