শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত, তবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার গেল ২২ ডিসেম্বর ৭ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছিল। ১৫ কর্মদিবস পর গতকাল সোমবার  কেনাবেচা হয়েছে ১৫ টাকা ৭০ পয়সায়। এ সময়ে দর বেড়েছে ১২৫ শতাংশ। শুধু দর বাড়ছে বললে ভুল হবে, সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে একদিনে খুলনা প্রিন্টিংয়ের দর যতটুকু বৃদ্ধির সুযোগ ছিল, গতকাল ততটুকু বেড়েছে। যাদের হাতে শেয়ার রয়েছে, তারা এখনই শেয়ার হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না, কারণ আরও মুনাফা পাওয়ার আশা দেখছেন। ফলে বিক্রেতাশূন্য দেখা যাচ্ছে এ শেয়ারের ক্ষেত্রে।  মুন্নু ফেব্রিক্স নামের কোম্পানির ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। এ কোম্পানির গত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ১ শতাংশ বা মাত্র ১০ পয়সা করে লভ্যাংশ দিয়েছিল।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তালিকাভুক্ত খুলনা প্রিন্টিং কোম্পানিকে জেড ক্যাটেগরি বা রুগ্‌ণ কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে। ২০২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জটি কোম্পানিটির কারখানা ও অফিস বন্ধ পেয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত সে অবস্থায় আছে। অবস্থা এমনই যে, কোম্পানির শেয়ারদর কেন বাড়ছে– এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতোও কোম্পানিটিতে কেউ নেই। এ খবরও ওয়েবসাইটে জানিয়েছে ডিএসই। 

তার পরও কিছু বিনিয়োগকারী খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার কিনছেন। ফলে এর দরও বাড়ছে। শুধু এই কোম্পানি নয়, কিছুদিন ধরে এমন কিছু শেয়ারের দর বাড়ছে, যার অধিকাংশ পেনি স্টক বা স্বল্প মূল্যের শেয়ার। কারসাজির কারণে বিতর্কিত কয়েকটি শেয়ারও একই ধারায় রয়েছে।

নতুন বছরে এখন পর্যন্ত ৯ কর্মদিবসে ১০ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত দর বেড়েছে ২২ কোম্পানির শেয়ারের। এর মধ্যে পেনি স্টক ৯টি, বিতর্কিত কোম্পানির শেয়ার আরও আছে সাত থেকে আটটি। 
পেনি স্টকগুলোর তালিকায় খুলনা প্রিন্টিং ছাড়াও আছে এফএএস ফাইন্যান্স, ইয়াকিন পলিমার, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, জাহীন স্পিনিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, অলটেক্স এবং অলিম্পিক এক্সেসরিজ। এ ছাড়া যেসব বিতর্কিত শেয়ারের দর বেড়েছে, সেগুলোর অন্যতম খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ, আমান ফিড, হামি, ঢাকা ডাইং, মিথুন নিটিং, জিকিউ বলপেন, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন।

শুধু নতুন বছরে দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা শেয়ারগুলোর মধ্যে ৩৬ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়ে খান ব্রাদার্স পিপির শেয়ার ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে। সর্বশেষ ১৮৯ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে এ শেয়ার। এ ছাড়া ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ দর বেড়েছে আমান ফিড, হামি (সাবেক ইমাম বাটন), এফএএস ফাইন্যান্স, ইয়াকিন পলিমার, ঢাকা ডাইং এবং ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের শেয়ার।
পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, নতুন বছরে এখন পর্যন্ত সাত কর্মদিবসে কমপক্ষে ১ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে ২৫৬ কোম্পানির শেয়ার। বিপরীতে ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ দর বেড়েছে ৭২ শেয়ারের। এই ৭২ শেয়ারের ২৬টিই পেনি স্টক। বাকি ৬৯টির ১ শতাংশ বৃদ্ধি থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত পতন হয়েছে। 

বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেয়ারবাজার যখন নিম্নমুখী ধারায় থাকে, তখন ভালো শেয়ারের ক্রেতা  কম থাকে। এ সময় কিছু ব্যক্তি যেসব শেয়ারের ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার কম থাকে বা খুবই কম দামি, সেগুলোর দর বাড়ানোর চেষ্টা করে। তারা কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগাম জেনে এবং তাতে রং চড়িয়ে প্রচার করে, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হন। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা। 

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন জানান, এটা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বহু বছরের পুরোনো ধারা। যখন ভালো শেয়ারের কদর থাকে না, তখন মন্দ শেয়ারের দাম বাড়ে। তিনি বলেন, কারসাজির একটি গ্রুপ আছে, যারা বাজার মন্দার সময় এ ধরনের শেয়ার নানা প্রক্রিয়ায় বাড়ানোর চেষ্টা করে। পতনের বাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাও শিথিলভাবে বাজার নজরদারি করে। এ সুযোগটাই কারসাজির চক্রগুলো নিয়ে থাকে। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