সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তরের আশ্বাসে অনশন প্রত্যাহার, বুধবার পর্যন্ত শাটডাউন
Published: 13th, January 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস পেয়ে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে আগামী বুধবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রণালয়ের সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ‘শাটডাউনের’ আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ের সামনে অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর, অস্থায়ী আবাসন নিশ্চিত করা এবং অস্থায়ী ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে আবাসন ভাতা দেওয়ার দাবিতে গতকাল রোববার সকাল থেকে অনশন শুরু করেন তাঁরা।
এ কে এম রাকিব বলেন, ‘বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভায় প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হবে বলে আশ্বাস পেয়েছি। এ ছাড়া অস্থায়ী আবাসনের বিষয়ে আলোচনা হবে। আমাদের তিনটি দাবির মধ্যে দুটি মেনে নেওয়া হয়েছে। তাই আমরা অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।’ তিনি বলেন, অনশন প্রত্যাহার করা হলেও ক্যাম্পাস শাটডাউন থাকবে। বুধবারের সভার সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করেই তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ফয়সাল মুরাদ বলেন, কিছুক্ষণ আগে একটা চিঠি এসেছে। সেই চিঠিতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নিয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভা হবে। সেখানে সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তর করা হবে। এ ছাড়া সেখানে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতার বিষয়ে আলোচনা হবে।
এই তিন দফা দাবিতে গতকাল রোববার সকাল সাড়ে আটটা থেকে শিক্ষার্থীরা গণ-অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। গতকাল রাতে অনশনরত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের অনেককে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আজ সকালে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেন। ক্যাম্পাসের মূল ফটক, প্রশাসনিক ভবন ও বিভিন্ন অনুষদের ভবনে তাঁরা তালা ঝুলিয়ে দেন। বলেন, বিকেল চারটার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না এলে তাঁরা সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করবেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। অনশনকারী অসুস্থ শিক্ষার্থীরা রিকশায় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা হেঁটে যাত্রা করেন। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সচিবালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন৩১ ঘণ্টা ধরে অনশনে জবির শিক্ষার্থীরা, কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পরও অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার কথা বলার পরও কোনো সুরাহা হয়নি। তিনি শিক্ষার্থীদের বারবার অনুরোধ করলেও ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল পৌনে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শিক্ষা উপদেষ্টা কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন।
এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘‘তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতি শিগগির কমিটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবে। তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই, কারণ তা আদালতে টেকে না।’’
আরো পড়ুন:
কুয়েটে শিক্ষা উপদেষ্টা, কথা বলছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে
৪০ ঘণ্টা অনশনে, অসুস্থ কুয়েটের পাঁচ শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দুইমাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু, আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। আমরা এই বিষয়ে আর সময় দিতে চাই না। আমরা লাশ হয়ে গেলেও ভিসির পদত্যাগ ছাড়া অনশন ভাঙব না।
এর আগে, গত সোমবার বিকেল ৪টা থেকে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন ৩২ জন শিক্ষার্থী।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হলেও কুয়েট প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ঘটনায় হামলাকারীদের নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতপরিচয়ের কয়েকজনের বিরুদ্ধে শুধু দায়সারা একটি মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ। সেই মামলায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। উল্টো হামলার ঘটনায় বহিরাগত একজন বাদী হয়ে ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
মামলায় ছাত্রদের ব্যক্তিগত পরিচয়, বিভাগ ও রোল নম্বর যেভাবে নিখুঁত বর্ণনা করা হয়েছে তা কুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব না। এরপর কর্তৃপক্ষ ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। এর মধ্যে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীও রয়েছে। উপাচার্যের কাছে বারবার দাবি জানালেও তিনি দাবিগুলো বাস্তবায়ন করেননি।
গত ১৩ এপ্রিল ক্যাম্পাসে ঢুকে হল খুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। দুই রাত খোলা আকাশের নিচে থাকার পর ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে হলে ঢোকেন তারা। কিন্তু হলে খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়নি। এসব ঘটনায় উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
ঢাকা/রাজীব