শীতে ক্যানসার রোগীদের বাড়তি যত্ন কেন দরকার
Published: 13th, January 2025 GMT
খেয়াল করলে দেখবেন, ক্যানসারে অনেক রোগীর ওজন কমে যায়, অর্থাৎ তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য দেহে যে স্বাভাবিক চর্বি থাকা প্রয়োজন, সেটিও থাকে না তাঁদের। তাই অন্যদের চেয়ে বেশি শীত অনুভব করেন তাঁরা। অনেকের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও কমে যায়। এ রকম অবস্থায়ও শীত বেশি অনুভূত হয়। ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে কখনো একজনের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা একেবারেই কমে যেতে পারে। তখন বাড়ে সংক্রমণের ঝুঁকি। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, সর্দি ছাড়াও হতে পারে নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক রোগ। এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে ক্যানসার রোগী ও তাঁর পরিবারের কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। জানাচ্ছেন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ক্যানসার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.
তুষার দাস।
ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই টাটকা খাবার খাওয়া উচিত। বাসি খাবারে সহজেই ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মাতে পারে। এটা ঠিক যে শীতে খাবার সহজে নষ্ট হয় না। কিন্তু এমনটাও ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই যে শীতে বাসি খাবার পুরোপুরি নিরাপদ। রোজ তাজা শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে অবশ্যই। তবে পাতলা খোসাযুক্ত ফল এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
চাই উষ্ণতাক্যানসার রোগীর যাতে ঠান্ডা না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। খাওয়ার জন্য উষ্ণ পানি ভালো। রান্না করা খাবার খাওয়াতে হবে হালকা গরম অবস্থাতেই। হাতমুখ ধোয়া, অজু, গোসল প্রভৃতির জন্য উষ্ণ পানির ব্যবস্থা রাখুন। পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরা আবশ্যক। একাধিক স্তরের হালকা পোশাক পরা যেতে পারে, যাতে প্রয়োজনে বাইরের স্তরের পোশাক খুলে রাখা যায়। মোজা, হাতমোজা, কানটুপি বা মাফলারের মতো ছোটখাটো অনুষঙ্গের ব্যবস্থাও রাখুন।
সুস্থ থাকতে আরও যানিয়মমাফিক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
অপরিষ্কার হাতে খাওয়া যাবে না। অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করা যাবে না। খাবার রান্না ও পরিবেশনের ক্ষেত্রেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
সম্ভব হলে খানিকটা সময় শরীরচর্চা করতে হবে।
ক্যানসারের চিকিৎসা সম্পন্ন হয়ে গেলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।
ক্যানসার রোগীর ক্ষেত্রে ঠান্ডা-কাশির মতো ছোটখাটো উপসর্গ অবহেলা করতে নেই। এ রকম ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ আবশ্যক।
আরও পড়ুন শীতে যাঁদের বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন১২ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইউজিসির নজরদারি সংস্থার অধীনে যাচ্ছে সাত কলেজ
রাজধানীর আলোচিত সাত কলেজ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে এসেছে সরকার। এ জন্য আপাতত একটি ‘নজরদারি সংস্থা’ গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য এ সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন। সাত অধ্যক্ষের যে কোনো একজন সংস্থাটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। নজরদারি সংস্থার কার্যালয় হবে সাত কলেজের যে কোনোটির ক্যাম্পাসে।
এ ছাড়া সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি ও রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং হিসাব বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সাময়িক কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এসব কাজের জন্য সাত কলেজের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি পৃথক ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদার স্বতন্ত্র কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে সাত কলেজ পরিচালিত হবে।
সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। যুগ্ম সচিব শারমিনা নাসরীনের সই করা চিঠিতে এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ এই উচ্চ পর্যায়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কমিটির সদস্য।
এ কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে একাধিক সভায় মিলিত হয়ে সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা সরকার গ্রহণ করেছে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ জাপান সফরে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে তিনি সমকালকে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমমর্যাদার স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে সাত কলেজ কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে আমরা সরকারকে একটি সুপারিশমালা দিয়েছি।
গতকাল ঢাবি উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, ইউজিসি এবং অধিভুক্ত কলেজের একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সাত কলেজের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে ঢাবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। দ্রুত ঢাবির সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাত কলেজ হলো– ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা রাজধানীর এই বড় সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রায় ৮ বছর ঢাবির অধীনে চলে সাতটি কলেজ। গত ২৭ জানুয়ারি অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ঢাবি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এখন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্ন্তবর্তী সরকার। তার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে চলবে সাত কলেজ।
কেমন হবে নজরদারি সংস্থার কাঠামো
নজরদারি সংস্থার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির রেজিস্ট্রার দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা মনোনীত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সাত কলেজের অনলাইন ভর্তি কমিটির মাধ্যমে আবেদন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কলেজগুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এই কাঠামো।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রশাসনিক জটিলতা ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থা চালু রাখবে।’
আরও বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ পর্ষদে (একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট) জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদিত হতে হবে।’
উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ অনুসারে, ‘সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে; নিয়োগপ্রাপ্তির পরেই প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমের অপারেশন ম্যানুয়েল প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করবেন। কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।’