রাবির দ্বাদশ সমাবর্তন ১৭ ফেব্রুয়ারি
Published: 13th, January 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দ্বাদশ সমাবর্তন আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তন আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যাবলী পরবর্তীতে জানানো হবে।
এর আগে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে এ সমাবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে সেটা স্থগিত হয়। ২০২৪ সালের জুনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং ২৮ নভেম্বর সমাবর্তনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু জুলাই বিপ্লবে দেশের পটপরিবর্তন হলে ফের স্থগিত হয়ে যায়।
পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুসারে, দ্বাদশ সমাবর্তনে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে স্নাতক/স্নাতক (সম্মান), ২০১৭ ও ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এমবিবিএস, বিডিএস, ডিভিএম এবং ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এমফিল, এমডি, পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবেন।
তবে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারীরা যেকোন একটির জন্য রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ পেয়েছেন। প্রত্যেক আবেদনকারীদের অনলাইনে ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, “ভালো-মন্দ মিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। একটা ভালো খবর, অনেক চেষ্টার পর আমরা দ্বাদশ সমাবর্তনের একটা তারিখ পেয়েছি, আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি। ৬ হাজারের বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। সবার সহযোগিতা কামনা করছি।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এক সময়ের বনদস্যুর ‘বয়ানে’ সুন্দরবনে দস্যুতার দিনগুলো
সুন্দরবনে দস্যুতায় টাকা ছিল। কিন্তু সে অবৈধ টাকা নিজেরা উপভোগ করতে পারতেন না। বনের মধ্যে সব সময় মৃত্যুঝুঁকি তাড়িয়ে বেড়াত, এক ঘণ্টা শান্তির ঘুমও হতো না। মোটেও সুখ ছিল না। দস্যুতার জগতে গিয়ে নিজের প্রাপ্তি বলতে নামের সঙ্গে জুড়ে গেছে ডাকাত শব্দটি। স্ত্রী-সন্তানদেরও চলতে হতো মাথা নিচু করে। কথাগুলো একসময়ের বনদস্যু আল-আমীনের।
আল-আমীন বলেন, দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তিনি ভালোই আছেন। আর কখনো ওই অন্ধকার পথে পা বাড়াতে চান না তিনি। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা হয় কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা খোড়লকাঠি বাজারসংলগ্ন কয়রা নদীর তীরে। ছোট বাজারটিকে সুন্দরবন থেকে আলাদা করেছে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়রা নদী।
নদীর ওপারের সুন্দরবনের ত্রাস ছিলেন আল-আমীন। তিনি বলেন, তখন শরীফ বাহিনী ছিল বড় দস্যুদল। সেই দলে যোগ দিয়ে ডাকাত হয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নাম ছড়িয়ে গেলে বাড়ি ফেরার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা সুন্দরবনের মধ্যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন। র্যাব আর কোস্টগার্ডের অভিযানের ভয়ে বনের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত ভয় আর উৎকণ্ঠায় কাটত তাঁদের।
আল-আমীনের বলতে থাকেন, ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছিল তাঁর গণ্ডি। বাড়ি ফেরার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠত। অপরাধের জগৎ ছেড়ে ভালো হতে চাইতেন, তবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ২০১৮ সালের শেষের দিকে সুযোগ আসে। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। দস্যুনেতা শরীফ না চাইলেও তাঁকে কৌশলে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁরা দলের ১৭ জন সদস্য ১৭টি অস্ত্র আর ২ হাজার ৫০০ গুলিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
দস্যুজীবন যাঁরা একবার দেখেছেন, তাঁরা না খেয়ে থাকলেও আর দস্যুতায় ফিরতে চান না—এমনটাই দাবি আল-আমীনের। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গল্প গল্পে তিনি বলেন, ডাঙায় থাকা মাছ ব্যবসায়ীরা ডাকাতদের বাজার, বন্দুক, গুলি সবই সাপ্লাই দিতেন। সব জিনিসের দাম নিতেন তিন থেকে চার গুণ বেশি।
বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সব শেষ দস্যুদল হিসেবে আত্মসমর্পণ করে শরীফ বাহিনী। সেদিনই প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। তবে দস্যুনেতা শরীফ গত বছরের ৫ আগস্টের পর আবার সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন বলে তাঁর একসময়ের সাথীদের ভাষ্য।
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। তিনি বলেন, দলনেতা শরীফের পুরো নাম করিম শরীফ। কয়রার আল-আমীন ছিল বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। শরীফ প্রথমে আত্মসমর্পণে রাজি থাকলেও পরে বেঁকে বসেন। অন্যরা আত্মসমর্পণ করেন। তবে শরীফ এখন পুনরায় সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম আবদুল মালেক বলেন, বনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কমে আসায় সুন্দরবনে আবারও দস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। এভাবে দস্যুতা চলতে থাকলে বনজীবীদের জীবিকা, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আদায় ও পর্যটন হুমকির মুখে পড়বে; বিপন্ন হবে বন্য প্রাণী আর প্রাণবৈচিত্র্য। দস্যুতা দমনে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।