মাইকেল মধুসূদন দত্তের নিরীক্ষার স্বভাব থেকে তাঁর সাহসের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর অভিনবত্বকে স্বীকার করেই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের পথপরিক্রমায় হাঁটতে হবে। বাংলা কবিতায় ‘ক্ল্যাসিসিজম’ ও ‘রোমান্টিসিজম’–এর সংশ্লেষণ তাঁর মতো আরও কেউ করতে পারেননি। তাঁর সাহিত্যকর্মের আরও নতুন নতুন পাঠ দরকার।

কবি ও নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। সোমবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ। তিনি বলেন, শুধু পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশ নয়, বাংলাভাষী মানুষের চিন্তা ও সৃজনশীলতার ইতিহাসে মাইকেলের অভিনবত্বকে স্বীকার করে নিয়েই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের পথপরিক্রমায় হাঁটতে হবে। প্রতিরোধের মঞ্চে জাতীয় ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে তাঁকে সম্মান ও স্বাগত জানাতে হয়। দুই শ বছর পরেও মাইকেল মধুসূদনকে স্মরণ করা হচ্ছে। এর মানে, তিনি প্রশ্নাতীতভাবে অমর।

কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করে প্রবন্ধকার সুমন সাজ্জাদ বলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্যকর্মের নতুন নতুন পাঠ তেমন একটি হয় না। অথচ তা বিশেষভাবে দরকার ছিল।

সুমন সাজ্জাদ তাঁর ‘বাংলাদেশের মধুসূদন: পাঠ ও পরিগ্রহণের রূপরেখা’ শীর্ষক প্রবন্ধটি সাতটি ভাগে ভাগ করেন। ভাগগুলো হলো  ‘মনের মন্দিরে’, ‘বঙ্গজজনের চোখে’, ‘পঞ্চমুখে পঞ্চজন বিদ্যায়তনের সীমানায়’, ‘অরণ্যে কুসুম ফোটে’, ‘তিষ্ঠ ক্ষণকাল’, ‘রেখ মা দাসেরে মনে’, ‘দাঁড়াও পথিক বর’।

মূল প্রবন্ধ পাঠের পর আলোচনা শুরু হয়। এতে সুমন সাজ্জাদের প্রবন্ধের সূত্র ধরে কবি ও গবেষক ফয়েজ আলম বলেন, মধুসূদনের সময় ও পটভূমি তাঁকে পাঠ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মধুসূদন যখন লিখতে শুরু করেন, তার আগেই রাজনীতির ক্ষেত্রে অনেক বড় পালাবদল ঘটে গিয়েছিল। সে সবের অভিঘাত মধুসূদনের লেখাতেও ছিল। তাই মধুসূদন সাধারণ কোনো মুক্ত পাঠ নয়, তাঁকে পড়ে ভুলে যাওয়া যাবে না।

মধুসূদনকে নিয়ে এখন পর্যন্ত নিয়ে যত বয়ান (ডিসকোর্স) তৈরি হয়েছে, সব বিদ্যায়তনিক ডিসকোর্স বলে মন্তব্য করেন ফয়েজ আলম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, বাংলা কবিতায় ‘ক্ল্যাসিসিজম’ ও ‘রোমান্টিসিজম’র সংবেদনশীলতার সংশ্লেষণ মধুসূদনের মতো আর কেউ তৈরি করতে পারেননি। মধুসূদনকে বোঝার জন্য একটি কৌশল আছে। তা হলো ‘মেঘনাদবধ কাব্য’–এর প্রথম অংশের সব কটি শব্দের অর্থ জেনে নেওয়া। তাহলে তাঁকে পড়তে, বুঝতে সহজ হয়।

বাংলা একাডেমির সচিব মোহা.

নায়েব আলী স্বাগত বক্তব্যে বলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা কবিতার নতুন দিক উন্মোচন করেছেন। কবিতার মতো তাঁর জীবনও ছিল নতুনত্বের অভিলাষী।

আলোচনায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্তের অতুলনীয় প্রতিভা ও সৃষ্টি বিচারের পাশাপাশি তাঁর যাপিত সময় ও সমাজকেও মাথায় রাখতে হবে। মধুসূদনকে নিয়ে তৈরি মিথ তাঁকে বুঝতে সহায়ক নয়, বরং অনেক সময় ভুল ব্যাখ্যার দিকে নিয়ে যায়। কবিতায় নানামাত্রিক রূপরীতির নিরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয় নির্বাচনেও সাহসের পরিচয় দিয়েছেন।

আরও পড়ুনমাইকেলের ২০০ বছর মধুসূদনের পুনর্জন্ম২৬ জানুয়ারি ২০২৪

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে নির্মাণাধীন হ্যাচারিতে চাঁদা দাবি, কাজ বন্ধ

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় একটি নির্মাণাধীন হ্যাচারিতে ‘বিএনপির নেতাকর্মী’ পরিচয়ে চাঁদা দাবি এবং কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর এলাকায় ম্যাক হ্যাচারি (ইউনিট-২) নামের ওই প্রতিষ্ঠানে কয়েক দিন ধরে নির্মাণকাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দেশীয় অস্ত্রসহ একদল যুবক সেখানে গিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কারখানার নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুল বারী জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর আলম (৪০), ইব্রাক একান্ত (২৬), মো. সুমন (৩৮), রাসেল আকন্দ (৩৮), আলিফ আকন্দসহ (২০) ৫০-৬০ জন অজ্ঞাত ‘বিএনপির নেতাকর্মী’ পরিচয়ে চাঁদা দাবি করে নির্মাণকাজে বাধা দেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা মারধর, ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এ সময় শ্রমিকদের বের করে দেওয়া হয়। হামলায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার (২৩ এপ্রিল) শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, দলীয় সমন্বয়ের অভাবে এটা হয়েছে। ছাত্রদলকর্মী সামিউল ইসলাম একাই নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করায় স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে, তারা পরে আলোচনার মাধ্যমে পুনরায় কাজ শুরু করেছেন।

এদিকে, ছাত্রদলের কর্মী সামিউল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি বৈধ কার্যাদেশের ভিত্তিতে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করছেন। অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে বাধা দিচ্ছেন এবং সম্প্রতি চাঁদা দাবি করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে বরমী ইউনিয়ন বিএনপি ও শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি। 

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব জানিয়েছেন, অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/রফিক সরকার/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