শীতে যাদের প্রচুর চুল পড়ছে তারা কুমড়ার বীজের তেল মাখতে পারেন। কুমড়ার বীজ যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তেমনি এর তেল চুলের জন্য ভালো। এই বীজের তেল চুল পড়া বন্ধ করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ক্রমশ নতুন চুল গজালে চুল হয় ঘন ও সুন্দর। 

পুষ্টিবিদরা বলছেন, ভিটামিন ই, সি, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়ার বীজের তেল খেলে ত্বক এবং চুলও ভালো থাকে। আবার, এই তেল মাথায়ও মাখা যায়।

মাথায় কুমড়ার বীজের তেল মাখলে কী হয়?
নতুন চুল গজাতে উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে কুমড়ার বীজের তেল। নিয়মিত মাখলে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। কেননা কুমড়ার বীজের তেল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ। এতে নানা ধরনের ভিটামিন, প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় ফলিকলগুলো মজবুত হয়। এছাড়া চুল পাতলা হয়ে যাওয়া বা ঝরে পড়ার সঙ্গে যুক্ত বিশেষ একটি হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে কুমড়ার  বীজের তেল। অবশ্য কুমড়ার বীজের তেল শুধু মাখলেই হবে না, খেতেও হবে।

যেভাবে ব্যবহার করবেন
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে কুমড়ার বীজের তেল মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করতে হবে। রক্ত সঞ্চালন ভালো হলে ফলিকলে অক্সিজেন পৌঁছায়। নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। ম্যাসাজ করার পর আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। চাইলে সারা রাত মাথায় তেল রেখে দিতে পারেন। তবে সরাসরি মাথায় কুমড়ার বীজের তেল না মেখে তা নারকেল বা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে মাখা যেতে পারে। তারপর রাসায়নিক-বর্জিত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ বার এই তেল মাখলে উপকার পাবেন। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার নিয়ে সবক ও শঙ্কা

অন্তর্বর্তী রাজনীতি এখন দ্রুত একটা অবয়ব নিতে যাচ্ছে। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলছে। বিএনপির নেতারা কয়েক দফায় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। সংবাদমাধ্যমে জানতে পারলাম, কিছু বিষয়ে তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। একটি প্রস্তাব ছিল, কেউ টানা দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। আরেকটি প্রস্তাব হলো একই ব্যক্তি দলের শীর্ষ নেতা, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। বিএনপির এতে ঘোর আপত্তি।

প্রথমে বলা দরকার, এই প্রস্তাব কেন এল। এটা তো আসমান থেকে টুপ করে পড়েনি। তার একটা পরিপ্রেক্ষিত আছে। আমরা নিকট অতীতে দেখেছি, কেউ একবার ক্ষমতা হাতে পেলে আর ছাড়তে চান না। ছলে–বলে–কৌশলে সেটি ধরে রাখতে চান। ফলে আমরা দেখেছি, একের পর এক তামাশার নির্বাচন, প্রধান বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন এবং মানুষকে জিম্মি করে ভয়াবহ সন্ত্রাস। এর তো একটা শেষ হতে হবে।

দুনিয়ায় আমরা তো একমাত্র রাষ্ট্র নই। আরও দেশ আছে। সেসব দেশেও আমরা দীর্ঘকাল ‘নির্বাচিত’ স্বৈরশাসন দেখেছি। উদাহরণ হিসেবে আমরা ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, মিসর, জিম্বাবুয়ের নাম বলতে পারি। এসব দেশে নামকাওয়াস্তে নির্বাচন হতো। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট প্রতিবারই বিপুল ভোটে ‘নির্বাচিত’ হতেন। এসবের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ভীষণ। সেসব দেশে গণ-অভ্যুত্থানে কিংবা সেনা-অভ্যুত্থানে সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। সেখান থেকে মানুষ শিক্ষা নিয়েছে। ফিলিপাইন আর দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ সংবিধানে এমন একটি ধারা ঢুকিয়েছে যে কেউ এক মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন না। ফলে ওই সব দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বেগবান হয়েছে।

বিএনপি নেতারা দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছেন। কেন দিয়েছেন তা তাঁরা জানেন, আমরাও বুঝি। কিন্তু মুখে তাঁরা এটি বলবেন না। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গলায় প্রায়ই শুনতাম, রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশে নাকি স্থিতিশীলতা আসে না, উন্নয়ন হয় না। এর অর্থ হলো, তিনিই ক্ষমতায় থাকবেন ধারাবাহিকভাবে। তাঁর অনুচর আর চাটুকারেরা বলাবলি করত, দেশে যত উন্নয়ন হচ্ছে, এসবই তাঁর অবদান।

