বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেনা হচ্ছে ১৫ হাজার টন চিনি
Published: 14th, January 2025 GMT
বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ১৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি কিনছে সরকার। মোট চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক দুটি স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে চিনি কিনবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সারা দেশে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী প্রায় ১ কোটি নিম্নআয়ের পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে চিনি বিক্রি করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এরমধ্যে প্রতি কেজি ১১৫.
টিসিবির ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ১ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন চিনি ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ পর্যন্ত ক্রয় চুক্তি হয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টন এবং ২টি স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে আরো ১৫ হাজার মেট্রিক চিনি।
স্থানীয়ভাবে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে একটি দরপত্র পাওয়া যায়। এতে মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড প্রতি কেজি চিনির দর ১১৫.২৫ পয়সা উল্লেখ করে। এতে চিনি ক্রয়ে ব্যয় হবে ১১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি ক্রয়ে সাশ্রয় হবে প্রায় ৬৯ কোটি টাকা। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে চিনি টিসিবি’র গুদাম পর্যন্ত পৌঁছে দেবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি।
অপর একটি প্রস্তাবে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে আরো ৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি ক্রয় করা হবে। এই চিনির দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর দরপত্র উন্মুক্ত করে। এতে একটি দরপত্র পাওয়া যায়। সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দরপত্রে প্রতি কেজি চিনির দাম ১১৭.৯০ টাকা উল্লেখ করে।এতে ব্যয় হবে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। পৃথক দুটি প্রস্তাবের মাধ্যমে ১৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এডিবির বিনিয়োগ করা একাধিক প্রকল্প কাজে আসছে না
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশে গ্যাস নেই জেনেও তারা এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করে। গত দেড় দশকে এ গ্যাসলাইন দিয়ে মাত্র এক দিন গ্যাস সরবরাহ হয়েছে। এরপরও ‘কল্পিত’ গ্যাস সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে খুলনায়। কেন্দ্র দুটি বসে থাকছে। এডিবির বিনিয়োগ করা একাধিক প্রকল্পই কাজে আসছে না।
বাংলাদেশে এডিবির বিনিয়োগ বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা এনজিও ফোরাম অন এডিবি ও কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন)। মঙ্গলবার বাংলামোটরের একটি রেস্তোরাঁয় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্লেষণ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এডিবির বিনিয়োগ করা বেশ কিছু প্রকল্প জ্বালানি খাতে ঝুঁকি তৈরি করেছে।
‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এডিবির বিনিয়োগ ঝুঁকি উন্মোচন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্লেষণ প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন এনজিও ফোরাম অব এডিবির জীবাশ্ম জ্বালানি প্রচারাভিযানকারী শারমিন বৃষ্টি। এতে বলা হয়, ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশে ১০৬টি প্রকল্পে ১৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এডিবি। এর অধিকাংশই জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এডিবির এমন একমুখী বিনিয়োগ নীতির ফলে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ক্রমেই ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এডিবির ৫৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বাংলাদেশে সংস্থাটির বিনিয়োগ নীতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবি জানায় সংগঠন দুটি।
বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এডিবির দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ মডেলের কড়া সমালোচনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এতে বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, তেল-গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে এডিবির বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে এডিবির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি বিবেচনায় না নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ফলে এডিবির ৯ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৬৭টি জ্বালানি প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এটি এশিয়ার বহুজাতিক আর্থিক সংস্থাটির পরিকল্পনা, দক্ষতা এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া সংস্থাটির একাধিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গ্যাস সঞ্চালন লাইন বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এনজিও ফোরাম অন এডিবির নির্বাহী পরিচালক রায়ান হাসান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এডিবি বাংলাদেশে ২ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মোট ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ অর্থায়ন জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রকল্পে, মাত্র আড়াই শতাংশ সৌরবিদ্যুতে। বায়ু বিদ্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো বিনিয়োগ নেই। তিনি বলেন, প্রতি মেগাওয়াটে জীবাশ্ম-জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ ২.০৪ মিলিয়ন ডলার, যেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে তা মাত্র ০.৫১ মিলিয়ন ডলার। এই পরিসংখ্যান এডিবির টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিকে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এডিবির বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে অর্থায়ন বিশ্লেষণ করে ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, এডিবি খুলনায় ২২৫ ও ৮০০ মেগাওয়াটের দুটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছে। অথচ এসব প্রকল্প গ্যাসের অভাবে বছরের পর বছর বসে আছে; জনগণের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে এডিবি এ কাজটি করতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু সংকটের সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ এডিবি এখনো জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন করে চলেছে, যা বাসযোগ্য ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছে। ফলে এডিবিকে অবশ্যই তার জ্বালানি নীতি পরিবর্তন করে শতভাগ নবায়নযোগ্য উৎসের দিকে যেতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিতে এডিবির জ্বালানি নীতি সংস্কার প্রয়োজন। প্যারিস চুক্তির সঙ্গে অর্থায়নকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানিতে এডিবির সব রকমের অর্থায়ন বন্ধ করারও দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।