দেশের কোন কোন আদালতে এখনো লোহার খাঁচা রয়েছে, জানতে চান হাইকোর্ট
Published: 13th, January 2025 GMT
দেশের কোন কোন আদালতের ভেতরে (অধস্তন আদালতের এজলাস কক্ষ) এখনো লোহার খাঁচা রয়েছে, কোন কোন আদালত থেকে খাঁচা সরানো হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে আইনসচিবকে আদালতে অগ্রগতি (কমপ্লায়েন্স) প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
অধস্তন আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে ১০ আইনজীবী গত বছরের ২৩ জানুয়ারি রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। দেশের কোন কোন আদালতের ভেতরে (অধস্তন আদালতের এজলাস কক্ষ) লোহার খাঁচা রয়েছে, এ বিষয়ে ৬০ দিনের মধ্যে আইনসচিবকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আদালতে ওঠে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
পরে আইনজীবী শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, দেশের অধস্তন আদালতে কোথায় কোথায় এখনো লোহার খাঁচা রয়েছে, কোন কোন আদালত থেকে খাঁচা সরানো হয়েছে, সে বিষয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে কমপ্লায়েন্স (প্রতিবেদন) দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি দিন রাখা হয়েছে। কোনো সভ্য সমাজে লোহার খাঁচার পদ্ধতি নেই, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন আদালত।
ঢাকার আদালত থেকে ইতিমধ্যে লোহার খাঁচা সরানো হয়েছে বলে শুনানিতে উল্লেখ করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চার সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করেছেন আদালত। এর মধ্যে যদি সব খাঁচা সরানো হয়ে যায়, তাহলে কমপ্লায়েন্স দিতে হবে নতুবা আপডেট (হালনাগাদ) জানাতে হবে।
গত বছর যখন রিটটি করা হয়, তখন রিট আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের লোহার খাঁচা অতীতে ছিল না। ৮৪টি আদালতে এ ধরনের খাঁচা বিদ্যমান, যার মধ্যে ৭৪টি ঢাকায় অবস্থিত। এ ধরনের খাঁচা ব্যবস্থাপনা সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ৩৫ (৫)-এ বলা আছে, কারও সঙ্গে নিষ্ঠুর অমানবিক আচরণ করা যাবে না; অথচ এই খাঁচাব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে নিষ্ঠুর অমানবিক ও বর্বর আচরণ করা হচ্ছে, মূলত এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।
আর সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ অমান্য করে আদালতের ভেতর লোহার খাঁচা বসানোর কার্যক্রম কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। আদালতের কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা অপসারণ করে কাঠের ডক আবার প্রতিস্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও রুলে জানতে চাওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মেসির হয়ে কেন বক্সিংয়ে লড়তে চান তাঁর বডিগার্ড
রিংয়ে লড়াইটা তাহলে হচ্ছেই? অন্তত পরিস্থিতি সেটাই বলছে। একটি শর্তে লিওনেল মেসির বডিগার্ড ইয়াসিন চুকোর সঙ্গে লড়তে রাজি হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের লোগান পল। শর্তটি হলো, চুকোকে হারের পর পলের পানীয় ‘প্রাইম’ পান করতে হবে।
আসলে ঝামেলার শুরুও এই পানীয় নিয়েই। ব্যবসায়িক অংশীদার কেএসআইয়ের সঙ্গে ২০২২ সালে ‘প্রাইম’ নামে একটি পানীয় বাজারজাত শুরু করেন লোগান। এরপর মেসিও ‘মাস+’ নামে একটি পানীয়ের ব্র্যান্ড গত বছর জুন থেকে বাজারজাত শুরু করেন। কিন্তু পানীয় দুটির প্যাকেজিং ও ডিজাইন প্রায় একই রকম হওয়ায় আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। লোকে অভিযোগ করেন, পানীয় দুটি কিনতে গিয়ে তাঁরা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন।
আরও পড়ুনরোনালদোর ছেলের জন্য পাঁচ দেশের দরজা খোলা ১ ঘণ্টা আগেগত অক্টোবরে নিউইয়র্কে প্রাইমের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন মেসির আইনজীবীরা। প্রাইমকে ‘অ্যান্টিকম্পিটিটিভ’-এর দোষে অভিযুক্ত করা হয় মেসির ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে। প্রাইমকে নোংরা বিপণন-পরিকল্পনার দায়ে অভিযুক্ত করেন মেসির কৌঁসুলিরা। এক মাস পর লোগানের আইনজীবীরা মেসির ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে অনুকরণের অভিযোগ তুলে পাল্টা মামলা করেন।
লোগান এরপর গত মাসে টিকটকে পোস্ট করা ভিডিওতে বলেন, বক্সিংয়ের রিংয়ে লিওনেল মেসি তাঁর সঙ্গে লড়াই করলে আদালত থেকে মামলা তুলে নেবেন। তাঁর সেই চ্যালেঞ্জের জবাবও দেন মেসির বডিগার্ড চুকো। কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, অনুশীলন সেশনে একজনের প্রশ্নের উত্তরে লোগানকে নিয়ে চুকো বলছেন, ‘লোকটি কে, লিও তা জানে না। সে যদি সত্যিই লড়াই করতে চায়, তবে আমার সঙ্গে লড়তে পারে।’ কমব্যাট স্পোর্টসের এক্স হ্যান্ডল ‘হ্যাপি পাঞ্চ’-এ ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।
চুকোর এই চ্যালেঞ্জের পর লোগান আর কোনো জবাব দেননি। কিন্তু চুকো এটুকুতেই থামেননি। দুই দিন আগে নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে লোগানের জন্য একটি ভিডিও পোস্ট করেন চুকো। সেই ভিডিওতে চুকো বলেন, ‘শোনো লোগান, এই ভিডিও করেছি কারণ, রাস্তায় ও ইনস্টাগ্রামে অনেকের অনেক বার্তা ও মন্তব্য পেয়েছি এই লড়াই নিয়ে। আসো মানুষের জন্য এই লড়াই করি। চলো এটা করি।’ লোগান এ ভিডিওতেই মন্তব্য করেন, ‘আমার ভাই অন্য কিছু ভেবেছিল।’ মেসির বডিগার্ড উত্তর দেন, ‘কেন? ভয় পাচ্ছ? বড় বড় কথা বলে পিছু হটছ?’
