ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ করেছে একদল শিক্ষার্থী। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে শুরু হয়। পরে টিএসসি ঘুরে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান নেনে শিক্ষার্থীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। উপাচার্যের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেন তাঁরা।

এর আগে বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা, ‘দফা এক দাবি এক, ডাকসুর রোডম্যাপ’; ‘এক দুই তিন চার, ডাকসু আমার অধিকার’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’; ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’; ‘হলে হলে খবর দে, গেস্টরুমের কবর দে’; ‘গণরুম না ডাকসু, ডাকসু ডাকসু’; ‘দালালি না ডাকসু, ডাকসু ডাকসু’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এ বি যুবায়ের বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের যে গেস্টরুম কালচার আবার পরিচয় পর্বের মাধ্যমে তা ফিরে আসছে। ডাকসু হচ্ছে আমাদের অধিকার, দাবি নয়। ডাকসু দিতে না পারা প্রশাসনের ব্যর্থতা, আমরা নতুন কোনো ব্যর্থ প্রশাসন চাই না।’

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘আমরা এ এফ আর হলে নতুন করে গেস্টরুম কালচার দেখেছি। আমি এই গেস্টরুম কালচার আর চাই না। আমরা চাই না ছাত্রলীগের নেত্রীদের মতো আর কোনো নেত্রী আসুক। আমরা চাই না, কোনো দল সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফায়দা লুটুক। আমরা গেস্টরুম চাই না, ডাকসু চাই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন একত্র হয়েছেন, তখন কোনো শক্তিকেই আমরা গেস্টরুম ফিরিয়ে আনতে দেব না। তাই অতিদ্রুত ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে।’

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পাঁচ মাস হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কেন ডাকসুর রোডম্যাপ দিতে পারছে না। এর জবাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিতে হবে। যদি ডাকসু না হয়, তাহলে নতুন ফ্যাসিস্টের জন্ম হবে।’

ভিসি চত্বর থেকে উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক, ট্রেজারার এম জাহাঙ্গীর আলম ও রেজিস্ট্রার মুন্সি শামসুদ্দিন কথা বলেন।

বৈঠক শেষে তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনার পরে আমাদের ডাকসুকেন্দ্রিক হতাশা আরও বেড়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু ছাত্রসংগঠনের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত নন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই গুটিকয় ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে ডাকসুকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়েই ডাকসুকেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করব।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঁচ আগস্টের পর বহুদিন চলে গেছে কিন্তু ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট কোনো বার্তা আসেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবারই বলছে তারা ডাকসুর বিষয়ে পজিটিভ কিন্তু তাদের আচরণে এমন কিছু আমরা দেখছি না।’

মাহিন সরকার বলেন, ‘আলোচনায় তাঁরা আমাদের জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ডাকসুবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য জানাবেন এবং আরও কিছুদিন পরে তাঁরা ডাকসুর রোডম্যাপ দিতে সক্ষম হবেন।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ধামরাইয়ে বিস্ফোরণে বাসভবনের নিচতলা চূর্ণবিচূর্ণ, দম্পতি দগ্ধ

ঢাকার ধামরাইয়ে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে বাসভবনের নিচতলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে। এতে দগ্ধ হয়েছে আসিফ (২৪) ও শান্তা (২১) নামের এক দম্পতি। তাদের ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১২ টার দিকে ধামরাই পৌরসভার কুমড়াইল এলাকায় কুববাত হোসেন নামে এক ব্যক্তির ভাড়া বাসায় নিচতলায় একটি কক্ষে এ বিস্ফোরণ ঘটে।

দগ্ধ আসিফ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাসিন্দা । স্ত্রী শান্তাকে নিয়ে তারা ধামরাইয়ের কুমড়াইলে ভাড়া বাসায় থাকতেন। আসিফ পেশায় একজন রিকশাচালক ও তার স্ত্রী শান্তা একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন।

ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রাত পৌনে ১২ টার দিকে হঠাৎ বিকট আওয়াজে দুই তলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় কক্ষটিতে আগুন লেগে যায়। কিছুক্ষণ পর কক্ষটি থেকে দগ্ধ ওই দম্পতি বেরিয়ে আসেন। তাদের শরীরের বেশিরভাগ অংশ ঝলসানো দেখা যায়। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

বিস্ফোরণে বাসভবনের নিচতলা চূর্ণবিচূর্ণ হলেও সিলিন্ডারটি অক্ষত

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, বাড়িটিতে তিতাসের গ্যাস থাকলেও ওই দম্পতি কক্ষে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতেন। সিলিন্ডারটি অক্ষত পাওয়া গেলেও গ্যাস পরিবাহী পাইপ পোড়া দেখা গেছে। বিস্ফোরণে আশপাশের কয়েকটি কক্ষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাস আগুনের সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

একই বাড়ির অপর ভাড়াটিয়া রজ্জব আলী বলেন, “রাত পৌনে ১২ টার দিকে বিকট আওয়াজ হয়। শব্দ শুনে এসে আগুন দেখি। তারপর আগুন নেভাই। দেখি একজন নারী, একজন পুরুষ বেরিয়ে এসেছেন। তাদের শরীর ঝলসে গেছে। তাদের রিকশায় করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। শুনেছি গ্যাস বিস্ফোরণে আগুন লাগে।”

সজিব হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “রাতে শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে আসি। এসে ধোঁয়া দেখি। ঘরের দরজা খুলে স্ত্রী প্রথম বেরিয়ে আসেন, পোড়া অবস্থায়। চুল পুড়ে গেছে। বেরিয়ে পড়ে যাচ্ছিল। পাশের কক্ষ থেকে একজন বেরিয়ে তাকে ধরে। এরপর তার স্বামীও বের হয়। মাথার সব চুল পুড়ে গেছে। চামড়া ঝলসে গেছে। পরবর্তীতে আশপাশের লোকজন এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।”

ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম বলেন, “ঘটনাস্থলে এসে দেখি ঘরবাড়ি ভাঙা। দগ্ধদের পাইনি। দগ্ধ শান্তা ও আসিফ টাঙ্গাইল মির্জাপুর উপজেলার বাসিন্দা। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।”

ধামরাই ফায়ার সার্ভিসের লিডার জহিরুল ইসলাম বলেন, “এখানে স্বামী-স্ত্রী দুইজন আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকার বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়েছে। সিলিন্ডার অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।”

ঢাকা/সাব্বির/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধামরাইয়ে বিস্ফোরণে বাসভবনের নিচতলা চূর্ণবিচূর্ণ, দম্পতি দগ্ধ