ভারতীয় বাংলা সিনেমার বর্ষীয়ান অভিনেতা সন্তু মুখার্জি। ২০২০ সালের ১১ মার্চ পরপারে পাড়ি জমান তিনি। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সন্তু মুখার্জির জন্মদিন। বেঁচে থাকলে আজ ৭৪ বছর পূর্ণ করতেন। বিশেষ দিনে এই অভিনেতাকে স্মরণ করেছেন তারই কন্যা জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি।

বাবার জন্মদিন উপলক্ষে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন স্বস্তিকা মুখার্জি। লেখার শুরুতে আলোচিত এই অভিনেত্রী লেখেন, “শুভ জন্মদিন বাবা। কোথায় আছো সে তো জানি না, কে আলমারি থেকে নতুন জামা বের করে জোর করে পরিয়ে দেবে তাও জানি না। আশা করি, কেউ নিশ্চয়ই আছে, আমার মতন করে তোমায় আগলে রেখেছে। প্রতি বছরের মতন, এবারেও নতুন ফতুয়া-লুঙ্গি পরো। খাদির দোকানে গেলে, গেরুয়া রংয়ের কোনো কাপড় দেখলেই মনে হয় তোমার জন্য একটা পাঞ্জাবি বানাতে দিই, তারপর মুহূর্তেই মনে পড়ে তুমি তো নেই।”

বাবা-মা না থাকার কারণে বাড়িতে আনন্দ-উৎসব কমে গেছে। তা স্মরণ করে স্বস্তিকা মুখার্জি বলেন, “আজ সন্ধে নামলে দুপাত্তর ব্যালেন্টাইন খেও। কত ভালোবাসতে। পৃথিবীর এত জায়গায় যাই, যত ভালো স্কচই কিনে আনি না কেন সেই ব্যালেন্টাইনটাই সেরা। তোমার আর মায়ের না থাকাতে বাড়িতে খাওয়া দাওয়া, লোকজনের আসা-যাওয়া, আনন্দ উৎসব প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে। ঠিক ওই গানটার মতন— এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা তোমায় ছাড়া।”

আরো পড়ুন:

সালমানের সঙ্গে জুটি বাঁধবেন যীশুর কন্যা, নীরবতা ভাঙলেন সারা

স্ত্রী-সন্তানদের জন্য কত কোটি টাকা রেখে গেছেন ইরফান খান

বাবা-মাকে সবসময়ই মনে পড়ে স্বস্তিকার। তার ভাষায়, “১৩ জানুয়ারি, এই দিনটা আমার কাছে আজীবন ‘আমার বাবার জন্মদিন’ হয়েই রয়ে যাবে। অবশ্য, শুধু একটা দিন কেন? বাকি বছরের অজস্র দিনগুলোও তোমাদের দুজনের দিন হয়েই রয়ে গেছে। জন্মদিন, বেড়াতে যাওয়ার দিন, অসুখ করার দিন, হাসপাতালে যাওয়ার দিন, সেখান থেকে ফেরার দিন, না ফেরার দিন এইসব। জীবনটাই দুটো ট্রাম লাইনে বিভক্ত। তখনো মা ছিল, তখন আর মা ছিল না। তখনো বাবা ছিল, তখন বাবা ছিল না।”

বাবাকে আরো কটা দিন কাছে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে স্বস্তিকা মুখার্জি বলেন, “আর কটা দিন থেকে গেলে পারতে বাবা, না হয় অনেক রাত অব্দি জমিয়ে আড্ডা মারতে মারতে, লোকজনের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে দু’ পেগ হুইস্কি খাওয়ার জন্যই রয়ে যেতে। না হয়, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ দেখে চিৎকার করার জন্য রয়ে যেতে। না হয়, দরবেশ, ক্ষীরকদম্ব, মনোহরা, সীতাভোগদের জন‍্য রয়ে যেতে। ভাত-রুটির শেষ পাতে রোজ একটু মিষ্টি খাওয়ার পাটও চুকে গেছে। বাড়িতে আর মিষ্টি কেনা হয় না।”

আরেকবার বাবাকে দেখার প্রবল ইচ্ছা হয় স্বস্তিকার। তা উল্লেখ করে এ অভিনেত্রী বলেন, “তোমায় আর একবার দেখার জন্য সব করতে পারি বাবা। তুমি তো ঈশ্বরের কাছে আছো, তুমি ওনাকে বলো, এই জন্মে হোক বা পরের জন্মে বা দু জন্মের সন্ধিক্ষণে আমাদের দেখাটা যেন হয়। কত কথা জমে আছে বাবা। এক পাহাড়।”

বাবার জন্মদিনে তার প্রিয় পারফিউম গায়ে মেখেছেন স্বস্তিকা। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “আজ তোমার ফেভারিট ব্রুট পারফিউমটা মেখেছি, তোমার জন্মদিনে তোমার গায়ের গন্ধ থাকুক গায়ে। রোজ ঘুমাতে গেলে ভাবি, চোখ খুললেই হঠাৎ যদি তোমায় দেখতে পাই, জড়িয়ে ধরে বসে থাকব, অনেকক্ষণ। বেশি কিছু চাই না, এইটুকুই। কখনো এলে ‘ভেবলি’ বলে ডেকো বাবা, ঠিক বুঝে নেব তুমি ডেকেছ। ভালো থেকো। তোমার পথে ঝলমলে আলো থাক, ইউডি কোলনের গন্ধ থাক, অনেকটা যত্ন আর ভালোবাসা থাক। আমার কাছে অপেক্ষা থাক, আমার সারাক্ষণের সঙ্গী।”

