জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পায়, তা হলো ‘সংবিধান সংস্কার’। সংবিধান সংস্কারবিষয়ক গুণীজনদের বিভিন্ন আলোচনা সভা, সেমিনারে ১৪২ অনুচ্ছেদ, ৭০ অনুচ্ছেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার মতো মৌলিক বিষয়গুলো স্থান পেলেও সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদ, ৩৩(৪) অনুচ্ছেদের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক বিষয়গুলো প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়।

৩৩(৪) অনুচ্ছেদ: মানবাধিকারের প্রশ্ন


সংবিধানের ৩৩(৪) অনুচ্ছেদ সরাসরি মানবাধিকার ও নাগরিকের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে জড়িত। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও অবৈধ। আইনের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হলেই তা আইন হয়ে যায় না। উদাহরণস্বরূপ, সংসদ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যদি কোনো অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করে যে ‘বিকেল পাঁচটার সময় রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক সুপেয় পানি পান করতে পারবে না’ তাহলেই তা আইন হয়ে যাবে না, কারণ, তা আইনের মূলনীতির (জুরিসপ্রুডেন্স) সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

নিবর্তনমূলক আটকের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোনো নাগরিককে বিচারের আওতায় না এনে যত দিন ইচ্ছা তত দিন পর্যন্ত, এমনকি সারা জীবন আটক রাখার ক্ষমতা রাষ্ট্রের রয়েছে। উক্ত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(৪) নিবর্তনমূলক আটকের বিধান–সংবলিত কোনো আইন কোনো ব্যক্তিকে ছয় মাসের অধিককাল আটক রাখিবার ক্ষমতা প্রদান করিবে না যদি.

........উপদেষ্টা-পর্ষদ উক্ত ছয় মাস অতিবাহিত হইবার পূর্বে তাঁহাকে উপস্থিত হইয়া বক্তব্য পেশ করিবার সুযোগদানের পর রিপোর্ট প্রদান না করিয়া থাকেন যে, পর্ষদের মতে উক্ত ব্যক্তিকে তদতিরিক্ত কাল আটক রাখিবার পর্যাপ্ত কারণ রহিয়াছে।’ অর্থাৎ উপদেষ্টা পর্ষদের কাছে যদি মনে হয় উক্ত ব্যক্তিকে তদতিরিক্ত কাল আটক রাখার পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে, তাহলে ছয় মাসের অধিক আটক রাখা যাবে।

অনুরূপভাবে আবার ছয় মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর যদি মনে হয় তদতিরিক্ত কাল আটক রাখার পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে, তাহলে আরও ছয় মাস আটক রাখা যাবে। যেহেতু উক্ত অনুচ্ছেদে বলা নেই এভাবে সর্বোচ্চ কত দিন পর্যন্ত আটক রাখা যাবে, সেহেতু উপদেষ্টা পর্ষদের যদি ছয় মাস পরপর মনে হতে থাকে উক্ত ব্যক্তিকে তদতিরিক্ত কাল আটক রাখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তাহলে বিচারবহির্ভূতভাবে উক্ত ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় না এনেই সারা জীবন আটক রাখার বৈধতা বর্তমান সংবিধান প্রদান করে।

অনুচ্ছেদ ৩৩(৫)–এর বিধান নাগরিকের মানবাধিকারের জন্য আরও ভয়ংকর। যেখানে উল্লেখ আছে ‘(৫) ......তবে শর্ত থাকে যে, আদেশদানকারী কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় তথ্যাদি-প্রকাশ জনস্বার্থবিরোধী বলিয়া মনে হইলে অনুরূপ কর্তৃপক্ষ তাহা প্রকাশে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।’ অর্থাৎ একজন ব্যক্তিকে সারা জীবন বিনা বিচারে আটক রাখার পর রাষ্ট্রের কাছে যদি মনে হয় তাকে কেন আটক রাখা হয়েছে, তা প্রকাশ করবে না, তাহলে সেই ক্ষমতাও বর্তমান সংবিধান নিশ্চিত করে।

সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার হরণকারী বিধান, যা অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের বিধান রাখা প্রয়োজনীয় হলেও আটক রাখার মেয়াদ সর্বোচ্চ ১৫ কিংবা ২০ দিন করা যেতে পারে এবং উক্ত সময়ের পর অপরাধে জড়িত রয়েছে মর্মে বিশ্বাসযোগ্য কারণ থাকলে তাকে অবশ্যই আদালত কর্তৃক বিচারের আওতায় আনতে হবে। তবে বাংলাদেশের মতো পারস্পরিক রাজনৈতিক অশ্রদ্ধাপূর্ণ দেশে এ ধরনের বিধান না থাকাটাই উত্তম। কারণ, ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রবর্তন হওয়ার পর থেকে যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই সরকার তাদের দলীয় স্বার্থে এই অনুচ্ছেদের অপব্যবহার করেছে।

