ডিমেনশিয়া হচ্ছে একটি জটিল নিউরো ডিজেনারেটিভ রোগ। এ রোগ হলে মানুষ ধীরে ধীরে তাঁর স্মৃতিশক্তি হারাতে থাকেন। ভুলতে থাকেন সব কিছুই। গত বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডিমেনশিয়া নিয়ে জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রতিক্রিয়ার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, যেখানে দেখা গেছে বিশ্বজুড়ে ৫৫ মিলিয়ন মানুষ এ রোগ নিয়ে বাঁচছেন এবং প্রতি তিন সেকেন্ডে একজন এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
ডব্লিউএইচও (হু)-এর মতে এ রোগই হচ্ছে সপ্তম বৃহৎ কারণ মৃত্যুর, এবং এটির জন্য বয়সকালে অন্যদের ওপরে নির্ভরতা বাড়তে থাকে। এখনও অনেকেই জানেন না যে এ রোগ কী করে প্রতিরোধ করা যায় বা এ রোগ হলে কী করা উচিত।
ডিমেনশিয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে কী করবেন?
এ রোগের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে গেলে নিয়মিত মানসিক এবং শারীরিক কসরত করুন। যতটা পারেন সক্রিয় থাকার চেষ্টা করুন। দেখে নিন রোজকার জীবনের কোন সাত অভ্যাস বদলালে কমতে পারে ডিমেনশিয়া হওয়ার আশঙ্কা।
সঠিক ওজন বজায় রাখুন: অতিরিক্ত ওজন মানেই সেটি রক্তচাপ বাড়াবে এবং একই সঙ্গে বাড়বে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার শঙ্কা এবং এই দুটো রোগই কিন্তু পরবর্তী সময়ে ডিমেনশিয়া রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন এবং নিজের ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। রোজ সঠিক পরিমাণে ফল, সবজি, বাদাম, ইত্যাদি খান।
নিয়মিত শরীর চর্চা করুন: অলস হয়ে থাকলে হার্টের অসুখের সঙ্গে মেদ বাড়তে পারে। ওজন বাড়া মানেই উচ্চরক্তচাপ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা। সেজন্য এগুলো দূরে রাখতে নিয়মিত শরীর চর্চা করুন। নিজেকে যত সক্রিয় রাখবেন তত বিভিন্ন ধরনের রোগ দূরে থাকবে।
মদ্যপান ত্যাগ করুন: অতিরিক্ত মদ পান করলে তা স্ট্রোক, হার্টের অসুখ, ক্যান্সারের কারণ হতে পারে, যা আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে ক্ষতি করবে। এগুলোর কারণে পরবর্তী সময় ডিমেনশিয়া হতে পারে। আগে থেকে সতর্ক হন এবং মদ পান ত্যাগ করুন।
ধূমপান ছাড়ুন: ধূমপান করলে শিরা সরু হয়ে যেতে পারে, রক্তচাপ বাড়তে পারে, যা আপনাকে ক্রমশ কার্ডিওভাসকুলার রোগের দিকে নিয়ে যাবে এবং একই সঙ্গে এটির কারণে ডিমেনশিয়া হতে পারে।
চাপমুক্ত থাকুন: অতিরিক্ত চাপ নিলে বা সারাক্ষণ চাপে থাকলে বাড়তে পারে ডিমেনশিয়ার আশঙ্কা। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।
নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন: যত বয়স বাড়ে আমাদের ততই রোগের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত চেক আপ করান, সঠিক জীবনযাপন করুন এবং একই সঙ্গে সঠিক পুষ্টিকর খাবার খান। মোদ্দা কথা হলো একটা সুস্থ, ভালো রুটিন মেনে চলুন।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। তেলেভাজা, প্যাকেটজাত খাবারের পরিবর্তে এমন খাবার খান যা আপনাকে পুষ্টি দেবে এবং একই সঙ্গে ডিমেনশিয়ার আশঙ্কা কমাবে।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া

আজ ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর অসংখ্য নীরব ত্যাগের মধ্যদিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কুষ্টিয়া থেকে বিতাড়িত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কালেক্টরেট চত্বরে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। 

মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই কুষ্টিয়া ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকে এখানে ইপিআর, পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ মিলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর

৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর

কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিরোধে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে সুসংগঠিত মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীতে রূপ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস জুড়ে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা হামলা, সম্মুখযুদ্ধ ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় চূড়ান্ত মুক্তির পথ।

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর সুসজ্জিত ঘাঁটির বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালান। পাকবাহিনীর ক্যাম্প, ব্রিজ, সড়ক ও রসদ সরবরাহ লাইনে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রতিটি যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনীরও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তারা কুষ্টিয়ায় অবস্থান টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার আশপাশে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। ভোর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে গোলাগুলি, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের প্রচণ্ড গর্জনে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। কৌশলগত স্থানে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেঙে দেন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে ও আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। তাদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং দিনটিকেই ‘কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১১ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত কুষ্টিয়া শহরের কালেক্টরেট চত্বরে তৎকালীন রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত থেকে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান। এই পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই প্রতীকীভাবে স্বাধীন কুষ্টিয়ার জন্ম এবং মুক্তাঞ্চল হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালুর সূচনা ঘটে। ।

প্রতি বছরের মতো এবারো কুষ্টিয়া মুক্তদিবস উপলক্ষে কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত, র‌্যালি পরবর্তী শহীদ স্মৃতিস্মম্ভ চত্বরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিবসটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। শহীদ পরিবার ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরছেন। 

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিউনিসিয়ার গুপ্তহত্যা, ওসমান হাদিকে গুলি ও বিপজ্জনক রাজনীতি
  • সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত
  • রিয়ালের ৪ তারকা ফুটবলার নিষিদ্ধ
  • ২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া