গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যা–সংক্রান্ত অপরাধের বিভিন্ন কল রেকর্ড, সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিও ও বার্তা আদান–প্রদানের মতো ডিজিটাল এভিডেন্স (তথ্য–উপাত্ত) সংগ্রহ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। ডিজিটাল এসব তথ্য–উপাত্ত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মাধ্যমে যাচাইয়ের অনুমতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের এ আবেদন বিচারপতি মো.

গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল সোমবার মঞ্জুর করেছেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের আগে তা যাচাই–বাছাই করার জন্য আবেদন করেছিলেন প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ।

ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে ডিজিটাল তথ্য–উপাত্ত ট্রাইব্যুনালের কাছে উপস্থাপনের আগে ফরেনসিক পরীক্ষা বা যাচাই–বাছাই করতে হয়। সিআইডি সেই পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে থাকে।

শুনানির পর ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন সংস্থা, ব্যক্তি, সোর্স (সূত্র) ও সংবাদমাধ্যম থেকে ডিজিটাল এভিডেন্স সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি ফুটেজ, কল রেকর্ড, মেসেজ (বার্তা) প্রভৃতি। সিআইডিকে এগুলোর ফরেনসিক রিপোর্ট (প্রতিবেদন) দেওয়ার জন্য নির্দেশনা চেয়ে একটি পিটিশন (আবেদন) করা হয়েছিল। যে মামলার সোর্স ধরে পিটিশন করা হয়েছে, সে মামলার আসামি শেখ হাসিনা।

দুই পুলিশ সদস্যকে হাজির করার নির্দেশ

ট্রাইব্যুনালে গতকাল তিনটি আবেদন করা হয়েছিল। যাত্রাবাড়ীর ইমাম হোসেন হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার পুলিশের এসি (সহকারী কমিশনার) তানজিল আহমেদ ও গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে হৃদয় হত্যাকাণ্ডের আসামি পুলিশ কনস্টেবল আকরামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের হাজির করতে পৃথক দুটি আবেদন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে তাঁদের ২০ জানুয়ারি হাজির করার নির্দেশ দেন।

পরে সাংবাদিকদের প্রসিকিউটর এ বি এম সুলতান মাহমুদ বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা শহরে সবচেয়ে বড় একটি ম্যাসাকার (গণহত্যা) হয়েছিল যাত্রাবাড়ীতে। পুলিশের এক সদস্যের ছেলে ইমাম হোসেনকে যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন সরাসরি গুলি করেছেন। এসি তানজিল আহমেদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সরাসরি উপস্থিত থেকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

সুলতান মাহমুদ বলেন, গত ৫ আগস্ট বিকেলে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে একটি দোকানে বসে ছিল কিশোর হৃদয়। তখন পুলিশের ৮–১০ জন সদস্য তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনেন। পেছন থেকে পুলিশের এক সদস্য সরাসরি শটগান দিয়ে গুলি করেন এবং ঘটনাস্থলে হৃদয় মারা যায়। পরবর্তী সময়ে সেই কনস্টেবল আকরামকে গ্রেপ্তার করা হয়। আকরামকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার আবেদন জানানো হয়েছিল।

ট্রাইব্যুনালে আবু সাঈদের পরিবারের অভিযোগ

গণ–অভ্যুত্থানে নিহত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরা ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন। আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এসে এ অভিযোগ করেন।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আবু সাঈদের পরিবার ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে সচিবালয়ে শিক্ষার্থীরা

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে জাতীয় সচিবালয় এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তাঁরা আওয়ামী লীগসহ দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও জুলাই গণহত্যাসহ সব অপকর্মের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।

আজ সোমবার বেলা ২টার পর শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিতে শুরু করেন। তবে সচিবালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকায় পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরে যেতে অনুরোধ জানালে শিক্ষার্থীরা রাস্তার বিপরীত পাশে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।

অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীদের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল আইন উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে সচিবালয়ে প্রবেশ করেছেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। দলে আরও রয়েছেন সাদিক আল আরমান, রাফিদ এম ভুইয়া, সালেহ মাহমুদ রায়হান এবং মাসুদ রানা।

স্মারকলিপি দিতে সচিবালয়ে প্রবেশের আগে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এর আগে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও চিকিৎসার দাবি জানিয়েছি। আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরের সব অপকর্মের বিচার চেয়েছি। কিন্তু, সরকার কর্ণপাত করেনি। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চান না, এটিকে সমীচীন মনে করেন না। সর্বশেষ ফরমাল প্রক্রিয়া হিসেবে আমরা স্মারকলিপি নিয়ে এসেছি। এরপরও দাবি আদায় না হলে আমরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব।’


মোসাদ্দিক জানান, তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন এলাকার গ্রুপকে এক করার চেষ্টা করা হয়েছে। আন্দোলন শুরু করার প্রক্রিয়া হিসেবে স্মারকলিপি নিয়ে আসা হয়েছে। দাবি মেনে না নিলে শিগগিরই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন সপ্তাহের মধ্যে আজহারের মুক্তি ও সব মামলা প্রত্যাহার না হলে মাঠে নামবে শিবির
  • পোপ ফ্রান্সিসের শেষ আহ্বান কেউ কি শুনবেন
  • জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদ
  • চানখাঁরপুলে গণহত্যার মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য ২৫ মে তারিখ ধার্য
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩৯ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি
  • আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি
  • ৯০ দিনের মধ্যে গণহত্যার বিচার ও অবিলম্বে আ.লীগের নিবন্ধন বাতিল দাবি
  • আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপে সন্তুষ্ট নন শিক্ষার্থীরা
  • আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে সচিবালয়ে শিক্ষার্থীরা
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৩৩