এইচএমপিভি প্রতিরোধে হিলি ইমিগ্রেশনে মেডিকেল টিম
Published: 13th, January 2025 GMT
দ্য হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপি) প্রতিরোধে দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিম।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে উপজেলা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম কার্যক্রম শুরু করে।
আরো পড়ুন: দেশে একজনের শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত
আরো পড়ুন:
ভারত থেকে এলো ৫ টন জিরা
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আসছে না ভুটানের পাথর
ভারতে এইচএমপিভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় হিলি চেকপোস্টে এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
“ভারতে এইচএমপিভি ভাইরাসের উপস্থিতি, সতর্কতা নেই হিলি স্থলবন্দরে” শিরোনামে গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি.
এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এই কার্যক্রম শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এই চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত করা পাসপোর্টধারী যাত্রীরা।
উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে আজ সকাল থেকে এই ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। মাস্ক পড়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যদি কোন যাত্রীর শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হবে।”
হিলি ইমিগ্রেশনের ওসি আরিফুল ইসলাম বলেন, “ভাইরাসটি প্রতিরোধে পাসপোর্ট যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারো যদি সর্দি-জ্বর, কাশি, গলাব্যথার লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসাসহ পরামর্শ দেওয়া হবে। যদি কেউ বেশি অসুস্থ হন, তাহলে তাকে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
আরো পড়ুন: কোভিডের মতোই বিপজ্জনক হতে পারে এইচএমপিভি, প্রতিরোধে করণীয়
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, “এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে এই চেকপোস্টে মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। মেডিকেল টিম পাসপোর্টধারী যাত্রীদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পূর্ণ করলে যাত্রীদের কাস্টমসের কার্যক্রম করা হচ্ছে।”
ইচএমপিভি সংক্রমণ নিয়ে চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড ১৯ এর মতোই এই ভাইরাস। বাংলাদেশেও এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। চীনের সেন্ট্রার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশান বা সিডিসি’র ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ‘‘এইচএমপিভি কোভিড-১৯ এর মতোই একটি আরএনএ ভাইরাস। যার অর্থ হচ্ছে, এই পৃথক দুই ভাইরাসের জীনের গঠন একই। এই ভাইরাসও কোভিড ১৯ এর মতো শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে। কিন্তু এই ভাইরাস একই পরিবারের ভাইরাস নয়। সুতরাং কোভিডের টিকা নেওয়া থাকলে বা আগে কখনো কোভিড হলেও আপনার এইচএমপিভির সংক্রমণ হতে পারে। কোভিডের ইমিউনিটি আপনাকে এইচএমপিভি ভাইরাস থেকে রক্ষা করবে না।”
লক্ষণ কী:
ভাইরাসটির ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’ তিন থেকে পাঁচদিন। অর্থাৎ কেউ এতে সংক্রমিত হলে তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে তার দেহে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।এই ভাইরাসের সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে––
১. জ্বর
২.সর্দি/নাক থেকে পানি পড়া/নাকবন্ধ ভাব
৩.হাঁচি/কাশি/গলাব্যথা
৪. চামড়ায় র্যাশ
এই ভাইরাস থেকে যে কারো ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রংকাইটিস, ব্রংকিয়োলাইটিস, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী বা জটিল রোগে আক্রান্তদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
যেভাবে ছড়ায়: শীত ও বসন্তকালে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে বেশি আক্রমণ করে। মূলত হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। কেউ যদি এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয় তার ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে আরেকজনের মধ্যেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির ড্রপলেট লেগে থাকা স্থান যেমন দরজার হাতল, লিফটের বাটন, চায়ের কাপ ইত্যাদি স্পর্শ করলে তারপর সেই হাত চোখে, নাকে বা মুখে ছোঁয়ালে এইচএমপিভি ছড়াতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয়:
১. বাইরে গেলেই মাস্ক পরা
২. ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া।
৩. হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা।
৪. আক্রান্তদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। জন সমাগমস্থল এড়িয়ে চলা।
৫. হাঁচি কাশি দেয়ার সময় মুখ টিস্যু দিয়ে ঢেকে নেওয়া এবং ব্যবহৃত টিস্যুটি সঙ্গে সঙ্গে মুখবন্ধ করা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে হাত সাবান পানিতে ধুয়ে ফেলা।
৬. যদি টিস্যু না থাকে তাহলে কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি দেওয়া।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা।
৮. সর্দিকাশি, জ্বর হলেও অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
যেহেতু এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি তাই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা/মোসলেম/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বড় সংঘাতের শঙ্কা
কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা দাবি করে ওই ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কঠোর বার্তা দিয়েছেন। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীও ‘শক্ত ও স্পষ্ট জবাবে’র কথা বলেছেন। অপর দিকে পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে শক্ত জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এ অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে বড় সংঘাতের শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে অল্প পরিচিত সংগঠন রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, পাকিস্তান বরাবরই সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করে আসছে। তবে তারা বলে আসছে, সার্বভৌম কাশ্মীরকে সমর্থন করে তারা। পেহেলগাম হামলার ঘটনাটি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা অনেকটাই বাড়িয়েছে, যারা এরই মধ্যে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ ঘোষণা ও উপত্যকার মানুষকে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই বন্ধ না করতে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের আহ্বানের এক সপ্তাহ পর এ হামলা ঘটল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতিনির্ধারক ও দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘অঞ্চলটির জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী একে অপরকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে।’
হামলার ঘটনায় প্রথম প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ভারত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত-বাণিজ্য কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে। ভারত অতীতে একাধিকবার পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত জড়ালেও কখনও এ চুক্তি স্থগিত করেনি।
জিও নিউজ অনলাইন জানায়, সিন্ধু নদের পানিচুক্তি স্থগিত করা নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে ইসলামাবাদ। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে এনএসসির বৈঠকে বেশ কিছু পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিবৃতিতে সিদ্ধান্তগুলো জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান কঠোরভাবে ভারতের সিন্ধুর পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা নাকচ করেছে। পাকিস্তান বলেছে, এ চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া বাধ্যবাধকতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি; এককভাবে এটি স্থগিতের কোনো বিধান নেই। পানি পাকিস্তানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু, তা দেশের ২৪ কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করে এবং যে কোনো মূল্যে এ পানি পাওয়ার বিষয়টি রক্ষা করা হবে। সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান যে পানি পাবে, তার প্রবাহ বন্ধ বা অন্যদিকে নেওয়ার যে কোনো চেষ্টা এবং ভাটি অঞ্চলের অধিকার ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা যুদ্ধের শামিল বলে বিবেচনা করা হবে এবং জাতীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করে এর জবাব দেওয়া হবে।
পাকিস্তান বলেছে, ভারতের ‘বেপরোয়া ও দায়িত্বহীন আচরণের’ মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। ফলে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিতের অধিকার প্রয়োগ করবে এবং তা শুধু সিমলা চুক্তি স্থগিতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আর তা ভারত পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসবাদ উস্কে দেওয়া, আন্তঃসীমান্ত হত্যা বন্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলো না মেনে চলা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
পাকিস্তান অবিলম্বে ওয়াগা সীমান্ত চৌকি বন্ধ করছে। দেশটি বলেছে, এ পথ দিয়ে ভারত থেকে সব ধরনের চলাচল বন্ধ থাকবে। বৈধভাবে যারা এ পথে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন, তারা অবিলম্বে ফেরত যেতে পারবেন। তবে ৩০ এপ্রিলের পর এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া সব সার্ক ভিসা বাতিল করেছে পাকিস্তান। এ ভিসার আওতায় পাকিস্তানে অবস্থানরত সব ভারতীয় নাগরিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশটি ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য শিখ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হচ্ছে না।
ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে নিযুক্ত দেশটির প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। অবিলম্বে তাদের পাকিস্তান ছাড়তে বলা হয়েছে। তাদের সহায়তায় নিযুক্ত কর্মীদেরও ভারতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মকর্তার সংখ্যা ৩০-এ নামিয়ে আনতে বলেছে পাকিস্তান। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তা করতে বলা হয়েছে। ভারতের মালিকানাধীন বা ভারত থেকে পরিচালিত সব বিমান পরিবহন সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ। সেই সঙ্গে পাকিস্তান দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিতের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের কাশ্মীর ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ নতুন নির্দেশনা জারি করে। এতে ভারতশাসিত কাশ্মীর ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে মণিপুর এবং মধ্য ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশেও।