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র নির্মাতা 

সৃজনশীল মানুষের প্রস্থান এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করে। এই তালিকায়  যুক্ত হলো জাহিদুর রহিম অঞ্জনের নাম। তিনি ছিলেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার, বড় পর্দার চলচ্চিত্র পরিচালক ও সংগঠক। অসামান্য প্রতিভার অধিকারী জাহিদুর রহিম অঞ্জনের স্বপ্ন চিন্তা, সৃষ্টি, অনন্য পরিকল্পনা তাঁর সমসাময়িক নির্মাতাদের থেকে পৃথক করে রাখবে। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন ছিল আনন্দ-বেদনায় ভরপুর। তিনি আধুনিক ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অগ্রগামীদের অন্যতম। আজিজ মার্কেট, পাবলিক লাইব্রেরি, চারুকলা অনুষদ ও জাতীয় জাদুঘরে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল নজর-কাড়া। আড্ডা, হইহুল্লোড় ও প্রাণখোলা হাসি, পোশাক, অলংকার ধারণ ছিল  নিজস্বতা প্রকাশের বাহক। তিনি সবার মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছিলেন। ছিলেন আড্ডার মধ্যমণি। তাঁর আনন্দ-বেদনার কত কাহিনি আজও অজানা থেকে গেল! 

ভারতের পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শ্রুতিচিত্রণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। তাঁর পূর্বসূরি ছিলেন মিশুক মুনীর। মিশুক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন, আর জাহিদুর রহিম অঞ্জন লিভারের জটিলতায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের বেঙ্গালুরুতে চিরঅনন্তের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া অ্যান্ড স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক হিসেবেও সংযুক্ত হন। ফিল্ম তৈরির নেশায় জড়িয়ে পড়েন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ফিল্ম তৈরিতে তাঁর সৃজন ও দক্ষতার পরিচয় রেখে গেছেন।

তিনি শর্টফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিন দশক শর্টফিল্ম নির্মাণে তাঁর অসামান্য অবদান স্মরণীয়। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।

অঞ্জন ১৯৯০ সালে আন্তন চেকভের গল্প অবলম্বনে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মর্নিং’ পরিচালনা করে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র হলেও তা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। পরে তিনি বিশিষ্ট চিন্তক অতীশ দীপংকরের জীবনীকে চলচ্চিত্রে রূপ দেন ‘শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপংকর’ নির্মাণ করে।
তিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ অবলম্বনে পরিচালনা করেন ‘মেঘমল্লার’। পটভূমি ১৯৭১। কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদার জীবনের ঘটনা, মনোস্তত্ত্ব ও সমাজ-বাস্তবতা নিয়ে চলচ্চিত্রের আখ্যানভাগ নির্মিত। মূল চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় দর্শকদের মুগ্ধ করেন। ‘মেঘমল্লার’ ২০১৫ মালের ১৫ সেপ্টেম্বর কানাডার টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ২০১৬ সালে ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ  পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা সম্মানে ভূষিত হন তিনি।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন প্রথাবিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন। সরকারি অনুদানে তাঁর নির্মিত ‘চাঁদের অমাবস্যা’ একটি অসাধারণ সৃষ্টি। দেশের সার্বিক অবস্থা ও নিজের অসুস্থতার কারণে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়নি। তাঁর বন্ধু, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা চলচ্চিত্রটির নির্মাণ কুশলতা ও কারিগরি দিক পর্যবেক্ষণ করেছেন। ‘চাঁদের অমাবস্যা’ মুক্তির অপেক্ষায়।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন ৬১ বছর এই পৃথিবীর সৌন্দর্য, আনন্দ-বেদনাকে স্পর্শ করেছেন। তাঁর প্রতিটি সময় ছিল সৃজনমুখর। শুধু চলচ্চিত্র নির্মাতা নন, একজন ভালো মানুষ হিসেবে তিনি তাঁর পরিমণ্ডল ছেড়ে পরিচিত মানুষের প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ছিলেন; বেঁচে থাকবেন স্মরণে, স্মৃতিতে। প্রকাশক, গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে জাহিদুর রহিম অঞ্জনের রচনাসমগ্র প্রকাশের অনুরোধ জানাচ্ছি। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মাণ করা হোক বিশেষ ডকুমেন্টারি।

জাহিদুর রহিম অঞ্জন অসংখ্য নির্মাতার পথপ্রদর্শক। তাঁর জীবনসংগ্রাম, সৃষ্টির ইতিহাস নিয়ে ‘স্মারকগ্রন্থ’ প্রকাশিত হবে। তিনি আর থাকবেন না বাস্তবে; অবচেতনে তাঁর অবস্থান অমোচনীয়। জাহিদুর রহমান অঞ্জনকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করছি।

সাইফুজ্জামান: প্রাবন্ধিক; জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অস্কার: সেরা সিনেমা ‘আনোরা’
  • সেরা সিনেমা ‘আনোরা’
  • টিএসসিতে সংগীত উৎসব
  • রমজানে গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রস্তাবে রাজি ইসরায়েল
  • মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্য উৎসবের মঞ্চে ‘ইংগিত’
  • ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র নির্মাতা 
  • ফরিদপুরে ‘পালাবদলের ছড়া’ গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন