গুলিতে ঝাঁজরা পায়ুপথ। অস্ত্রোপচার হলেও স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না তাঁর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গ। চিকিৎসক বাইপাস করে লাগিয়ে দিয়েছেন কলোস্টমি ব্যাগ। সেটি দিয়েই আপাতত মলত্যাগ করতে হচ্ছে তাঁকে। পায়ুপথসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের গভীরে চলে যাওয়ায় বের করা যায়নি গুলি। থেকে থেকে ব্যথায় ছটফট করছেন তিনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গুলিবিদ্ধ মেহেদী হাসান এভাবেই যন্ত্রণার সময় পাড়ি দিচ্ছেন।
তাঁর এই কষ্ট আরও বাড়িয়েছে আর্থিক অনটন। আহত হওয়ার এতদিন পরও তাঁর কপালে জোটেনি জুলাই ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা। চট্টগ্রামে এসে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সহায়তার আশ্বাস দিলেও তাও মেলেনি। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, সহায়তা না পাওয়ায় ধারদেনা করে মেহেদীর চিকিৎসা চালাতে গিয়ে এরই মধ্যে খরচা হয়ে গেছে দেড় লাখ টাকার বেশি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার দিন রক্তাক্ত হন ২৫ বছর বয়সী মেহেদী। ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে অংশ নিতে চট্টগ্রাম নগরের মনসুরাবাদের পুলিশ লাইন্স এলাকায় যান তিনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পায়ুপথ, ঊরুসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলি লাগে তাঁর। লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। নানা দুর্ভোগ পেরিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছান মেহেদী। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে থাকতে হয় তাঁকে। কারণ, ভয়াবহ দিনটিতে তাঁর মতো গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেকে হাসপাতালে এসেছিলেন। দুর্বিষহ সেই দিনটির নানা স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মেহেদীকে।
মেহেদী চট্টগ্রাম নগরের মনসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা। পেশায় তিনি প্রাইভেটকারের চালক। তাঁর বাবা জসিম উদ্দিন একটি ভবনের কেয়ারটেকার, মা লিপি আক্তার গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় মেহেদী।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাঁচ মাস পরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি তিনি। চমেক হাসপাতালের শয্যায় অজানা এক ভবিষ্যৎ নিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে মেহেদীকে। তাঁর কেবিনে ঢুকতেই হাসপাতালের এক কর্মকর্তা মেহেদীকে নিয়ে বলেন, ‘ছেলেটা ১৬ নম্বর কেবিনে আছে। বদ্ধ রুমে খুব কষ্টে দিন কাটছে।’
মেহেদী হাসান বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছেন, পায়ুপথ স্বাভাবিক করতে আরও নাকি অস্ত্রোপচার লাগবে।’ ঘটনার দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আগস্ট বিকেল প্রায় ৫টা। পুলিশ লাইন্সের সামনে গিয়ে দেখি, বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়া হচ্ছে। ছোড়া হচ্ছে ইট-পাথরও। আমার চারপাশে গুলিবিদ্ধ অনেককে ছটফট করতে দেখি। ভয়ে এক পর্যায়ে একটি গাড়ির পেছনে লুকিয়ে পড়ি। হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে পায়ুপথে। আরেকটি গুলি এসে লাগে ঊরুতে। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলাম।’
মেহেদী বলেন, ‘হাসপাতালে আনার অনেকক্ষণ পর ডাক্তারের দেখা মিললেও জোটেনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা। পরদিন ডাক্তাররা জানান, পায়ুপথের অবস্থা খুবই খারাপ, তাই এখানে চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব; নিতে হবে ঢাকায়। চিকিৎসার সামর্থ্য না থাকায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছি না, দুর্ভাগ্য।’
আর্থিক সহায়তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের বদ্ধ পরিবেশে প্রতিটি সেকেন্ড, দিন কীভাবে পার করছি তা শুধু আমি আর আল্লাহ জানেন। এতদিন ধরে শয্যাশায়ী থাকলেও কারও কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাইনি।’
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘মেহেদীকে সুস্থ করে তুলতে আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছি। তার জন্য মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে।’ অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেওয়া চমেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের ইট খোয়া, স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা
নিম্নমানের ইট, খোয়া ও বালু ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দী-শৈলেরকান্দা সড়ক পাকাকরণে এ অনিয়ম চলছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে নরুন্দী-শৈলেরকান্দা সড়কের ১ হাজার ৩০০ মিটার পাকা করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগেও এই সড়কের একাংশের কাজ হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে। ফলে দুই মাস না যেতেই সড়কটি ভেঙে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সে সময় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এলজিইডির কাছে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার মেলেনি।
জামালপুর এলজিইডি দপ্তরের তথ্যমতে, সদর উপজেলার নরুন্দী-শৈলেরকান্দা সড়কের মহিশুড়া শহীদের বাড়ি থেকে শৈলেরকান্দা বেপারির খামার পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ মিটার পাকা করার কাজ শুরু হয় গত জানুয়ারি মাসে। ৩৫ লাখ টাকার কাজটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে এস ট্রেডিংকে। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার নিজে কাজ না করে তা বিক্রি করে দেন আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছে। সরেজমিন দেখা যায়, এ কাজে অত্যন্ত নিম্নমানের ইট, খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাস্তার কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ইট ও খোয়ার মান যাচাই না করেই রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে অল্প দিনের মধ্যেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যাবে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই রাস্তার কাজ তদারকিতে জামালপুর সদর উপজেলার এলজিইডির কর্মকর্তাদের গাফিলতি রয়েছে।
নরুন্দী ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হারুন-অর-রশীদের ভাষ্য, গত বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটার পাকা করার দুই মাসের মধ্যেই ভেঙে যায়। এতে এই সড়কে যাতায়াতকারী মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। বর্তমানে যে কাজ হচ্ছে, তা আরও খারাপ। ফলে এই সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
কাজ তদারকি কর্মকর্তা এলজিইডি সদর উপজেলার নকশাকার উপসহকারী প্রকৌশলী ইলিয়াস উদ্দিন। অভিযোগ রয়েছে, এই কর্মকর্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে কাজ করায় তাঁর তদারকিতে কোনো কাজই মানসম্মত হয় না। বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে একজন সৎ ও দক্ষ প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
এলজিইডির জামালপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী আক্রাম হোসেন তালুকদারের ভাষ্য, রাস্তায় আগে ব্যবহৃত ইট-খোয়া ব্যবহারের নিয়ম আছে। সেগুলো দিয়ে কাজ চলছে। এখনও নতুন ইট-খোয়ার কাজ শুরু হয়নি। তবে যেভাবে কাজ করলে রাস্তাটি টেকসই হবে, সেভাবেই করা হবে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রোজদিদ আহম্মেদ সমকালকে বলেন, তিনি এই জেলায় নতুন এসেছেন। তাই এখনও সবকিছুর খোঁজখবর ঠিকমতো নিতে পারেননি। তাঁর ভাষ্য, তিনি এসেছেন কাজ করতে, কোনো দুর্নীতিবাজকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে নয়। যে ক’দিন থাকবেন, শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যাবেন। এই রাস্তার খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মূল ঠিকাদার ও সাবঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোনকল রিসিভ করেননি।