ভারতসহ কয়েকটি দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি ছড়িয়ে পড়লেও প্রতিরোধে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশনে সতর্ র্তকতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোনো রকম স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই এই বন্দর দিয়ে যাত্রীরা ভারত ও ভুটানে যাতায়াত করছেন। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি পণ্য নিয়ে ট্রাকচালক ও হেলপাররা দুই দেশে বেশি আসা-যাওয়া করছেন। তবে, বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সরকারি নির্দেশনা না থাকলেও, মৌখিকভাবে তাদের  সচেতন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থলবন্দরের গেইটে দুজন দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় বন্দরের ভেতরে কর্মকর্তাদের বসে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু কোথাও এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো রকম  যন্ত্রপাতি কিংবা স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। কাগজপত্র সঠিক থাকলেই যাত্রীরা ভারতে প্রবেশ করতে পারছেন বা আসতে পারছেন। 

স্থানীয়রা বলছেন, তারা এ ভাইরাস সম্পর্কে অবগত নন। তবে সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এই ভাইরাস যেহেতু ভারতে শনাক্ত হয়েছে, সেহেতু বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার যন্ত্রপাতি বসানো উচিত।

হালুয়াঘাটের বাসিন্দা ভারতের পাসপোর্টধারী যাত্রী আকরাম হোসেন বলেন, ‘‘আমার এক ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছি এই ভাইরাসের নাম। যদি করোনার মতো এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে মুশকিল হয়ে যাবে। এ জন্য আগে থেকেই সতর্কতার সঙ্গে অবশ্যই কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমি মনে করি।’’

আরেক যাত্রী সাব্বির আহম্মেদ বিস্মিত কণ্ঠে বলেন, ‘‘ভাই কি যে ভাইরাসের কথা আপনারা বলেন! আমি মাস্ক সবসময় ব্যবহার করি এবং পরিস্কার থাকার চেষ্টা করি। এসব ভাইরাস-টাইরাস আমাদের শরীরে আসবে না। কারণ আমাদের শরীর ফিট।’’ 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল বলেন, ‘‘করোনার সময় বন্দর বন্ধ আছিল। যদি, নতুন করে এই ভাইরাস আসে, তাহলে তো আগে থেকেই ঠিকঠাক থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে বন্দরের ভেতরে কিংবা বাইরে পরীক্ষা করার যন্ত্রপাতি বসানো উচিত।’’      

নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘এখনো ওইভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সরকারিভাবে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। এই বন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে পরীক্ষা ছাড়াই যাত্রীরা যাতায়াত করছেন। তবে মৌখিকভাবে সচেতন করে যাচ্ছি আমরা।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনারা জানেন যে, এই বন্দর দিয়ে মূলত ভারত ও ভুটান থেকে যাত্রী পারাপার বেশি হয়। গত মাসে এই বন্দর দিয়ে প্রায় তিন শতাধিক যাত্রী পারাপার করেছেন। তবে, এ মাসে এখন পর্যন্ত তেমন যাত্রী পারাপার হয়নি। তারপরও যারা পারাপার হচ্ছেন তাদের মৌখিকভাবে সচেতন করছি এবং পরামর্শ দিচ্ছি।’’

জেলা সিভিল সার্জন ডা.

মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘‘মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। নির্দেশনা পেলে অবশ্যই সেভাবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করবে।’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই ভাইরাসে কেউ যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে সাধারণত জ্বর, সর্দি ও কাশি হয়, নাক বন্ধ হয়ে যায়, শরীরে ব্যথা অনুভব হয়। এটি অন্য জ্বরের মতো। তবে, শিশু, বয়স্ক ও বয়স্ক যেসব ব্যক্তি ক্যানসার বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে।’’ 

তবে ভয়ের কিছু নেই বলেও জানান এই সিভিল সার্জন। 

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দেড় মাস ধরে বন্ধ সীমান্ত

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে সে দেশের সরকার। কারণ, ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে টেকনাফে আসার পথে পণ্যবাহী নৌযানগুলো আটকে দেয় দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা।

টেকনাফভিত্তিক আমদানি–রপ্তানিকারকেরা জানান, গত ১৬ জানুয়ারি তিনটি নৌযান আটকের পর ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো পণ্যবাহী নৌযান টেকনাফে আসেনি। ওই ঘটনার চার দিন পর পণ্যবাহী দুটি নৌযান ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যটি ছাড়ে ১৬ দিন পর। এ ছাড়া গত ১০ ফেব্রুয়ারি শাহপরীর দ্বীপের গোলারচর থেকে স্পিডবোটে ধাওয়া করে কাঠবোঝাই একটি ট্রলার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। সেটি এখনো ছাড়েনি তারা। তবে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের বাণিজ্য সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে।

স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বলেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। এতে টেকনাফের ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় ও বিপাকে পড়েছেন।

টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, নাফ নদী ও সাগরে আরাকান আর্মি পণ্যবাহী নৌযান আটেক দেওয়ায় টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার।

এদিকে সরেজমিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কোনো কর্মব্যস্ততা নেই। জেটিতে শুধু চালভর্তি একটি ট্রলার রয়েছে। আরেকটি ট্রলারে সিমেন্ট ও পানির বোতল ভর্তি করে রাখা হয়েছে।

স্থলবন্দরের শ্রমিকনেতা আজগর আলী বলেন, ‘শুধু মংডুর সঙ্গে টেকনাফের বাণিজ্য থেমে থেমে চলছে। গত দুই দিনে মংডু থেকে ৪ হাজার ৩০০ বস্তা চাল নিয়ে দুটি ট্রলার এসেছে। কোনো পণ্য না আসায় বসে থাকতে হচ্ছে। আমাদের আর কোনো আয়-রোজগারও নেই। খুব বেকায়দায় আছি আমরা।’

শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে ২৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানির বিপরীতে ৯১ কোটি টাকার রাজস্ব পায় সরকার। রাখাইনে সংঘাতের কারণে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল দুই কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন পণ্য।

টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক এনাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য মূলত ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের সঙ্গে হয়। কিন্তু দুঃখজনভাবে গত দেড় মাস ধরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘দেশটিতে সংঘাতের কারণে উভয় দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি সীমান্ত বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা হতাশ।

মাছ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম কায়সার জুয়েল বলেন, ‘মিয়ানমারের রুই, কাতলা ও ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে রমজানে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে চাহিদা বৃদ্ধি পায়; কিন্তু এবার কোনো মাছই আসছে না। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে দুই দেশের সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।’

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত দেড় মাসে ইয়াঙ্গুন-আকিযাব বন্দর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্যবাহী নৌযান আসেনি। তবে মংডু টাউনশিপ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি থেমে থেমে হচ্ছে। তা–ও আবার সীমিত পরিসরে।’

স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা বিএম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, মিয়ানমার থেকে পণ্য আসা বন্ধ থাকায় দৈনিক ৪ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

মিয়ানমার থেকে সাধারণত ছোলা, পিঁয়াজ, রসুন, জিরা, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, আচার, শুকনা সুপারি ও নারকেলসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়।

জানতে চাইলে টেকনাফর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের জলসীমায় সে দেশের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে দেয়। এতে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চারটি স্থলবন্দর বন্ধ করার সুপারিশ
  • অলাভজনক ও নিষ্ক্রিয় ৪ স্থলবন্দর বন্ধের সুপারিশ
  • অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন ৪ স্থলবন্দর বন্ধের সুপারিশ
  • টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দেড় মাস ধরে বন্ধ সীমান্ত