নারীদের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা

২০২২ সালের আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ দশমিক ৪৫ শতাংশ নারী, যাঁদের পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ৫৬ লাখ এবং পুরুষের তুলনায় অধিক। অথচ বাংলাদেশের এই সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সংবিধানে অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।’

বাংলা অংশটি পড়ার সময় ‘নারী-পুরুষের’ শব্দ দুটি একত্র লিখিত হওয়ায় কিছুটা অস্পষ্টতা তৈরি হলেও ইংরেজি অনুচ্ছেদটি পড়লে সহজেই সেই অস্পষ্টতা দূর হয়ে যাবে। নারীদের অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের অধিকার মানদণ্ড হিসেবে গণ্য করা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রভাব, যেমনটি বাংলাদেশের অন্যান্য প্রচলিত আইনে সেই প্রভাবের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের নারীরা যেখানে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিচ্ছে; লেখাপড়া, খেলাধুলা, গবেষণা, সংস্কৃতি—প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে, সেখানে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার সরাসরি স্বীকৃতি না দিয়ে কেন পুরুষের অধিকার মানদণ্ড গণ্য করে নারীকে অধিকার দিতে হবে! অনেক ক্ষেত্রে যুক্তি প্রদান করা হয় যে ‘যেভাবেই লেখা হোক অধিকার তো সমান পাচ্ছে’।

অধিকার সমান পেলেও উক্ত অনুচ্ছেদের মাধ্যমে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শ্রেষ্ঠত্ব ফুটে ওঠে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এই প্রভাব কতটা বৈষম্য সৃষ্টি করে, তা ‘দি মুসলিম ম্যারেজ এবং ডিভোর্সেস (রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট, ১৯৭৪’সহ বাংলাদেশের বিদ্যমান বিভিন্ন আইনে দেখা যায়। সংবিধান সংস্কার কমিশনকে এই অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে নারীদের স্বাধীন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের অধিকার সংকীর্ণ হয়ে যাবে না।

সংসদ সদস্যদের দক্ষতা ও যোগ্যতা

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের বিগত ১৫ বছরসহ পূর্ববর্তী সময়ে বেশির ভাগ সংসদ সদস্যদের আইন–সম্পর্কিত ন্যূনতম ধারণা ছিল অনুপস্থিত। গত ১৫ বছরে সংসদে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি ছিল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি, যা পেশাগত ভারসাম্যহীনতার দিকেও ইঙ্গিত দেয়। সংবিধান সংস্কারে সুনির্দিষ্ট পেশাগোষ্ঠীর আধিপত্য রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য সংবিধান ও আইন বুঝতে পারার ন্যূনতম সক্ষমতা নির্ধারণ–সম্পর্কিত বিধান থাকতে হবে। অনুচ্ছেদ ৬৫ সংশোধনের মাধ্যমে আইন প্রণয়ন ব্যতীত আর্থিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার দায়িত্ব থেকে সংসদ সদস্যদের বিরত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দক্ষ নেতৃত্ব কর্তৃক পরিচালিত না হলে টেকসই সংস্কার ও জনকল্যাণকর সংবিধান নিশ্চিত অসম্ভব, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করবে।

শিশু অধিকার: সংবিধানের শূন্যতা

সংবিধানে যেন সমাজের সব স্তরের মানুষের অধিকার রক্ষা পায়, সংস্কারের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে হবে। ২০২৩ সালের আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ শিশু (০-১৪ বছর বয়সী), অথচ সমাজের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর অধিকার ও সুরক্ষা–সম্পর্কিত কোনো বিধান সংবিধানে নেই। ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ স্লোগানকে সত্যিকার অর্থে ফলপ্রসূ করতে হলে সংবিধানে শিশুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রকে শিশুশ্রম নিরোধ এবং প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংবিধানে স্বীকৃতি দানপূর্বক বাস্তবায়ন করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট ও সংবিধানের অভিভাবকত্ব

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। কিন্তু সংবিধানের অপব্যবহার করার লক্ষ্যে সময়ে সময়ে সরকার সুপ্রিম কোর্টকে ব্যবহার করেছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৪ বনাম ৩ বিচারপতির রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছিলেন। অথচ এত জনগুরুত্বপূর্ণ রায়ের বিরুদ্ধে বা রায়–সম্পর্কিত সমালোচনা করার কোনো সুযোগ ছিল না, যেহেতু আদালতের রায়ের সমালোচনার কারণে ‘আদালত অবমাননা’র সম্ভাবনা থাকে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ অবশ্যই নির্বাহী বিভাগের পরোক্ষ প্রভাব মুক্ত হতে হবে।

বিচারপতি নিয়োগ যদি রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত না হয়, তাহলে কোনোভাবেই সুপ্রিম কোর্ট সত্যিকারের অর্থে সংবিধানের অভিভাবক হয়ে উঠতে পারবে না, যার নজির ইতিমধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে, যেখানে গণতান্ত্রিক দেশের প্রধান বিচারপতি ‘গণভোট’কে অসাংবিধানিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। নতুন বাংলাদেশের নতুন সংবিধানে আদালতের ন্যায্য সমালোচনা ‘ফেয়ার ক্রিটিসিজম’ করার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং আইন বিভাগের সত্যিকারের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