উন্নয়ন যে সরকারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে, ব্যক্তির মর্জির ওপর নয়; উন্নয়নের খরচ আসে জনসাধারণের ট্যাক্সের টাকায়, নেতার পকেট থেকে আসে না—এটা তাদের কে বোঝাবে। আসলে এটা হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। এক জমিদার একটা পুকুর কাটালেন, স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেন বা রাস্তা বানালেন। প্রজারা খুশিতে ডুগডুগি বাজাল, আমাদের জমিদার কত মহানুভব। কিন্তু তিনি নায়েব, গোমস্তা, লাঠিয়াল দিয়ে কী পরিমাণ খাজনা আদায় করলেন, কতজনকে ভিটাছাড়া করলেন, সেটি নজরে পড়ে না।

বিএনপি এক ব্যক্তিকে সামনে রেখেই এসব প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে বলে মনে হয়। দলনেতা, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী যদি তিনজন আলাদা ব্যক্তি হন, তাহলে বিএনপির সমস্যা কী? অসুবিধা একটা আছে। হয় দলের সর্বময় কর্তৃত্বের মালিকের এই ইচ্ছা, অথবা এটি এমন একটি দল, যেখানে ন্যূনতম তিনজন নেতা নেই, যাঁরা এই তিনটি দায়িত্বে থাকতে পারেন। কেন একই ব্যক্তিকে দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে? দেশে আর যোগ্য লোক নেই? হ্যাঁ, বলতে পারেন, অন্যান্য সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে তো প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেওয়া নেই। অকাট্য যুক্তি।

কিন্তু আমাদের দেশটা কি ওই সব দেশের মতো? আমরা তো অনন্য! অন্যান্য দেশে আমাদের দেশের মতো জীবিত নেতার পূজা, মৃত নেতার কবরপূজা, নেতার পরিবারের পূজা হয় কি?

আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। বাহাত্তরের সংবিধান লেখা হয়েছিল এক ব্যক্তির মুখের দিকে চেয়ে। ফলে তিনি হয়ে যান সর্বময় কর্তা। মন্ত্রিসভা জাতীয় সংসদের কাছে নয়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়বদ্ধ করা হয়। এটা ছিল সংসদীয় ব্যবস্থার আঁতুড়ঘর যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার একটা বিকৃত রূপ। সেটিকে জায়েজ করার জন্য উঁচু গলায় বলা হতো, ‘আমরা বিদেশি ইজমে বিশ্বাস করি না; আমাদের আছে দেশের আলো-বাতাসে তৈরি নিজস্ব সিস্টেম!’

এক-এগারো মানুষের মধ্যে জিজ্ঞাসা তৈরি করেছিল। যেদিন চুনোপুঁটি ছাড়াও রাঘববোয়ালেরা গ্রেপ্তার হচ্ছিল, দুর্বৃত্তরা দামি দামি গাড়ি ফেলে ভেগে যাচ্ছিল, তখন মানুষ খুশিতে বাহবা দিয়েছিল। মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু ওই সময়ের সেনানেতৃত্ব এক্সিট প্ল্যানের নাম করে এমন একটা ব্যবস্থা দিয়ে সরে পড়েছিল, যার মাশুল দিতে হয়েছে সমগ্র জাতিকে। আমরা চাই না এর পুনরাবৃত্তি হোক।

বিএনপি ধরেই নিয়েছে, নির্বাচন হলে তারা জিতবে। তাদের নেতা প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার বাগড়া দিচ্ছে কেন? এটা হচ্ছে পুরোপুরি একটা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি।

সমস্যা হলো, স্বাধীন চিন্তা করার মতো ব্যক্তি কি এই দলে নেই? হয়তো আছেন। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারেন না। তাঁদের সামনে আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার উদাহরণ আছে। তিনিও একই রকম সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এ নিয়ে দলের মধ্যে কোনো আলোচনাই হয়নি। আলোচনার সুযোগও ছিল না। এটি এমন একটি দল, যেখানে চেয়ারপারসনের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই চূড়ান্ত। দলটি এভাবেই তৈরি করেছিলেন জিয়াউর রহমান। কে দলে থাকবেন, কে থাকবেন না, তিনিই এ সিদ্ধান্ত নেন। দলে বাকি সবাই হ্যান্ডপিকড। কেউ নির্বাচিত নন। নেতার সুরে সুর মেলাতে না পারলে দলে কেউ থাকতে পারবেন না। সুতরাং হয় নেতার কথায় সায় দিন, ঝাঁপিয়ে পড়ুন, নইলে রাস্তা মাপুন।

