গেলো বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) ব্যাপক রদবদল ঘটে। প্রেসিডেন্ট পদে আসেন ফারুক আহমেদ। নতুন করে পরিচালক পদে আসেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। বাদ পড়েন নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ডের ১২ পরিচালক।
ফারুকের নেতৃত্বে নতুন বোর্ড ‘নতুনভাবে সংস্কারের’ সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য ফাহিমকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি। কমিটি ইতোমধ্যে সংশোধনীর প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। যেটির খসড়া হাতে পেয়েছে রাইজিংবিডি ডটকম । নতুন প্রস্তাবনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্রিকেট বোর্ডে ‘সরকারের প্রভাব বাড়ছে’।
প্রস্তাবনা খসড়ায় দেখা যাচ্ছে, নতুন করে সংস্কারের লক্ষে কাজ করলেও বোর্ডে কমানো হচ্ছে ঢাকাভিত্তিক ক্রিকেট ক্লাবের কর্তৃত্ব আর বাড়ানো হচ্ছে ‘সরকারের প্রভাব’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের একজন পরিচালক রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এটি বাস্তবায়িত হলে বোর্ডে সরকারের প্রভাব বাড়বে।”
বর্তমানে ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে ১২ জন পরিচালক আসতে পারবেন। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ক্লাব থেকে সেটি কমিয়ে মাত্র ৪ জন পরিচালকে নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ, ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশন, ফার্স্ট ডিভিশন ও থার্ড ডিভিশন ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে মাত্র ৪ জন পরিচালক আসতে পারবেন বোর্ডে।
ক্লাব ক্রিকেটের সংশ্লিষ্টতা কমলেও বাড়ছে ডিভিশন ও ডিসট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রভাব। আগে ১০ জন পরিচালক আসতে পারতেন বিভাগ ও জেলা থেকে। সেটি তিনজন বাড়িয়ে ১৩ করার প্রস্তাব আনা হচ্ছে। প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্রে ঢাকা বিভাগ থেকে একজন বাড়িয়ে তিনজন করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, দুজন করে পরিচালক হবেন চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর। একজন করে থাকবেন বরিশাল ও সিলেট থেকে। রংপুর ও রাজশাহীর পরিচালক সংখ্যা একের পরিবর্তে দুজন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ইন্সটিটিউশন থেকে একজন বাড়িয়ে দুজন করা হচ্ছে। একই থাকছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে। আগের মত বর্তমান সংশোধনীতেও দুজন রাখা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে ২৫ জন পরিচালক থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে ২১-এ। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিভাগ-জেলা, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ইন্সটিটিউশনের ১৭ জন পরিচালকই হবেন সংশ্লিষ্ট সরকারের আস্থাভাজন কেউ। তাতে বোর্ডে বাড়বে ‘সরকারের প্রভাব’ আর কমবে ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট ক্লাবের কর্তৃত্ব।
বিসিবির সাবেক পরিচালক ও আবাহনী ক্লাবের অন্যতম সংগঠক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি রাইজিংবিডি ডটকমকে জানিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্টতা বাড়ার কথা। সঙ্গে তিনি এও বলেন, এটি দেশের ক্রিকেটের জন্য ‘খুব খারাপ’ কিছু হবে।
মুঠোফোনে সাজ্জাদুল আলম বলেন, “উদ্ভট সব চিন্তা-ভাবনা। যারা সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার, ক্লাবগুলো ক্রিকেটের অবকাঠামো ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করে আসছে। এ বছর এটি ১০০ কোটি টাকার কাছে যাবে। ক্লাবগুলোকে যদি এভাবে ধরা হয়, তাহলে তারা আর বিনিয়োগ করবে না।”
“যারা স্টেকহোল্ডার, যাদের অবদান বেশি তারাই পলিসি মেকার হবেন। এমন কেউ না, যারা ক্লাব কিংবা ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট না; তারা পলিসি মেকার হবেন। এটা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ক্রিকেটে ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে। এটা কারা করছেন, কীসের জন্য করছেন, আমরা জানতে পারব এক সময়। এটা ক্রিকেটের জন্য খুবই ক্ষতিকারক হবে। এটাকে প্রতিহত করা উচিত বলে আমি মনে করি।”
শুধু তাই নয়, সংশোধনী কমিটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাজ্জাদুল আলম। ফাহিমের সঙ্গে কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রতিনিধি মো.
“যারা কমিটিতে আছেন, তারা ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোক না। যা খেলোয়াড়, না সংগঠক, না কিছু। তারা হয়ে যাচ্ছেন এখন (ক্রিকেটের) ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। এগুলো মেনে নেওয়া যায় না”— বলেছেন সাজ্জাদুল আলম।
সংশোধনী কমিটি সূত্রে জানা গেছে, দ্রুতই প্রস্তাবিত বিষয়গুলো বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে তোলা হবে। পরবর্তীতে যাবে ইজিএমে। সেখানে কাউন্সিলরদের ভোটে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
বিসিবির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ক্রীড়া সংগঠক রফিকুল ইসলাম বাবু রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আগামী অক্টোবরে নির্বাচনকে ঘিরে যে বাজে একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সরকারই নেওয়ার সাহস পায়নি। আমার ধারণা, ক্লাবগুলোকে প্রতিপক্ষ বানানোর জন্য, দেশের ক্রিকেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য এটি করছে। ২১-এর মধ্যে ১৭ জনই সরকারের লোক থাকবেন। বাকি ক্লাবের চার জনের কোনো মূল্যই থাকবে না।”
সংশোধনী প্রস্তাবনা নিয়ে আজ (১৪ জানুয়ারি) ঢাকার ক্লাবগুলো রাজধানীর একটি হোটেলে বৈঠক করবেন। বৈঠকে তারা বিসিবির এমন প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে কীভাবে কী করা যায়, সে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।
ঢাকা/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৫ যাত্রী নিহত
জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায় ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজিতে থাকা পাঁচ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের কড়োগ্রাম এলাকায় জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- এনাম ফকির, সিএনজি চালক আব্দুর রাজ্জাক, আরিফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল করিম আলাল।
জামালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান জানান, মধুপুর থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী একটি সিএনজি অটোরিকশাকে মধুপুর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুত গতির একটি ট্রাক সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে সিনএজি অটো রিকশায় থাকা ঘটনাস্থলেই চার জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত দুজনকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
উদ্ধারকৃতদের মধ্য এনাম ফকির স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায়। এনামের বাবা আমজাদ ফকির গুরুতর আহত অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে এখান থেকে চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে আইনানুগ প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।”
ঢাকা/শোভন/এস