ন্যায্য মজুরির অভাবসহ নানা বঞ্চনার শিকার চা-শ্রমিকরা
Published: 13th, January 2025 GMT
দেশে চা-শ্রমিকদের নানা বঞ্চনা আর দুর্দশার কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন অংশীজনকে নিয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে। সোমবার সিলেটের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো) এ বৈঠকের আয়োজন করে। নগরীর সোবহানীঘাটের একটি হোটেলে এ সভা হয়।
‘লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট অব টি লেবার ওমেন ওয়ার্কার অন দেয়ার রাইটস’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে বৈঠকে চা-বাগানে মাদকের আগ্রাসন, সঠিকভাবে মজুরি না পাওয়া, অসুস্থ হওয়ার পর সঠিক চিকিৎসার অভাব, নারী শ্রমিকদের ব্রেস্ট ফিডিং রুম না থাকা, অপরিচ্ছন্ন টয়লেট, বাল্যবিয়েসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অক্সফামের সহযোগিতায় বৈঠকে চা-শ্রমিকদের বর্তমান জীবনযাত্রা নিয়ে উপস্থাপন করা হয় একটি প্রতিবেদন।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট সদর উপজেলার ইউএনও খুশনূর রুবাইয়াৎ। একডোর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহের সভাপতিত্বে বৈঠকে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক শাহিনা আক্তার, সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, লাক্কাতুরা চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক নূর মোহাম্মাদ ফারুকি সিয়াম।
একডোর প্রকল্প সমন্বয়কারী মোমতাহিনুর রহমান চৌধুরী প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, সম্প্রতি তারা সিলেটের দলদলি চা-বাগান, কেওয়াছড়া চা-বাগান, হিলুয়াছড়া চা-বাগানে একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী সিলেটের এই তিন চা-বাগানে ৮৯০ পরিবারে জনসংখ্যা ৫ হাজার ৬০০ জন। এর মধ্যে নারী শ্রমিক আছেন ১ হাজার ৫০৯ জন। তিন চা-বাগানের ৪২ শতাংশ শিশু স্কুলে যাচ্ছে না। ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা এবং ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। চা-বাগানের ৮২ শতাংশ চা-শ্রমিক বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পান না।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, চা-শ্রমিক নারীদের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। চা-শ্রমিকদের উত্থাপিত দাবিগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে বলেও তারা আশ্বস্ত করেন।
বৈঠকে চা-শ্রমিকরা জরিপের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সিলেটের সব চা-বাগানের চিত্র একই। চা-বাগানে নারী শ্রমিকই বেশি কিন্তু চিকিৎসা, স্যানিটেশনের কোনো সুবিধা পাই না। পর্যাপ্ত মজুরি না পাওয়ার কারণে অনেককে নিম্নমানের এবং কম খাবার খেতে হয়। চা-বাগানে নেই কোনো সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাই তাদের সন্তানরা লেখাপড়া বিমুখ। আবার শ্রমিকদের সামর্থ্য নেই সন্তানকে বাগানের বাইরে লেখাপড়া করানোর।
বৈঠকে মাদকের হাত থেকে নতুন প্রজন্মের চা-শ্রমিকদের বাঁচাতে বাগান কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন এবং চা-শ্রমিক নেতাদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের প্রথম নারী ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু
বাংলাদেশ প্রথম নির্বাচিত নারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট চন্দনা গ্রামের বাসিন্দা শামসুন্নাহার চৌধুরী মারা গেছেন।
শুক্রবার আছর নামাজের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, সন্তানসহ আত্মীয়স্বজন ছাড়াও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সিঙ্গাপুর, ভারতসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহেরের স্ত্রী তিনি।
তিনি চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী ও দেওরগাছ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩ বার চেয়ারম্যান নির্বাহিত হন। এরমধ্যে ১৯৮৮ সালে প্রথম মিরাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সারা দেশে তখন তিনিই ছিলেন প্রথম নারী ইউপি চেয়ারম্যান। সেই থেকে রাজনীতিতে জড়ান। ১৯৯৩ সালে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
শামছুন্নাহার চৌধুরী ৩ বার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নানা সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন। পেয়েছেন অতিশ দীপঙ্কর জয়িতাসহ নানা পুরস্কার। হয়েছেন জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান। কাজ করেছেন নারী উন্নয়নে।
তার মৃত্যুতে সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে।