অপরাধ দমনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে: আইজিপি
Published: 13th, January 2025 GMT
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, অপরাধ দমনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। এছাড়া চাঁদাবাজি, ছিনতাই, খুন ও মাদকসহ সব অপরাধ দমনে শতভাগ চেষ্টা করতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি কোন প্রতিকূলতা থাকে সেটি মোকাবেলা করে পেশাগত দায়িত্ব চালিয়ে যেতে হবে।
সোমবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিসেম্বর মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে আইজিপি এ কথা বলেন। মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে। ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করতে হবে। দায়িত্ববোধ ও আগ্রহ থেকে সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, মামলা তদন্তে অগ্রগতি আরও বাড়াতে হবে। থানায় জিডি করার এক ঘণ্টার মধ্যে রেসপন্স করতে হবে এবং সে সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করতে হবে। এছাড়া চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। চোরাই মোবাইল ফোন কোথায় বিক্রি করা হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) ফারুক আহমেদ বলেন, মামলা তদন্ত সঠিকভাবে করতে হবে ও তদন্তে আরও গতিশীলতা আনতে হবে। মামলা তদন্তে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
অপরাধ সভায় অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, অপরাধ দমনে ট্রাফিক পুলিশ থানা পুলিশকে যেকোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। সেক্ষেত্রে থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তার মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবে।
অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। কোনভাবেই চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
সভায় ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেন গত বছরের ডিসেম্বর মাসের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি, খুন, অপমৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করেন। মাসিক অপরাধ সভায় ডিসেম্বর মাসে ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানসহ ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করেন ডিএমপি কমিশনার।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাগরদাঁড়ীর মধুমেলা
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় উৎসব সাগরদাঁড়ীর মধুমেলা।
আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য হলো মেলা। বাংলাসাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মোৎসবকে ঘিরে এ মেলার আয়োজন হয়। এ বছর মহাকবির ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী এ মেলা।
জানা যায়, ১৯১৯ সালে মধুসূদন দত্তের জীবনীগ্রন্থের লেখক নগেন্দ্রনাথ সোম তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে সাগরদাঁড়ী এসে মধুসূদনের জন্মোৎসব উদযাপন করেন। তিনি তাঁর গ্রন্থ ‘মধু-স্মৃতি’র ভূমিকায় লিখেছেন, ‘মধুসূদনের জন্মতিথির উৎসব উপলক্ষে আমি বাঙ্গালা ১৩২৬ সনের ১২ মাঘ (১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ) তাঁহার জন্মভূমি সাগরদাঁড়ী গ্রামে অবস্থিতি করিয়াছিলাম।’ তখন থেকেই সাগরদাঁড়ীতে শুরু হয়েছিল মধুসূদন স্মরণানুষ্ঠানের।
শুরু থেকে এই জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানের জন্য সর্বস্তরের জনসাধারণের সমন্বয়ে গঠিত হতো ‘মধুসূদন জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটি’। তারাই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। তখন বলা হতো ‘মধুসূদন জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান’ বা ‘মধুজয়ন্তী’। ১৯৭৩ সালের ২৫ জানুয়ারি সাগরদাঁড়ীতে দুই বাংলার খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকের মিলনমেলায় তৎকালীন তথ্য ও বেতারমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ওইদিন উপস্থিত পল্লিকবি জসীম উদ্দীন তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেছিলেন, ‘মধুসূদন স্মরণোৎসব’। এর আগে থেকে এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে তা পরিচিতি পায় ‘মাইকেল উৎসব’ নামে। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা (বিসিক) মধুসূদন স্মরণোৎসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শুরু করে। তারাই এটিকে ‘মধুমেলা’ নামকরণ করে।
১৯৯৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস মধুমেলার উদ্বোধন করেন। ওই বছর থেকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ মেলার পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। ২০০১ সাল থেকে এর আয়োজন করা হয় ‘যশোর জেলা প্রশাসন’ থেকে।
এ বছর সাত দিনব্যাপী ‘মধুমেলা’য় ছিল মহাকবির জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, নাটক পরিবেশনা। মেলাঙ্গনে ছিল যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ, জাদু প্রদর্শনী, মৃত্যুকূপ, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন আয়োজন। ১৯৯৪ সাল থেকে মেলাঙ্গনের এক অংশে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে থাকে কৃষিমেলা। এলাকার কৃষকরা সারাবছর তাদের উৎপাদিত সেরা পণ্য নিয়ে মধুমেলার অপেক্ষায় থাকেন। এ ছাড়া কুটিরশিল্পসহ গ্রামীণ পণ্যের পসরা বসে মধুমেলায়।
সাতক্ষীরা থেকে মা-বাবার সঙ্গে মধুমেলা দেখতে আসা শিক্ষার্থী তাহসিনা ফারিয়া জানায়, ‘এবারই প্রথম মধুমেলায় এসেছি। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত সম্পর্কে বইয়ে পড়েছি। এখানে এসে মধুসূদনের বসতভিটা, মধুপল্লি, কপোতাক্ষ নদসহ মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে অনেক মজা পেয়েছি।’
কেশবপুর উপজেলার কলাগাছি গ্রামের ইসরাফিল হোসেন বলেন, ‘এবারের মধুমেলায় ব্যতিক্রম ছিল কৃষিমেলা। সেখানে থাকা বিভিন্ন কৃষিপণ্য দেখে ভালো লেগেছে। বলা যেতে পারে, মেলার ভেতর আরেক মেলা।’
মা-বাবার সঙ্গে যশোর থেকে মধুমেলা দেখতে আসা শিক্ষার্থী আবির বিন হেলাল জানায়, ‘মেলায় এবারই প্রথম এসেছি। কৃষিমেলায় এসে ২৫ কেজি ওজনের মিষ্টিকুমড়া ও ছয় ফুট উচ্চতার ৩৭ কেজি ওজনের মানকচু দেখে ভালো লেগেছে। এ ছাড়া অন্যান্য কৃষিপণ্যও পছন্দ হয়েছে।’
সাগরদাঁড়ী মধুসূদন একাডেমির পরিচালক মধুসূদন গবেষক ও কবি খসরু পারভেজ বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ উৎসব মধুমেলা। কালে কালে মধুসূদন স্মরণোৎসব বাংলাদেশের একটি বড় লোকমেলায় রূপান্তরিত হয়েছে। যশোরবাসীর কাছে, কেশবপুরবাসীর কাছে, সাগরদাঁড়ীবাসীর কাছে অনেক বেশি উচ্ছ্বাস ও আনন্দের মেলা। এ মেলার মধ্য দিয়ে যেমন আমাদের সংস্কৃতির বিকাশের সুযোগ ঘটে, তেমনি আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে মধুসূদনের জীবন ও সাহিত্য সম্পর্কে জানা-বোঝার সুযোগ ঘটে।’
সাগরদাঁড়ীর পোস্টমাস্টার মুফতি তাহেরুজ্জামান তাছু বলেন, ‘মধুমেলা উপভোগ করার জন্য শুরুতেই সাগরদাঁড়ী এলাকাসহ চারপাশের গ্রামে আত্মীয়স্বজন আসতে শুরু করে। অনেকেই মেয়ে-জামাই, বন্ধু-বান্ধবসহ আত্মীয়দের দাওয়াত দেন। আত্মীয়দের রসপিঠা খাওয়ানোর জন্য মেলার এক মাস আগে থেকে চালের গুঁড়া তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। মেলার সময় প্রতিটি বাড়িতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। মধুমেলায় কয়েক লাখ দর্শনার্থী ও মধুপ্রেমীর সমাগম ঘটে।’
মধুপল্লির কাস্টডিয়ান হাসানুজ্জামান বলেন, ‘মধুমেলা উপলক্ষে মধুপল্লি সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। দর্শনার্থীরা মধুপল্লিতে কবির ভাস্কর্য, প্রসূতিস্থল, কাছারিবাড়ি, স্মৃতিবিজড়িত আসবাব ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র দেখতে পারছেন।’
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘মধুমঞ্চে সপ্তাহব্যাপী কেশবপুর ও যশোরের শিল্পীগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা অংশ নেন। দর্শনার্থীদের মধুমেলা উপভোগ করতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, তার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা থাকে।’ v