সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিলে দূর হয়েছে ভিটা হারানোর শঙ্কা
Published: 13th, January 2025 GMT
মৌলভীবাজারে জুড়ী উপজেলায় বনের জমিতে লুটপাটের প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক হচ্ছে না। এ প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্তে রক্ষা পেয়েছে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ। একই সঙ্গে কয়েকশ পরিবারের বাস্তুভিটা হারানোর শঙ্কাও দূর হয়েছে।
জানা যায়, ১৯২০ সালে তৎকালীন সরকার লাঠিটিলাকে পাথারিয়া হিল রেঞ্জের আওতায় নিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে। গত আওয়ামী লীগ সরকার জুড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫ হাজার ৬৩১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বনাঞ্চলের জায়গায় সাফারি পার্ক স্থাপনের কারিগর ছিলেন তৎকালীন সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। তিনি ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই বনে সাফারি পার্ক নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প ব্যয় হিসেবে ৩৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দও হয়।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ওই প্রকল্পের কাজ শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রকল্পের বরাদ্দও বেড়ে যায় ৮৭০ কোটি ৯০ লাখ টাকায়। আওয়ামী লীগ সরকারের এ সিদ্ধান্তে লাঠিটিলা বনাঞ্চল এলাকায় বসবাস করা ৪ শতাধিক পরিবারের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রকল্পের কারণে হুমকির মুখে পড়ে অর্ধশতাধিক বছরের পুরোনো সেগুন বাগান, আগর বাগানসহ বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের জমির মধ্যে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক স্থাপন বাতিলের উদ্যোগ নেয়। গত ২৩ ডিসেম্বর বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া জানান, লাঠিটিলা বন ইন্দো-মিয়ানমার জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের অংশ। এটি বন্য হাতি চলাচলের একমাত্র করিডোর হিসেবে দেশে বেশ পরিচিত। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বনাঞ্চল রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি এলাকার জীববৈচিত্র্য ও মানুষের বসতভিটা রক্ষা পাবে।
বনাঞ্চলে সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য আ.
বড়লেখা-জুড়ীর বাসিন্দা মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু বলেন, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের নামে সংরক্ষিত বন ধ্বংস করে লুটপাটের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক মন্ত্রী। এতে বাস্তুভিটা হারানোর শঙ্কা থেকে রেহাই পেয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বনখেকোদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে বনাঞ্চল। তিনি আরও জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ পেলে সাবেক পরিবেশমন্ত্রী, তাঁর ছেলে ও ভাগনে আরও কয়েকশ কোটি টাকা লুটপাট করার সুযোগ পেত।
বন বিভাগের জুড়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন সমকালকে বলেন, লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সাফারি পার্ক স্থাপনের প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের প্রথম নারী ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু
বাংলাদেশ প্রথম নির্বাচিত নারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট চন্দনা গ্রামের বাসিন্দা শামসুন্নাহার চৌধুরী মারা গেছেন।
শুক্রবার আছর নামাজের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, সন্তানসহ আত্মীয়স্বজন ছাড়াও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সিঙ্গাপুর, ভারতসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহেরের স্ত্রী তিনি।
তিনি চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী ও দেওরগাছ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩ বার চেয়ারম্যান নির্বাহিত হন। এরমধ্যে ১৯৮৮ সালে প্রথম মিরাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সারা দেশে তখন তিনিই ছিলেন প্রথম নারী ইউপি চেয়ারম্যান। সেই থেকে রাজনীতিতে জড়ান। ১৯৯৩ সালে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
শামছুন্নাহার চৌধুরী ৩ বার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নানা সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন। পেয়েছেন অতিশ দীপঙ্কর জয়িতাসহ নানা পুরস্কার। হয়েছেন জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান। কাজ করেছেন নারী উন্নয়নে।
তার মৃত্যুতে সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে।