যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলের কারণে লাখো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হন। এখন তাঁরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে উদ্গ্রীব। কিন্তু গত রোববার কর্তৃপক্ষ বলে দিয়েছে, এখনই ফেরা যাবে না। ফেরার জন্য অন্ততপক্ষে চার দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত প্যালিসেইডস ও ইটন এলাকায় ফিরতে উন্মুখ হয়ে আছেন অনেক বাসিন্দা। তাঁরা বিভিন্ন তল্লাশিকেন্দ্রে (চেকপয়েন্ট) ভিড় করছেন।

দাবানল এগিয়ে আসার জরুরি সতর্কতা পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে নিজ নিজ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন অনেকে। এ জন্য তাঁরা সঙ্গে করে কাপড়চোপড় বা ওষুধ নেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত পাননি। তাই তাঁরা এখন বাড়ি ফিরতে মরিয়া।

আবার এমন লোকজনও আছেন, যাঁরা এলাকায় ফিরে দেখতে চাইছেন, তাঁদের বাড়িঘর টিকে আছে কি না।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্টনি ম্যারোনি রোববার বলেছেন, চলতি সপ্তাহের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঝোড়ো বাতাসের কথা বলা হয়েছে। আর ঝোড়ো বাতাস থাকলে দাবানলজনিত জরুরি সতর্কাবস্থা আপাতত শেষ হওয়ার সুযোগ নেই।

এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যারোনি বলেন, লোকজন এখনই বাড়ি ফিরতে পারবেন না। সহজ কথায়, এখন বাড়ি ফেরাটা নিরাপদ নয়।

লোকজনকে যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের জায়গা বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।

আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই পূর্বাভাসের কথা উল্লেখ করে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা বহাল থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাড়ি ফেরার সুযোগ নেই।

লোকজনকে বাড়িতে ফিরতে দেওয়ার বিষয়ে কথাবার্তা আগামী বৃহস্পতিবার শুরু করা হবে বলে জানান ম্যারোনি।

নিরাপত্তাব্যবস্থার আওতায় স্বল্প সময়ের জন্য দাবানলদুর্গত নিজ নিজ এলাকা পরিদর্শনের সুযোগ পেতে লোকজনকে দীর্ঘ সময় সারি ধরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

জ্যানেল নামের এক নারী সম্প্রচারমাধ্যম কেটিএলএকে বলেন, তিনি জানেন, তাঁর ঘরবাড়ি নাই হয়ে গেছে। তবু তিনি ধ্বংসাবশেষটুকু দেখতে চান।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জ্যানেল বলেন, ‘আমি ছবি দেখেছি, ভিডিও দেখেছি। এখন আমি শুধু নিজ চোখে তা দেখতে চাই। আমি জানি, সব শেষ হয়ে গেছে। আমি শুধু চাই নিজে গিয়ে তা দেখতে।’

তবে নিরাপত্তাব্যবস্থার আওতায় দাবানলদুর্গত এলাকা পরিদর্শনের সুযোগ গত রোববারই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রচণ্ড বাতাসের আশঙ্কা করছেন। আর এই বাতাসের কারণে উত্তপ্ত কয়লা থেকে আবার আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ম্যারোনি বলেছেন, দাবানলের কারণে এলাকাছাড়া মানুষেরা যেন তাঁদের বাড়িঘরের বর্তমান অবস্থা, ঘরবাড়ি ধ্বংস বা নষ্ট হয়েছে কি না, তা অনলাইনে দেখতে পারেন, সে জন্য একটি ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের সিটি কাউন্সিলর ট্র্যাসি পার্ক বলেছেন, দাবানলের ভুক্তভোগীদের যন্ত্রণাটা তিনি বুঝতে পারছেন। কিন্তু পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল।

ট্র্যাসি পার্ক বলেন, এগুলো কঠিন সিদ্ধান্ত। তিনি জানেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকার অনেকে হতাশ ও মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টিকে তাঁদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন দাবানল এলাকার প্রায় এক লাখ মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য আদেশ জারি রয়েছে। গত সপ্তাহে অবশ্য এই সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সুখী মানুষের ফেসবুক আইডি

এক দেশে ছিল এক সুইট-কিউট রাজা। আর তার ছিল এক ফেসবুক আইডি। নাম ‘কিং দ্য রাজা’। রাজা সারা দিনই ফেসবুকে পড়ে থাকেন। দরবারের ছবি শেয়ার করেন। শিকারে যাওয়ার ছবি শেয়ার করেন। ‘মি অ্যান্ড কুইন’ ক্যাপশনে রানির সঙ্গে ছবি শেয়ার করেন। প্রজাদের ‘nyc lagca dugonka’ কমেন্টের পর কমেন্ট পড়তে থাকে। রাজার একটু মন খারাপ হলেই ‘অদ্য মোর চিত্ত প্রফুল্ল নহে’ লিখে, দুঃখের ইমো দিয়ে স্ট্যাটাস দেন। হাজার হাজার হার্ট, কেয়ার পড়ে সেসবে।

