পাবনায় চার বছর পর গৃহবধূ হামিদা বেগম হত্যা মামলার রায়ে তার স্বামী তেজেম মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. তানবির আহমেদ এ রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তেজেম মোল্লা পাবনার সদর উপজেলার ফলিয়া গ্রামের মৃত বাজর উদ্দিনের ছেলে। নিহত হামিদা বেগমের বাড়ি একই গ্রামে। রায়ে আসামিকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও করা হয়েছে।

মামলা সুত্র জানা গেছে, ঘটনার ২০-২২ বছর আগে তেজেম মোল্লার সঙ্গে বিয়ে হয় হামিদা বেগমের। বিয়ের পর তাদের ঘরে দুটি সন্তান জন্ম হয়। এরই মধ্যে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর ভোরে এ কলহের জের ধরে তেজেম মোল্লা তার স্ত্রী হামিদা বেগমকে ধারালো ছুরি দিয়ে গলাকেটে এবং উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করেন।

আরো পড়ুন:

চিন্ময়কাণ্ডে আসামি হওয়া ৬৩ আইনজীবীর জামিন

পরিবেশ আইনে শাহ সিমেন্টকে ৪ লাখ টাকা অর্থদণ্ড

পাবনার পিপি গোলাম সরয়ার খান জুয়েল জানান, এ মামলায় মোট ২৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বিচারক ফাঁসির রায় ঘোষণা করেছেন। 

মামলায় সরকার পক্ষে ছিলেন এপিপি আশরাফুল ইসলাম এবং আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক।

ঢাকা/শাহীন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

অস্তিত্ব সংকটে বাঘ ভেবে ভুল বোঝা প্রাণীটি

বছর তিনেক আগের ঘটনা। ঢাকার ধামরাইয়ের কালিঘাট এলাকায় কৃষকরা জমিতে ধান কাটতে যান। এ সময় ধান ক্ষেতে বাঘের মতো একটি প্রাণী দেখে তারা চিৎকার করে ওঠেন। এক পর্যায়ে আশপাশের লোকজন লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে প্রাণীটিকে মেরে ফেলেন। ছোপ ছোপ দাগ দেখে বাঘ বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু বন বিভাগ জানিয়েছে, বাঘের থেকে অনেক ছোট এই প্রাণীটি আসলে মেছো বিড়াল। এভাবে না জেনে মানুষ প্রায়ই মেছো বিড়ালকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। নিরীহ নিশাচর এ বন্যপ্রাণীকে মানুষ ‘মেছোবাঘ’ নামে ডাকে। আর এ নামের কারণে ভুল ধারণার শিকার হয়ে প্রাণীটি বিপন্ন হয়ে পড়ছে। 
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর সংগঠন (আইইউসিএন) মেছো বিড়ালকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। প্রাণীটি বাংলাদেশেও বিপন্ন। প্রাকৃতিক জলাভূমি কমায় প্রাণীটির সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণীটির অবদান গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাসস্থান সংকুচিত হওয়া ও মানুষের সচেতনতার অভাব প্রাণীটির জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ শনিবার দেশে প্রথমবারের মতো নানা আয়োজনে বিশ্ব মেছো বিড়াল দিবস-২০২৫ উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘জনগণ যদি হয় সচেতন, মেছো বিড়াল হবে সংরক্ষণ’। 
দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আগারগাঁওয়ের বন অধিদপ্তরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 

বন্যপ্রাণী গবেষকরা বলছেন, মেছো বিড়াল জলে ও স্থলে সমানভাবে তুখোড় শিকারি। সাধারণত খাল, বিল, নদী, পুকুর ও জলাভূমি আছে– এমন জায়গাতেই এদের বসবাস। সুন্দরবনে বেশ ভালো সংখ্যক আছে। মেছো বিড়াল মাছ, সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, পাখি, খরগোশ, গুইসাপসহ মাঝারি আকারের অনেক প্রাণী শিকার করে থাকে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশ বলেন, ২০০৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত ৩৬১টি সংবাদ পর্যালোচনা করে বাংলাদেশে ১৬০টি মৃত মেছো বিড়ালের খোঁজ পেয়েছিলাম। সবই মনুষ্য সৃষ্ট কারণে। ৮৩ শতাংশ সংবাদ মেছো বিড়ালকে ভুল প্রাণী ভেবেছে। কোথাও বলা হয়েছে বাঘ, কোথাও চিতা বাঘ, কোথাও বাঘের বাচ্চা। 
তিনি বলেন, মেছো বিড়াল জনরোষ থেকে উদ্ধার করে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা বনের প্রাণী নয়। ভুলভাবে ধরা আর ভুল জায়গায় ছাড়ার কারণে এই বিড়ালরা খুব কম দিনই বাঁচে। মেছো বিড়াল অবমুক্ত করার অত্যন্ত জনপ্রিয় জায়গা বাইক্কা বিল। 

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, মেছো বিড়াল সংরক্ষণে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যকরী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। মেছো বিড়াল হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। মেছো বিড়ালের জন্য বাসস্থান রক্ষা, বন সংরক্ষণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