৩ জানুয়ারি জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক ও ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারোট সিরিয়ার অন্তর্বর্তী নেতা আহমেদ আল-শারার সঙ্গে দেখা করতে দামেস্কে যান। আরব বিশ্বের অন্যতম সহিংসতাপ্রিয় সরকার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাথিস্ট একনায়কত্বের আকস্মিক পতনের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এই সফর হলো। 

সিরিয়া-ইউরোপ সম্পর্কের আলোচ্য সূচিতে অগণিত বিষয় রয়েছে। আলোচনা অন্তত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, যুদ্ধোত্তর ন্যায়বিচার ও পুনর্মিলন, শরণার্থী সংকট ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নেই। তবুও বেয়ারবকের সঙ্গে হাতে হাত মেলানোর পরিবর্তে মুসলিম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আল-শারার মাথা নাড়িয়ে অভিবাদন জানানোর বিষয়কেই পশ্চিমা মিডিয়া বড় খবর হিসেবে বেছে নিয়েছে। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের পণ্ডিতরা এই ঘটনাকে ‘কেলেঙ্কারি’ ও ‘অপমানজনক’ বলে চিহ্নিত করেছেন।

পলিটিকোর এক সম্পাদকীয় এতদূর পর্যন্ত পরামর্শ দিয়েছে, করমর্দন তথা হাতে হাত লাগানো খুব বড় বিষয় না হলেও, সেটাই একজন মুসলিম নেতা আসলে কতটা ‘মধ্যপন্থি’ তার ‘লিটমাস টেস্ট’ হতে পারে। অন্তর্ভুক্তির নামে পলিটিকোর এ লেখাটি ধর্মীয় রীতি যাই বলুক, আল-শারার মতো ধর্মপ্রাণ মুসলিম পুরুষ নেতাদের নারীদের সঙ্গে নির্বিশেষে হাত মেলাতে বাধ্য করা উচিত বলে মত দিয়েছে। অন্যথায়, এটি পশ্চিমের ‘অশনিসংকেত’ হিসেবে দেখা উচিত। পুরোনো প্রবাদে বলা হতো– ‘রোমে থাকাকালীন রোমানদের মতো থাকুন’। বর্তমানে তা হয়েছে– ‘সিরিয়ায় থাকাকালীন জার্মান ও ফরাসিদের মতো আচরণ করুন।’ একজন সিরীয় আমেরিকান হিসেবে যার বাবা সিরিয়া থেকে ৪৬ বছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিল এবং যার পারিবারিক বন্ধুরা আল-আসাদ সরকার দ্বারা নির্যাতিত এবং নিহত হয়েছে, আমি সেই আরব নেতৃত্বের জন্য তৈরি পশ্চিমা ‘লিটমাস টেস্ট’-এর মধ্যে স্ববিরোধ ও আক্রমণাত্মক কিছু খুঁজে পেয়েছি।

মিডিয়ার এ ক্ষোভ কোথায় ছিল, যখন ব্রিটিশ রাজকীয় প্রিন্স এডওয়ার্ড ব্যাখ্যা করেছিলেন, তিনি সাধারণ ব্রিটিশদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে অশারীরিক যোগাযোগ পছন্দ করেন? ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার বলে কোনো কিছুকে উদার হয়ে বিবেচনা করা এবং ধর্মীয় বিষয় হলে তার বিরুদ্ধে রাগ দেখানো কি আমাদের উচিত?

এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে, পশ্চিমা মিডিয়া মুসলিম আরব নেতাদের ‘মধ্যপন্থি’ সার্টিফিকেট দিতে নতুন লিটমাস টেস্ট ঠিক করতে গিয়ে পশ্চিমা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। গত কয়েক দশক ধরেই তারা তা করছে। নৃতাত্ত্বিক লিলা আবু-লুঘোদ তাঁর ‘মুসলিম মহিলাদের কি সুরক্ষা প্রয়োজন’ বইতে যুক্তি দিয়েছেন, পশ্চিমের একটি ধারণা হলো, ‘উদার সংস্কৃতির একটা সাংস্কৃতিক আদর্শ থাকবে এবং এটি সর্বজনীন মানদণ্ড হিসেবে থাকা উচিত, যার দ্বারা সমাজগুলোর অবস্থান বিচার করা যায়। আর যারা এই দরজার বাইরে পড়বে, তারা বর্বর বলে চিহ্নিত হবে।’ ‘চরম’ হিসেবে মুসলিম ধর্মীয় রীতিনীতিকে চরিত্রায়ণ একটি আধিপত্যবাদী বয়ানের লক্ষণ, যার দ্বারা পশ্চিমা নিয়মকে সর্বজনীনতার মুখোশ পরানো হয়। যারা এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ধারণ ও লালন করেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ হলো, পশ্চিমা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ততটা প্রভাবশালী নয়, যতটা তারা কল্পনা করতে চান। মুসলিম ও আরবদেরও কর্তাসত্তা রয়েছে। এটি হলো পশ্চিমের প্রভাবশালী সাংস্কৃতিক চিন্তাভাবনা অস্বীকার করার পরও তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ পালন করার কর্তাসত্তা। 

