বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে ভাড়া তোলার অভিযোগ উঠেছে।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাঢ়ীয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা উত্তোলন করে আসছেন। তাঁর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকর্মীর প্রায় ৩৫টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। 
জানা যায়, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রউফের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তাঁর লোকজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। সে সময় এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলার আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে যান। শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুল হালিমের রেস্টুরেন্ট, শাহ আলমের ভাতের হোটেল, শহর আলীর ওষুধের দোকান, আহসান উল্লাহর দোকান, জসিম উদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। পরে তারা মেঘনা গ্রুপের সিরামিক কারখানার সামনে সওজের জমি দখল করে ১৩টি দোকান নির্মাণ করে। ওই দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা হোটেল ও চায়ের দোকান গড়ে তোলে। এসব দোকানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে দৈনিক ও মাসভিত্তিক ভাড়া উত্তোলন করছেন আব্দুর রউফ। একটি দোকানে তাঁর ভগ্নিপতি মনির হোসেনও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সেখানে সোনারগাঁ থানা বিএনপির একটি আধাপাকা কার্যালয়ও নির্মাণ করছেন রউফ।
এলাকাবাসী জানান, বিএনপি নেতা রউফের নির্দেশে তাঁর ছোট ভাই জলিল এবং ভাগনে আজিজ ও সেলিমের নেতৃত্বে এসব কাজ হয়ে থাকে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের যানবাহন থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গেও তারা যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। 
রউফের ভগ্নিপতি রেস্টুরেন্ট মালিক মনির হোসেন বলেন, রউফ দোকান নির্মাণ করে তাঁকে ব্যবসা করতে দিয়েছেন। তিনি ইজারা নেননি জানিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে এভাবেই ব্যবসা করছে মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, বিএনপি নেতা রউফ গ্যাসের বিলসহ দৈনিক ৫০০ টাকা করে তাদের কাছ থেকে আদায় করে থাকেন। এখানে ১৩টি দোকান রয়েছে। কেউ দৈনিক, কেউ মাসভিত্তিক ভাড়া দিয়ে থাকেন। অবৈধ হলেও গ্যাস পাওয়ায় তাদের ভালো হয়েছে। এ স্ট্যান্ডের দোকানগুলো ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে আড়াই লাখ টাকা তোলা হয়। 
অভিযুক্ত সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রউফ বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোনো জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করিনি। জায়গা খালি থাকায় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। গ্যাস সংযোগ দিয়ে ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের মেঘনা ঘাট জোনের ম্যানেজার প্রকৌশলী সুরজিত কুমার সাহা বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে তারা ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছেন। অনুমতি পেলেই অভিযান চালানো হবে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আলরাজী লিয়ন বলেন, দেশের পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হারে সওজের জমি দখল হয়েছে। শিগগির কাঁচপুর থেকে মেঘনাঘাট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সওজের জমি দখল করে দেয়াল

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমির দেয়াল নির্মাণ করে দখল করা হয়েছে। এতে সড়কটি সংকুচিত হয়ে পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।

উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের জাইদেরগাঁও এলাকায় ডিপলেড ওয়্যার ল্যাবরেটরি লিমিটেড নামের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। দখল হওয়া জমি উদ্ধারের জন্য গত মঙ্গলবার এলাকাবাসীর পক্ষে এস এম জামালউদ্দিন আহম্মেদ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

প্রকৌশলীর কাছে দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, ডিপলেড ওয়্যার ল্যাবরেটরি সওজের ওই জমিতে দেয়াল নির্মাণের পর বালু ভরাটের পাঁয়তারা শুরু করেছে। এ ছাড়া তাদের দখল করা সওজের জমিসহ বাংলা ফুড নামের একটি কোম্পানির জমির বিরোধ নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলা ফুডের পক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা হলে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালত সেখানে স্থাপনা নির্মাণে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এর বিপরীতে নারায়ণগঞ্জের দ্বিতীয় যুগ্ম জজ আদালতে আরেকটি দেওয়ানি মামলা করে ডিপলেড ওয়্যার ল্যাবরেটরি। ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর সেখানে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন আদালত। সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) এ আদেশ তামিল করার নির্দেশও দেন আদালত। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত ২৩ নভেম্বর বিবাদী লায়ন মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান নান্নু ও তাঁর ভাই আবদুল লতিফ মিয়া ওই জমিসহ সওজের জমি দখল করে দেয়াল নির্মাণ করেন।

এলাকাবাসী জানান, দখল করে দেয়াল নির্মাণ করা জমিটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণ করা জমির পাশের  রাস্তা নিয়ে চার গ্রামের মানুষ চলাচল করে। ওই জমিতে দেয়াল নির্মাণ করার কারণে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুত দেয়াল উচ্ছেদ করে মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জাইদেরগাঁও গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, রাস্তা খুঁড়ে কোম্পানি দেয়াল নির্মাণ করায় তাদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। গাড়ি নিয়ে এ রাস্তায় চলাচল করা যায় না। দেয়াল নির্মাণ করায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে।

মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মামুন মিয়া বলেন, সওজের জায়গা দখল করার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কোম্পানি দখল করে থাকলে উচ্ছেদে সহযোগিতা করা হবে।

ডিপলেড ওয়্যার ল্যাবরেটরি লিমিটেডের পরিচালক আবদুল লতিফ বলেন, তারা নিজেদের জমিতেই দেয়াল নির্মাণ করেছেন। সওজের জমি দেয়ালের বাইরে রাখা হয়েছে। সওজ মাপজোখ করলেই তাদের জমি পাওয়া যাবে।

সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল বারী বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা জমিতে দেয়াল নির্মাণের সময় পুলিশ বাধা দিয়েছিল। পরে তারা দেয়াল নির্মাণ করে ফেলে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ উচ্ছেদ করার সময় পুলিশের সহযোগিতা পাবে। 

সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। আগের এসিল্যান্ডের কাছে আদালতের নির্দেশনা তামিল করার চিঠি আসতে পারে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ নারায়ণগঞ্জের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আল রাজী লিয়ন বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সওজের জমি দখল করে দেয়াল