চল্লিশোর্ধ্ব এক ভদ্রমহিলা কয়েক দিন আগে চেম্বারে কানের চিকিৎসা নিতে আসেন। সমস্যা কী হয় প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে কানে অসহ্য চুলকানি হচ্ছে এবং কান বন্ধ হয়ে আছে। আজ থেকে ডান কানে প্রচণ্ড ব্যথা করছে এবং পানির মতো কালো ময়লা কানের ভেতর থেকে বেরুচ্ছে, যা আগে কোনো দিন বের হয়নি। ভদ্রমহিলা আরও যোগ করলেন, তিনি একজন ডায়াবেটিক রোগী। রোগীর আক্রান্ত কান পরীক্ষা করে দেখা গেল, কানে ছত্রাক সংক্রমণ অটোমাইকোসিস হয়েছে।
অটোমাইকোসিস নামক কানের রোগের পেছনে কোন ধরনের জীবাণু দায়ী?
কানের এ ধরনের চুলকানি হয় ছত্রাকজাতীয় জীবাণুর সংক্রমণ থেকে। এদের মধ্যে অ্যাসপারজিলাস নাইজার দায়ী ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ, যেখানে কালো ময়লার মতো ফাঙ্গাশের দলা কানে জমা হয় এবং ক্যানডিডা অ্যালবিকানস দায়ী ১০ থেকে ২০ শতাংশ; এ ক্ষেত্রে যেখানে ভেজা পত্রিকার পাতার মতো সাদা দলা কানের ভেতরে দেখা যায়।
কানের ছত্রাক রোগ অটোমাইকোসিসে আক্রান্ত হলে রোগীরা কী কী সমস্যা নিয়ে আসেন?
lঅতিরিক্ত চুলকানির সঙ্গে কানে অস্বস্তি।
l কানে অসহ্য ব্যথা (যদি এর সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ যুক্ত হয়)।
l কানের ভেতর কিছু জমা হয়ে বন্ধ হয়ে আছে এমন অনুভূতি। কান ভারী ভারী লাগতে পারে।
l কান থেকে ধূসর, হলুদ বা সাদা রঙের তরল পদার্থ বেরিয়ে আসতে পারে।
lকানে শুনতে সমস্যা হওয়া।
কাদের ক্ষেত্রে কানের এ সমস্যা হয়ে থাকে?
l রোগটি তাদেরই বেশি হয়, যারা কোনো কারণবশত দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন। অথবা কান পাকা রোগের কারণে অনেক দিন ধরে স্টেরয়েড-সংবলিত কানের জীবাণুনাশক ড্রপ ব্যবহার করে থাকেন।
l ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব রয়েছে।
l রোগটি আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। কারণ এখানকার আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র। এ ধরনের পরিবেশ ছত্রাকের জন্য অনুকূল।
l কান পরিষ্কারের নামে যারা ঘন ঘন পরম আয়েশে কানে কটনবাড দিয়ে কান থেকে যাবতীয় ময়লা বের করে আনার চেষ্টা চালাতে থাকেন।
l রাস্তায়, ফুটপাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যারা কান পরিষ্কার করেন, তারাও অটোমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
চিকিৎসা
রোগীরা কানের উল্লিখিত সমস্যা নিয়ে এলে নাক-কান-গলার চিকিৎসকরা কারণ জানতে একটা অটোস্কোপ (কানের ভেতরটা পরীক্ষা করার যন্ত্র) ব্যবহার করে কানের পরীক্ষা করে থাকেন। কানের রোগ নির্ণয়ের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসার ধরন। অটোমাইকোসিস হলে চেম্বারে মাইক্রোইয়ার সাকার মেশিনের সাহায্যে অথবা ড্রাই মপিংয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে কানের ভেতর থেকে ছত্রাকের দলা বের করে এনে কান শুকনা করেন।
lতারপর বাজারে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রকমের ছত্রাকরোধী মলম বা ড্রপ পাওয়া যায়; সেগুলো রোগের ধরন দেখে দিয়ে থাকেন। পুরো মাত্রায় পুরো মেয়াদে যথাযথভাবে ওষুধ ব্যবহার করলে পুরোপুরি রোগমুক্ত হওয়া সম্ভব।
lকানে চুলকানি কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন থেকে সঠিক ওষুধটি বেছে নিতে হবে।
lএ ছাড়া কানে যদি ব্যথা শুরু হয়, তা হলে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসা করণীয় হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। সঙ্গে প্রয়োজনবোধে ব্যথানাশক দেওয়া হয়ে থাকে।
lএর পাশাপাশি রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে তার যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
lওষুধ ব্যবহার শেষে শিডিউল অনুযায়ী ফের কান পরীক্ষা করাতে হবে।
জটিলতা প্রতিরোধে চাই সতর্কতা
কান চুলকানির এ সমস্যা খুব সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা না করলে কানের পর্দায় অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অটোমাইকোসিস রোগটি যদিও বহিঃকর্ণের; কিন্তু কান পাকা রোগীদের কানেও এই জীবাণু দিয়ে মিশ্র সংক্রমণ হতে পারে। কানে প্রায়ই কটনবাড, দিয়াশলাইয়ের কাঠি, মুরগির পালক, চুলের ক্লিপ ঢোকানোর কারণে চুলকানোর সমস্যা হতে পারে। ঘন ঘন এ ধরনের বস্তুর সংস্পর্শে আসার কারণে হিতে বিপরীত হয়ে কানে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। তাই সতর্ক হই, সুস্থ থাকি। তাছাড়া কানে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে মনে হলে তখন অবশ্যই নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
[নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট]
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নলছিটিতে সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে দলিল লেখকদের কর্মবিরতি
নলছিটি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার নাহিদ জাহান মুনার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে টানা তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন উপজেলার সকল দলিল লেখক। তাদের অভিযোগ, সাব-রেজিস্ট্রার মুনা যোগদানের পর থেকেই দলিল লেখকদের কাছ থেকে শ্রেণিভেদে অতিরিক্ত কমিশনের টাকা আদায় করে আসছেন। এমনকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাগজপত্র চেয়ে দলিল সম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন তিনি।
দলিল লেখকরা আরও দাবি করেন, নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিস করার কথা থাকলেও সাব-রেজিস্ট্রার মুনা সপ্তাহে মাত্র দুই দিন উপস্থিত থাকেন এবং তাও আবার দুপুরে এসে বিকেলে অফিস থেকে চলে যান। গত ১৩ এপ্রিল এক দলিল লেখকের আইডি সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পর থেকে তারা দলিল সম্পাদনে বিরত থাকার ঘোষণা দেন।
২০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ অনির্দিষ্টকালীন কর্মবিরতির ফলে নলছিটি উপজেলায় জমি ক্রয়-বিক্রয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কয়েক হাজার জমির ক্রেতা-বিক্রেতা ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রবাসী, দূরদূরান্ত থেকে আসা সেবা প্রত্যাশী ও স্থানীয়রা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন লিটন জানান, সাব-রেজিস্ট্রারের হয়রানিমূলক আচরণের প্রতিবাদে এ কর্মবিরতি চলছে এবং কোনো সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত তা চলবে।
অন্যদিকে,অভিযোগ অস্বীকার করে সাব-রেজিস্ট্রার নাহিদ জাহান মুনা বলেন, এক দলিল লেখক এডিটকৃত ভোটার আইডি দিয়ে দলিল করতে চাওয়ায় তাকে শোকজ করা হয়েছে। সেই কারণেই লেখকরা একজোট হয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন।
জেলা রেজিস্ট্রার মো. মহসিন জানান, এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।