সিরিয়াবাসীকে ৬১ বছর ধরে কর্তৃত্ববাদী বাথিস্ট শাসনের অধীনে নৃশংস দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে আল-শারার পোশাক বা ব্যক্তিগত আচার-ব্যবহারের মতো তুচ্ছ বিষয়গুলোর ওপর মিডিয়ার অতিরিক্ত জোর দেওয়া নতুন কিছু নয়। 

নতুন নেতৃত্বের মূল্যায়নে সিরিয়াবাসীর নিজস্ব ‘লিটমাস টেস্ট’ রয়েছে। যেমন গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা জোরদার করা, বেসামরিক অবকাঠামো পুনরুদ্ধার ও উন্নত করা, সিরিয়ানদের একত্রিত করা ও সাংবিধানিক অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া; সরকারের পুরুষ সদস্যরা নারীদের সঙ্গে হাত মেলাবেন কিনা তা নয়। সবচেয়ে জরুরি হলো, সিরীয়বাসী তাদের নতুন নেতৃত্বে দেশকে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। পশ্চিমা মিডিয়া যদি সিরিয়াকে সঠিক পেতে চায়, তবে তাদের নিজেদের চেহারা দেখতে হবে। আর স্বীকৃতি দিতে হবে, কীভাবে তাদের বক্তৃতা ও ধ্যান-ধারণা কয়েক দশকের আধিপত্যবাদী পক্ষপাত দ্বারা রূপান্তরিত হয়েছে। আরব নেতাদের ওপর পশ্চিমা ‘লিটমাস টেস্ট’ চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে সিরিয়াবাসীকে জিজ্ঞেস করা উচিত, তারা তাদের নেতৃত্বে কী চায়।

হাদিয়া মুবারক: কুইন্স ইউনিভার্সিটি অব শার্লটের ধর্মবিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক; আলজাজিরা থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

জামালপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৫ যাত্রী নিহত

জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায় ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজিতে থাকা পাঁচ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের কড়োগ্রাম এলাকায় জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- এনাম ফকির, সিএনজি চালক আব্দুর রাজ্জাক, আরিফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল করিম আলাল।

জামালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান জানান, মধুপুর থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী একটি সিএনজি অটোরিকশাকে মধুপুর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুত গতির একটি ট্রাক সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে সিনএজি অটো রিকশায় থাকা ঘটনাস্থলেই চার জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত দুজনকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। 

উদ্ধারকৃতদের মধ্য এনাম ফকির স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায়। এনামের বাবা আমজাদ ফকির গুরুতর আহত অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. লুৎফর রহমান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে এখান থেকে চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে আইনানুগ প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।”

ঢাকা/শোভন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শুধু নারী নয়, পুরুষরাও যৌন হয়রানির শিকার হয়: প্রিয়াঙ্কা
  • বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লির মৃত্যু 
  • গায়িকা-অভিনেত্রী মারিয়ান ফেইথফুল আর নেই
  • সাইফুল-সাজ্জাদে তটস্থ চট্টগ্রামের ৫ থানার পুলিশ
  • কামরুল হাসানের কাছে শিল্প ধরা দিয়েছিল
  • ‘আমার চিত্রকর সত্তার মৃত্যু ঘটিয়েছি’
  • ‘রেখাচিত্রকে অবহেলা করা উচিত নয়’
  • অনুষ্ঠানে প্রবেশে নারী সাংবাদিককে ‘বাধা’, যা হয়েছিল সেদিন
  • যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজ-হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় বেঁচে নেই কেউ
  • জামালপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৫ যাত্রী নিহত