নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, গত ১৫ বছর নারায়ণগঞ্জ আইনের কোন শাসন ছিল না। ওই সন্ত্রাসী শামীম ওসমান সেলিম ওসমান আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমানের গুম, খুন ও হত্যা নির্যাতনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে দমিয়ে রেখেছিল।

নারায়ণগঞ্জের মানুষের সম্পদ লুটপাত ও  সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে তারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। নারায়ণগঞ্জ মানুষকে তারা বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে এবং মামলা  দিয়ে তারা জেল হাজতে প্রেরণ করেছিল। গত ১৫ বছরে নারায়ণগঞ্জের মানুষ সুষ্ঠু বিচার পায় নাই। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন ১২নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১দফা বাস্তবায়নে জনসম্পৃক্ততা ও লিফলেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় শহরের চানমারি নতুন সড়কের সামনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের দল, বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। আমরা যারা এখানে বিএনপি করি আগে আমাদেরকে ভালো হতে হবে। আমরা যদি সে শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমানের মতো পথ অবলম্বন করবে তাদের জন্য কপালে খারাপি আছে।

আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন সন্ত্রাসী অন্যায়কারী দুর্নীতিবাজ ও দখলবাজ এবং চাঁদাবাজ কে বিএনপিতে আশ্রয় দেওয়া হবে না। বিএনপি থেকে সকল অপকর্ম করবে তাদের ঠিকানা হবে জেলখানায়। তাদের জায়গা কিন্তু বিএনপিতে হবে না। আপনারা যারা জনগণ আছে আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।

যদি কেউ বিএনপির নাম ভাঙ্গিয় কোন চাঁদাবাজি অপকর্ম করবে তাদেরকে বেঁধে রাখবেন। পুলিশে দিবেন আর না পারলে আমাদেরকে খবর দিবেন আমরা এসে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক অবস্থান নেওয়ার পর পাশাপাশি দল থেকেও তাদেরকে বহিস্কার করা হবে। আর যারা এ সকল সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি করবে তাদেরকে কান ধরে বিএনপি থেকে বের করে দেয়া হবে। 

তিনি আরও বলেন, আর তাদেরকে সাবধান করে দিতে চাই গত ১৫ বছর শামীম ওসমান,সেলিম ওসমন, আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমানের সাথে থেকে সন্ত্রাসী করেছেন তাদের অনেকেই আজকে বিএনপি তৃতীয় শ্রেণীর নেতাদের সঙ্গে ঢুকে গিয়ে বিএনপিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন।

অনুপ্রবেশকারীদেরকে বলতে চাই সাবধান বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারীদের কোন স্থান নাই। যারা অনুপ্রবেশ করতেছেন তারা সাবধান হয়ে যান আপনাদের স্থান কিন্তু হবে জেলে। আমরা কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবো না নিজেরা কোন অন্যায় কাজে করবো না।

শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানসহ তাদের দোসররা জনগণের উপরে যে টিম রোলার চালিয়েছে আমরা যদি তা করি তাহলে তো আমরা তাদের সমান হয়ে গেলাম। তাহলে আমাদের পার্থক্যটা কোথায় রইল। আমাদেরকে জনগণের পক্ষে থাকতে হবে এবং জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। 

মহানগর ১২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বরকত উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল বাবু'র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড.

সাখাওয়াত হোসেন খান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিশেষ অতিথি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা। 

এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মজিবর রহমান, হাবিবুর রহমান মিঠু, মাকিত মোস্তাকিম শিপলু, মহানগর বিএনপি নেতা সরকার আলম, আক্তার হোসেন, ১২নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি বাচ্চু বাদশা, সহ-সভাপতি শাহাবুদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুম মিয়া, সাইদুর রহমান টিটু, মানিক বেপারী, সাংগঠনিক সম্পাদক শিবলী সাদিক শিপলুসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

উৎস: Narayanganj Times

এছাড়াও পড়ুন:

আড়াইহাজারে হত্যা মামলা তুলে নিতে হুমকি, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বাদী

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্কুলছাত্র আইয়ুব আলী (১৫) হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বাদী নিহতের মা-আয়েশা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রাননাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নিহতের পরিবারের স্বজনরা।

গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাত ১০ টায় উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ইজারকান্দি গ্রামে ঘটে এ ঘটনা।

এ ঘটনায় শনিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আয়েশা। এতে তিনি নিজের ও তার বড় ছেলে নবীর হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার তিনি মেয়ে আদুরী বেগমকে নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তাঁর অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িতে আসেন তাঁর বড় ছেলে নবী হোসেন।