১৯৮৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়তে শুরু করে। ২০১৯ সালে এক বিতর্কিত পদক্ষেপে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসিত সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করে এবং রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, হিন্দু-প্রথম রাজনৈতিক এজেন্ডা গ্রহণের জন্য পরিচিত সরকার কাশ্মীরকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে আরও একীভূত করার জন্য অ-স্থানীয়দের জমির মালিকানাও অনুমোদন করে।
এনডিটিভি অনলাইন জানায়, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিহারের মধুবানিতে গিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার এক সমাবেশে তিনি বলেন, ভারত সন্ত্রাসী ও তাদের প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত ও পরিচয় শনাক্ত করে শাস্তি দেবে। তাদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যা তারা কল্পনাও করেনি। এ অবস্থায় কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের ধরতে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। এ অভিযান চলাকালে গতকাল অস্ত্রধারীদের গুলিতে এক ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন।
পেহেলগাম হামলার ঘটনায় বুধবার মধ্যরাতে নয়াদিল্লিতে তলব করা হয় পাকিস্তানের অন্যতম শীর্ষ কূটনীতিককে। এএনআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার মধ্যরাতে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয় ভারতে থাকা পাকিস্তানের কূটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে। বুধবারই ভারত জানিয়েছিল, নয়াদিল্লির পাক দূতাবাসে থাকা সে দেশের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা নৌ উপদেষ্টা, বিমান উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ (পার্সোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করা হচ্ছে। এ সামরিক উপদেষ্টাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়তে বলা হয়।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার আরব সাগরে ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। ইন্ডিয়া টুডে জানান, ‘আইএনএস সুরাট’ নামের ওই মিসাইল ডেস্ট্রয়ারের সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে।
ভারতের আচরণ ‘শিশুসুলভ’ বলছেন পাকিস্তানের মন্ত্রী
ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। পাকিস্তানের একটি বেসরকারি চ্যানেলে তিনি বলেন, ভারতের ঘোষণাগুলো শিশুসুলভ। ভারত প্রতিটি ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। অতীতের মতো এবারও পাকিস্তানকে দোষারোপের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা বৈঠকে ভারতকে যোগ্য জবাব দেব, এ জবাব কম হবে না।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী আজমা বোখারি হামলার ঘটনায় ইসলামাবাদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, ভারতের ‘যে কোনো সম্ভাব্য আগ্রাসনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত’ পাকিস্তান। ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ অজুহাতে ভারতের যে কোনো দুঃসাহসিক কাজ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
যুদ্ধের শঙ্কা নিয়ে যা বলছেন বিশ্লেষক
সামরিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা সম্ভবত একটা দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেখতে পাব, যা দুই পক্ষকেই একটা বার্তা দেবে। ২০১৬ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর থেকে এ জাতীয় ঘটনার ক্ষেত্রে প্রতিশোধমূলক যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা হলো আন্তঃসীমান্ত হামলা বা বিমান হামলা। কাজেই, সরকারের পক্ষে এখন সেই মাত্রার নিচে কোনো কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। অনুমান করা যায়, পাকিস্তানও আগের মতোই জবাব দেবে। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই যে ঝুঁকিটা থেকে যায় সেটা হলো, হিসাবে ভুল উভয় পক্ষেরই হতে পারে।’
রাঘবন বলেন, পারমাণবিক হাতিয়ার একই সঙ্গে বিপজ্জনক ও নিয়ন্ত্রক। এটা দুই পক্ষের নীতিনির্ধারকদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য করে। যে কোনো প্রতিক্রিয়া সুনির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে হতে হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তান পাল্টা জবাব দিতে পারে; তারপর সেখান থেকে সরে এসে আবার অন্য পথ অনুসরণ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অ্যাট অ্যালবানির ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি মনে করেন, কোনো গোপন অভিযান চালানো হলে, দায় অস্বীকার করার সুযোগ থেকে যায়। কিন্তু সেই পদক্ষেপ মানুষকে দেখানোর যে একটা রাজনৈতিক প্রয়োজন রয়েছে, সেটাকে মেটাতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হক্কানি মনে করেন, ২০১৬ সালের মতো সীমিত পরিসরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর বিষয়ে যদি ভারত বিবেচনা করে, তাহলে এবার উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।