যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। একে তো টানা সাত দিন ধরে দাবানলে জ্বলছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের এই শহর, তারপর দিন দুয়েকের বিরতির পর আবার বাড়তে শুরু করেছে বাতাসের গতি। বাতাসের গতি তীব্র হওয়ার আগেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ফায়ার সার্ভিস।

৭ জানুয়ারি সূত্রপাতের পর লস অ্যাঞ্জেলেসে ছয়টি দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল। এখনো তিনটি দাবানল সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে শহরের পশ্চিম অংশে ‘প্যালিসেইডস’ ও পূর্বে ‘এটন’ দাবানলের ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। এই দুই দাবানল সামান্যই নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে চলেছে।

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা আসলেই হতবাক করে দেওয়ার মতো। দাবানলে লস অ্যাঞ্জেলেসের এলাকার পর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ধনকুবের কি সাধারণ মানুষ—সবার বাড়ি মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। আগুন পুড়েছে অন্তত ১২ হাজার ৩০০ বাড়ি। আর আগুনে এখন পর্যন্ত ১৩৫ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদার।

আগুনে সম্পদের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের দুর্দশাও চরমে পৌঁছেছে। বাড়িঘর হারানোর শোকের মধ্যেই প্রাণ বাঁচাতে এক লাখ মানুষকে উপদ্রুত এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হলে একই নির্দেশ দেওয়া হতে পারে আরও ৮৭ হাজার জনকে। আর ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।

আগুন নেভাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। আকাশ থেকে ফেলা হচ্ছে পানি ও রাসায়নিক। নানা সরঞ্জাম হাতে মাঠে নেমেছেন ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ৭১৩ একর জায়গা গ্রাস করা সবচেয়ে ভয়াবহ প্যালিসেইডস দাবানল মাত্র ১৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আর ১৪ হাজার ১১৭ একর এলাকায় জ্বলতে থাকা এটন দাবানল নিয়ন্ত্রণে এসেছে ২৭ শতাংশ।

ফায়ার সার্ভিস যেটুকু সফলতা পেয়েছে, তার একটি বড় কারণ ঝড়ো বাতাস সান্তা আনার গতি কমা। তবে সপ্তাহান্তে বাতাসের গতি কমার পর আবার বাড়াতে শুরু করেছে। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রোববার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত স্থানীয় মরুভূমি থেকে সৃষ্টি হওয়া এই বাতাস লস অ্যাঞ্জেলেসের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১১২ কিলোমিটার গতিতে বয়ে যেতে পারে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি ম্যারন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এ বাতাসে আর্দ্রতা খুবই কম। তাই লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকবে। যেসব এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ সতর্কতা তুলে নেওয়ার আগপর্যন্ত ওই এলাকাগুলো খুলে দেওয়া হবে না।

এদিকে আগুন নেভানোর কাজে এরই মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার আশপাশের সাত অঙ্গরাজ্য থেকে ছুটে এসেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। প্রতিবেশী দেশ কানাডা ও মেক্সিকোও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এজেন্সির প্রশাসক ড্যানি ক্রিসওয়েল বলেছেন, আগুন নেভানোর কাজে সহায়তার জন্য সেনাসদস্যদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলের কারণ কী‘৩০ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়া না দিলে বাড়ি পাব না’লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে প্রাণহানি বেড়ে ২৪, নতুন বিপদের শঙ্কা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এই কঠিন সময়ে ঐক্য ধরে রাখা প্রয়োজন: ঢাবি উপাচার্য

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির ঐক্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান।

উপাচার্য বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। এক অর্থে জাতির জন্য এটি একটি ক্রান্তিকাল। এই সময়ে আমাদের ঐক্য ধরে রাখা একান্তই প্রয়োজন।’

আজ রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে নিয়াজ আহমেদ খান এ কথা বলেন।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতির জন্য পরম শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও মমতার দিন। এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। তাঁদের সেই চূড়ান্ত আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে আছে।

নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, যুগে যুগে ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ এ জাতিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং সাহস জুগিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতি ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আজও জাতির ঐক্য ধরে রাখার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোকবর্তিকা। একই সঙ্গে ১৯৫২, ১৯৬৮, ১৯৬৯, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে যাঁরা রক্ত ও জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।

নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ১৯৫২ থেকে ২০২৪—এর প্রতিটি দিন ও ঘটনাপ্রবাহ জাতির মৌলিক পরিচয়ের মাইলফলক। এর কোনো অংশ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ইতিহাসই যুগে যুগে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে, আর বর্তমান সময়ে সেই ঐক্য ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