ক্ষমতার ভারসাম্যের আলোচনা আসলে সাধারণত ‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী’র ক্ষমতার ভারসাম্যের আলোচনা উঠে আসে। অথচ রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালিত হতে হলে আইন বিভাগ-নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ-বিচার বিভাগ, বিচার বিভাগ-নির্বাহী বিভাগ তথা প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য নিশ্চিত করা জরুরি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের পরোক্ষ প্রভাব মুক্ত করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ প্রদান করতে হবে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হলে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগে কোনোভাবেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সম্পৃক্ত করা যাবে না।

সর্বোপরি রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও শ্রদ্ধাবোধ, যেখানে দেশপ্রেম হওয়া উচিত প্রধান চেতনা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছরের প্রায় ২৩ বছর (এরশাদ-৮ বছর, হাসিনা-১৫ বছর) স্বৈরাচারের শাসনের অধীন ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার ছিল ‘গণতন্ত্র’ এবং স্বাধীনতার পর থেকে যে রাজনৈতিক দল সবচেয়ে বেশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবক দিয়েছে, তারাই এ দেশে দীর্ঘতম সময় স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি না হলে সংবিধানের টেকসই উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে উন্নত দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। যুক্তরাজ্যের অলিখিত সংবিধান থাকা সত্ত্বেও সেখানে স্বৈরাচার তৈরি হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পৃথিবীর অন্যতম ছোট সংবিধান, যেখানে বাংলাদেশের মতো এত বেশি অধিকারের কথা উল্লেখ করতে হয় না। অথচ সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলছে শতাব্দী ধরে।

মেহেদী হাসান নাফিজ শিক্ষানবিশ আইনজীবী
[email protected]

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্ঘটনায় আহত অভিনেত্রী খুশি, চোখের ওপর পড়েছে ১০ সেলাই

দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ছোটপর্দার অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। বুধবার সকালে রমনা পার্ক থেকে বাড়ি ফেরার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় তিনি আহত হন। অভিনেত্রীর ছেলে সৌম্য জ্যোতি সমকালকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বুধবার সকালে আম্মু রমনা পার্কে হাটতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাসায় ফেরার সময় গলির মধ্যে একটি অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দিলে আম্মু ছিটকে পড়ে যায় এবং তার ঠিক চোখের ওপর জখম হয়। পরে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন তিনি আপাতত ভালো আছেন।’

এদিকে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান শাহনাজ খুশি। সেখানে তিনি বলেন, ‘বেশি না, মাত্র ১০টা সেলাই পড়েছে। এ আর এমন কি বলেন? চোখটা অন্ধ হয় নাই, হয় নাই ব্রেইন হ্যামারেজের মত শেষ অবস্থা! সেটাই তো অনেক বেশি পাওয়া! এ তেমন কিছু না, চোখের উপরের সেনসেটিভ জায়গায় মাত্র ১০ টা সেলাই লেগেছে! আমি যে প্রাণে বেঁচে আছি এ জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা কাছে শুকরিয়া আদায় করছি!’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিচ্ছু চাই না আমি, শুধু যে মায়েরা/বাবারা ছোট্ট বাচ্চাটার হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে স্কুলে আসেন অথবা নানান প্রয়োজনে রাস্তায় যান, তাদের সতর্ক করতে পোস্টটা দিলাম। আমি হয়ত ভেঙেচুরে বেঁচে গেছি। কোন বাচ্চা এ আঘাত নিতে পারবে না! ব্যাটারি চালিত অসভ্য/বর্বর যানবাহনটি এবং তার অসভ্য চালক থেকে সর্বদা সতর্ক থাকবেন। যদিও আমি গলির ভেতরের রাস্তায়, প্রাতঃ ভ্রমণ শেষে অতি সর্তকতার সাথেই একেবারে কিনার দিয়ে হেঁটে ফিরছিলাম! ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বীরদর্পে চলে গেছে! ওরা মেধাবী যান চালক, কারো জীবনের ক্ষতির তোয়াক্কা করে না! আপনার এবং আপনার সন্তানের দায়িত্ব একান্তই আপনার। আজ চারদিন পরও মাথার অর্ধেকে কোন বোধশক্তি নাই!

সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘জানি না স্বাভাবিক চেহারায় ফিরবো কিনা, সেটা যদিও ফিরি রক্তাক্ত সেই পথে পড়ে থাকা সকালের ট্রমা অনেককাল ভুলবো না! কাতর অবস্থায় বিছানায় পরে থেকে বারবার একটা প্রশ্ন মনে আসছে, এই যে যত্রতত্র কুপিয়ে জখম, ট্রেন-বাস, রিকশা কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে দিনেরাতে ছিনতাই। কার কাছে চাইব আমাদের সন্তানদের নিরাপদ পথচলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