হাতে পাঁচটা বক নিয়ে এক যুবক রোস্টের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। আরেকটি মেয়ে কুটি থেকে বুনোহাঁস বের করে মাংস রান্না করার ঘোষণা দিয়ে বলছেন, ‘আজ হাঁসপাখির মাংস হবে।’ এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করেছেন আল-আমিন নামের এক যুবক। আর বুনোহাঁস নিয়ে কথা বলা মেয়েটির নাম তুলি।

তাঁরা দুজনই তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। ফেসবুকে তুলির অনুসারী সাড়ে ছয় লাখের বেশি। আর আল-আমিনের সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি। কয়েক দিন আগে তাঁরা ফেসবুকে এই ভিডিও প্রচার করেন।

এই ভিডিও দেখে ব্লগার আল–আমিন আর তুলির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পরিযায়ী অতিথি পাখি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সোমবার স্মারকলিপি দিয়েছে রাজশাহীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস।
ভিডিওতে আল–আমিনকে বক হাতে নিয়ে বলতে দেখা যায়, ‘আমার বাসায় স্পেশাল মানুষজন আসবে। তাদের জন্য পাখি নিয়ে আসা হইছে। বকপাখি। সুন্দর সুন্দর দেখতে সাদা সাদা বক। বাট মাংস কম।’ আল–আমিন তাঁর মাকে বলছেন, ‘আম্মা, এগুলো কাকে খাওয়াবেন?’ তাঁর মা বলেন, ‘এগুলো জামাইকে খাওয়াব।’ আল–আমিন আবার প্রশ্ন করেন, ‘আস্ত আস্ত রোস্ট করে খাওয়াবেন, না কেটে কেটে খাওয়াবেন?’ মা বলছেন, ‘রোস্ট করে খাওয়াব।’ আল–আমিন দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘বকের রোস্ট হবে আমাদের বাসায়, গাইজ। তোমরা চলে আইসো রোস্ট খাইতে।’

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, তুলি মুরগির কুটি থেকে বুনোহাঁস বের করতে করতে বলছেন, ‘আমার বাপে বিলেত থেইক্যা কী ধইরা নিয়াসছে দেখেন।’ আরেকটি মেয়েকে বলতে শোনা যায়, ‘কী এটা?’ জবাবে তুলি বলেন, ‘এটা হাঁসপাখি।’ ততক্ষণে পা বাঁধা হাঁসটি হাত থেকে ছোটার জন্য ছটফট করছে। আর মুখে ডাকছে। তুলি বলছে, ‘আমার যে ভয় লাগিচ্ছে, উড়িচ্চে কেমন কইরে।’ পাশ থেকে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘এটা হচ্ছে হাঁসপাখি। আমার শ্বশুর আব্বা মাইরা লিয়াসছে। আর কী হবে আজ দুপুরে রান্না?’ তখন মেয়েটি কুটি থেকে একটি বাড়িতে পোষা একটি পাতিহাঁস বের করেন। মেয়েটির পরিচয় দিয়ে ছেলেটি বলেন, ‘এটা হচ্ছে তুলির বড় বোনের মেয়ে। আজ দুপুরে খাবারে হবে পাতিহাঁস আর হাঁসপাখি।’ এবার মেয়েটি বলেন, ‘আমি যখন আসি, তখন আমার বাপ মুনে বলে যে কী খাওয়াব, আর কী থুব। যেটা আমি পছন্দ করি, সেটাই আমার বাপ নিয়ে আসার চেষ্টা করে।’

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় ইয়্যাসের সভাপতি শামীউল আলীম ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপি রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ ও জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারকে দেওয়া হয়। এতে আল-আমিন ও তুলির শাস্তি দাবি করা হয়।

ইয়্যাসের ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আল-আমিন ও তুলি প্রকাশ্যে পরিযায়ী পাখি ধরার প্ররোচনা ও জবাই করে রোস্ট করে খাওয়ার প্ররোচনা করেছেন, যা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২–এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি উল্লিখিত কোনো পাখি বা পরিযায়ী পাখির ট্রফি বা অসম্পূর্ণ ট্রফি, মাংস দেহের অংশ সংগ্রহ করলে, দখলে রাখলে বা ক্রয় বা বিক্রি করলে বা পরিবহন করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং এ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

স্মারকলিপিতে দুই ব্লগার আল-আমিন ও তুলির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করা, পাখি বা পরিযায়ী পাখিশিকারিদের আইনের আওতায় আনা ও নগরজুড়ে পাখির বিচরণকেন্দ্র ও আবাসস্থলকে সংরক্ষিত ঘোষণা করে সেখানে আলোদূষণ ও শব্দদূষণ রোধ করারও দাবি জানানো হয়েছে।

স্মারকলিপির অনুলিপি বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালককেও দেওয়া হয়েছে।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আল-আমিন বলেন, একজন সাংবাদিক তাঁকে ফোন করেছিলেন। এরপর তিনি ফেসবুক থেকে ভিডিও ডিলিট করে দিয়েছেন। আল-আমিন জানান, একজন ব্লগার হিসেবে তিনি তুলিকে চেনেন। তবে তুলির বাড়ি কোথায়, তা তিনি জানেন না। ফেসবুক আইডিতে থাকা তুলির মুঠোফোন নম্বরে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

রাজশাহী বন বিভাগের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ভিডিও দুটি পেয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা ব্লগারদের সন্ধানে নেমেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