কিন্তু ইদানীং ফেসবুকে ঢুকলেই রাজার অস্থির লাগতে থাকে। বুক ধড়ফড় করে। মাথা ঝিমঝিম করে। রাজা উজিরকে নক দিয়ে বলেন, ‘কল দ্য বৈদ্য।’

উজির রিপ্লাই দেন, ‘সহমত জাহাঁপনা।’

বৈদ্য আসেন। ফেসবুক নিয়ে রাজার অস্থিরতার কথা শোনেন। নিজেও একটুখানি রাজার ফেসবুকের হোমপেজ স্ক্রল করে দেখেন। মিম, ট্রল, রিল, এই মত, ওই মত, উদ্ভট ভিডিও, ছবি, খুন, মারামারি, কাটাকাটি, এ বাটপার, ও জোচ্চোর, সে ফেইক...দেখতে দেখতেও বৈদ্যের নিজেরই অস্থির লাগতে থাকে। রাজা জিজ্ঞেস করেন, ‘হোয়াট হ্যাপেন্ড?’ বৈদ্য বলেন, ‘অ্যাকিউট ফেসবুকাসাইটিস। কঠিন ব্যামো!’ অতিসত্বর ফেসবুক ডিলিট করতে হবে।

উজির জানান, সেটা সম্ভব না। রাজ্যের অনেক কাজ মেসেঞ্জার গ্রুপে করতে হয়। সব দপ্তরের অফিশিয়াল পেজ আছে। রাজা সব কটির অ্যাডমিন।

রাজা দমে যান। বলেন, ‘কোনো কি পথ নেই?’

বৈদ্য ভেবে বলেন, ‘আছে। কিন্তু সেটা বড়ই কঠিন।’

উজির হাতে কিল দিয়ে বলেন, ‘আমাদের রাজার কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। বলুন কী করতে হবে।’

বৈদ্য জানান, রাজার ফ্রেন্ডলিস্টে সুখী মানুষ অ্যাড করতে হবে। সুখী মানুষের টাইমলাইনই পারবে রাজাকে বাঁচাতে।

উজির হেসে বলেন, ‘এ আর এমন কী। এখনই করছি।’

উজির সঙ্গে সঙ্গে ‘সুখী মানুষ’, ‘হ্যাপি ম্যান’ লিখে সার্চ করতে শুরু করলেন। কিন্তু দেখা গেল বেশির ভাগ অ্যাকাউন্টই ভুয়া। যে কটা অ্যাকাউন্ট আসল, সেগুলোতেও হতাশার ছড়াছড়ি।

রাজা এবার তাঁর নিজের ফেক আইডি থেকে ডেসপারেটলি সিকিং গ্রুপে পোস্ট দেন, ‘কেউ সুখী মানুষ কোথায় পাওয়া যায় বলতে পারেন?’ একজন লিখল, পাগলাগারদে দেখতে পারেন। একজন বলল, আমার বউয়ের নাম হ্যাপি। আপনি চাইলে তাকে দেখে যেতে পারেন। রাজার বুক ধড়ফড়ানি বেড়ে যায়।

উজির বললেন, বুঝেছি। ভার্চ্যুয়ালি সুখী কাউকে পাওয়া যাবে না। রাজ্যের অলিগলিতে খুঁজতে হবে সুখী মানুষ।

যে–ই কথা সে–ই কাজ। উজির-নাজির, সিপাহসালার, পাইক-পেয়াদা সবাই ছড়িয়ে পড়ল দিগ্‌বিদিক। কিন্তু কোথাও সুখী মানুষের খোঁজ নাই। দিন যায়, মাস যায়। রাজার ফেসবুকাসাইটিস বাড়ে। বুক ধড়ফড় বাড়ে। অস্থিরতা বাড়ে। রাজা এখন সারা দিনই হতাশায় থাকেন। বৈদ্য বলেন, ‘ক্রনিক অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার। এখনই বিহিত করতে হবে।’ রাজা আরও মুষড়ে পড়েন।

অবশেষে একদিন, খুঁজতে খুঁজতে খুঁজতে খুঁজতে সন্ধান মেলে এক সুখী মানুষের। তাঁর কোনো দুঃখ নাই। অস্থিরতা নাই। ডিপ্রেশন নাই। উজির আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘এত দিন কোথায় ছিলে! কত ডেসপারেটলি তোমাকে খুঁজছিলাম!’

‘কেন?’

উজির বলেন, ‘রাজার কঠিন ব্যামো। বৈদ্য বলেছেন সুখী মানুষ রাজার ফেসবুক ফ্রেন্ড হলেই ব্যামো কাটবে। তুমি এখনই রাজাকে অ্যাড রিকোয়েস্ট দাও।’

মানুষটি নির্মল হাসি হেসে বলেন, ‘কিন্তু আমার তো কোনো ফেসবুক আইডি-ই নাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পানির দাবিতে সুবর্ণচরে সাড়ে ৩ কিলোমিটার পদযাত্রা
  • সুখী মানুষের ফেসবুক আইডি