আরও পড়ুন‘অসম্মানের ম্যাচ’ জিতে রিয়ালকে আরও পেছনে ফেলল বার্সা১ ঘণ্টা আগেঘটনা এখানেই থামেনি। ইউটিউবে গত বুধবার রাতে পোস্ট করা নিজের সাপ্তাহিক ভিডিও ব্লগে লোগান এর উত্তর দিয়েছেন। ভিডিওতে লোগানকে বক্সিং অনুশীলন করতে দেখা যায়। তখন কেউ একজন তাঁকে মেসির বডিগার্ডের চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানান। লোগান এরপর একটি শর্তে চুকোর সঙ্গে লড়াইয়ে রাজি হয়ে বলেছেন, ‘তাকে (চুকো) আচরণ ঠিক করতে বলো। এমএমএতে খেলা কেউ ভাবছে, সে বক্সিং করতে পারে। সে ভাবছে, মেসির বডিগার্ড বলেই সে জিততে পারে এবং লোকজনের মনোযোগ কাড়তে পারে।’
লোগান এরপর বলেন, ‘আমি এখন পুয়ের্তো রিকোয় আছি। পুয়ের্তো রিকোয় আমাকে থামাতে চাইলে তোমাকে স্বাগতম। কিন্তু যখন আমি তোমাকে হারাব, তারপর তোমাকে প্রাইম পান করতে হবে।’ লোগান যোগ করেন, ‘মেসির জন্য আমার সত্যিই খারাপ লাগছে। কারণ, সে মামলায় হেরে যাবে। হয়তো বডিগার্ডকেও হারাবে। কারণ, একজন ইউটিউবারের কাছে হেরে গেলে তাকে রাখার কী দরকার। বিশ্বকাপ বাদে সে সবকিছুই হারাচ্ছে।’
মেসি ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর চুকোকে বডিগার্ড হিসেবে নিয়োগ দেন। ৩৫ বছর বয়সী ইয়াসিন চুকো আমেরিকান। আমেরিকান বাবা ও ফরাসি মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া চুকোর উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম লা নাসিওন এর আগে জানিয়েছিল, সাবেক মিক্সড মার্শাল আর্টিস্ট ইয়াসিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর সাবেক নেভি সিল—আফগানিস্তান ও ইরাকে কাজ করেছেন। যদিও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন জানিয়েছে, নেভি সিলে বর্তমান সদস্যদের কেউ তাঁর নাম শোনেননি এবং নেভি সিল ডেটাবেজেও ইয়াসিনের নাম নেই। সে যা–ই হোক, তায়কোয়ান্দো ও বক্সিংয়ে বিশেষভাবে দক্ষ ইয়াসিন। মাঠ ও মাঠের বাইরে মেসি ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইয়াসিনের ৫০ জনের একটি দল আছে। দিন–রাত মিলিয়ে ইয়াসিনকে ২৪ ঘণ্টাই মেসি ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়।
লোগান পল রেসলার হিসেবে ২০২২ সালে ডব্লিউডব্লিউইয়ের সঙ্গে চুক্তি করেন। খণ্ডকালীন রেসলার হিসেবে তাঁকে সেখানে দেখা যায়। ২০২১ সালে ফ্লোরিডায় সাবেক বক্সার ফ্লয়েড মেওয়েদারের সঙ্গে প্রদর্শনী লড়াইয়েও অংশ নেন লোগান। পেশাদার বক্সার ও ইনফ্লুয়েন্সার জ্যাক পল তাঁর ভাই।