আমাদের দেশের রাজনীতিতে অনেক মুখরোচক শব্দ আছে। অর্থ না বুঝেই আমরা অহরহ এসব আওড়াই। এ রকম একটি স্বাদু শব্দ হলো ‘গণতন্ত্র’। আমি ততটুকু গণতন্ত্র দেব, যতটুকু দিলে আমার নেতৃত্ব ঝুঁকিতে পড়বে না।

রাজনৈতিক দল হয় অনেক লোককে নিয়ে। সেখানে পারস্পরিক আলোচনা ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সবাই সব ব্যাপারে একমত হবেন, এটা সচরাচর ঘটে না। সে ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত হয়। এটা হলো ক্ল্যাসিক্যাল গণতন্ত্রের কেতাবি কথা। বাস্তবে এর চর্চা নেই আমাদের দেশে।

দেশে মাঝেমধ্যে দুর্যোগ আসে। এক-এগারো ছিল একটা বড় রাজনৈতিক সুনামি। তার ধাক্কায় রাজনৈতিক দলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়েছিল। পরে তারা এটি সামলে নেয়। কিন্তু তারা এ থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি। গণতন্ত্রের চর্চা ধারাবাহিকভাবে ব্যাহত হওয়ার কারণেই ২০২৪ সালে গণ-বিদ্রোহ সংঘটিত হলো। এখনো যদি আমরা নিজেদের না বদলাই, পুরোনো ধারাকেই আঁকড়ে থাকি, তাহলে সামনে আরও বড় ঝড় অপেক্ষা করছে।

রাজনৈতিক দলগুলোকে মানুষের মন পড়তে হবে। মানুষ তাঁদের সারমন বা ওয়াজ শুনতে আর রাজি নন। চব্বিশের জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। যখন সমাজের সব স্তরের মানুষ তাঁদের সমর্থনে বেরিয়ে এল, তখনই এটি সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিল।

এই আন্দোলনে জয় হয়েছে জনতার। পরাজিত হয়েছে রাজনৈতিক অলিগার্ক ও পারিবারিক সিন্ডিকেট। এর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এই আন্দোলনে অন্যান্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ থাকলেও এটি কোনো দলের ব্যানারে হয়নি। এর আগে দলের ব্যানারে যত আন্দোলন হয়েছে, কোনোটিই সফল হয়নি। এটি বুঝতে হবে। পরাজিতরা এর মধ্যে যতই ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খুঁজে বেড়াক না কেন, এটি ছিল গণবিস্ফোরণের একটি অনন্য উদাহরণ। ইতিহাসের চাকা পেছন দিকে আর ফেরানো যাবে না। এই উপলব্ধি আসতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বা তাঁর উপদেষ্টারা কী চান, সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো তাঁরা যা বলছেন, তাতে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আছে কি না। দেশটা অন্তর্বর্তী সরকার বা সংস্কার কমিশনের নয়। দেশ ১৭ কোটি মানুষের। এক-এগারো মানুষের মধ্যে জিজ্ঞাসা তৈরি করেছিল। যেদিন চুনোপুঁটি ছাড়াও রাঘববোয়ালেরা গ্রেপ্তার হচ্ছিল, দুর্বৃত্তরা দামি দামি গাড়ি ফেলে ভেগে যাচ্ছিল, তখন মানুষ খুশিতে বাহবা দিয়েছিল। মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু ওই সময়ের সেনানেতৃত্ব এক্সিট প্ল্যানের নাম করে এমন একটা ব্যবস্থা দিয়ে সরে পড়েছিল, যার মাশুল দিতে হয়েছে সমগ্র জাতিকে। আমরা চাই না এর পুনরাবৃত্তি হোক।

বিএনপির সামনে একটা বড় সুযোগ এসেছে নিজেকে বদলানোর, দেশকে বদলে দেওয়ার। আশা করি, দলটি এ সুযোগ হাতছাড়া করবে না।

মহিউদ্দিন আহমদ লেখক ও গবেষক

সম্পর্কিত নিবন্ধ