খবর পেয়ে ইজারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মামলার অন্যতম আসামি  রাসেল মিয়া, জুয়েল মিয়া, শরীফ হোসেন, আল আমিন, আলমগীর হোসেন, ইয়াছিন মিয়া, আবু হানিফা ও অজ্ঞাতপরিচয় ৪-৫ জন রাত ১০টার দিকে তাদের বাড়িতে আসে। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে নবী হোসেন পেছনের দরজা দিয়ে কোনোরকমে পালিয়ে যায়।

কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসা আসামিরা দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে। তারা নবী হোসেনের খোঁজে বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে হামলাকারীদের একজন আয়েশাকে বলে, তোর এক ছেলেরে যেমনে খুন করছি, আরেক ছেলেরেও (নবী হোসেন) এমনেই খুন করমু।

এমনকি বাড়ির সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়। পাশাপাশি এই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্যও শাসিয়ে যায় আসামিরা।

সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে জানা যায়, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত আয়েশা বেগমের ছোট ছেলে নিহত আইয়ুব আলী। ইজারকান্দি গ্রামের আলোর সেতু পাঠাগারের দেখ বালের দায়িত্বে ছিল সে।

২০২০ সালের ২৭ মে ইজারকান্দি গ্রামের রাসেল,শাহজাহানসহ কয়েকজন মিলে আলোর সেতু পাঠাগার এলাকায় জুয়া খেলার আসর জমায়। এতে বাধা দেন পাঠাগারের দেখ বালের দায়িত্বে থাকা আইয়ুবআলী। এ নিয়ে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়।

এদিন সন্ধ্যায় ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাদ্দাম হোসেন তার দলবল নিয়ে স্থানীয় আব্দুল হকের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হকের পক্ষ পাল্টা আক্রমণ চালালে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় সাদ্দামের পক্ষের ছোড়া গুলিতে নিহত হন  স্কুলছাত্র আইয়ুব আলী।

আইয়ুব আলী হত্যার পরদিন আড়াইহাজার থানায় মামলা করেন আয়েশা। এতে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটির প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন এখন সৌদি আরবে পলাতক। 

ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গেলে এ প্রতিবেদকের কাছে নিহতের পরিবারের স্বজনরা নানা শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান। 

বর্তমানে হত্যা মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় রয়েছেন। এরপর থেকেই হত্যা মামলার মাস্টারমাইন্ড সাদ্দাম হোসেন ও রাসেলের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন আসামি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নিহতের বড় ভাই, বোন ও তাদের মাকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।

এমনকি তার পাশাপাশি নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে আসামি পক্ষের লোকজন। এ কারণে মামলার বাদী ও তার পরিবারের লোকজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।  

নিহত আইয়ুব আলীর বৃদ্ধা মা আয়েশে বেগম (৫৮) এখনো শোকে কাতর। ছেলে হারানোর সেই করুণ আর্তনাদ আজও শেষ হয়নি। মরার আগে ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে যেতে চান তিনি।

নিহত আইয়ুব আলীর বড় ভাই নবীর হোসেন বলেন, আসামি সাদ্দাম ও রাসেলের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের নানা রকম হুমকি দিয়ে আসছে।

তাদের ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এখন আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছি। দ্রুত বিচার আইনে ভাই হত্যার বিচার চাই।

আইয়ুব আলীর বোন আদুরী বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথে আসামিরা   আমাকেও বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখান। 

নিহতের পরিবারকে হুমকি ব্যাপারে হত্যা মামলার আসামি  রাসেল, জুয়েল, শরীফ এর বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছে, হামলাকারীদের সবাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাদ্দাম হোসেনের সহযোগী। সাদ্দাম সৌদি আরব থাকলেও তার এই সহযোগীরা এখনও এলাকায় নানা অপকর্মে জড়িত।

এ বিষয়ে আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন বলেন, হত্যা মামলার বাদীকে আসামিরা হত্যার হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আড়াইহাজারে হত্যা মামলা তুলে নিতে হুমকি, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বাদী
  • নির্বাচনের চাপ বাড়াতে ‘দ্রুত আন্দোলনে যাবে’ বিএনপি 
  • ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সব দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে
  • গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার: তারেক রহমান
  • চীনের বসন্ত উৎসবে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
  • আ. লীগের হরতাল-অবরোধ ঘিরে কঠোর হবে সরকার: প্রেস সচিব
  • বৈষম্যবিরোধীদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান অগ্রহণযোগ্য
  • রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও জনগণের ‘ম্যাট্রিক্স’
  • জনগণের বিপক্ষে গেলে ৫ আগস্টের মতো পরিণতি হবে: তারেক রহমান
  • সবাইকে দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে: তারেক রহমান