এআই চ্যাটবটের কাছে মানসিক সমস্যা বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া কি ঠিক
Published: 13th, January 2025 GMT
এখন প্রায় সব ধরনের কাজেই এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে ক্যারিয়ার গাইডলাইন তৈরি, সিভি লেখানো থেকে শুরু করে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভ্রমণের পরিকল্পনা, কোনো বেলায় বেঁচে যাওয়া খাবার দিয়েই নতুন কোনো খাবার তৈরি করার রেসিপি নেওয়া—এ রকম ছোট–বড় প্রায় সব কাজের জন্যই মানুষ এআইয়ের দ্বারস্থ হচ্ছে। এআই খুলে দিয়েছে অসীম সম্ভাবনার দুয়ার।
অতি সম্প্রতি ভারতের নানাবতী ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের হেড অব ইমেজিং ডাক্তার দীপক পাটকার এক সাক্ষাৎকারে মানসিক সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে এআই চ্যাটবটের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কোন কোন পরিস্থিতিতে এআইয়ের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে, কখন যাবে না, এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় তাঁর সাক্ষাৎকারে।
প্রাথমিকভাবে মানসিক সংকট মোকাবিলা সহজ হয়েছেএআই পাওয়া যায় হাতের নাগালে, ব্যবহার করাও সুবিধাজনক। অতি সহজ একটি প্রম্পট লিখেই এআইয়ের কাছ থেকে আমাদের ব্যক্তিগত চাহিদা মেটানোর উপযোগী উত্তর পাওয়া যায়। এআইয়ের এই সুবিধার কথা উল্লেখ করে দীপক পাটকার বলেন, ‘যেসব এআই চ্যাটবট মেশিন লার্নিং এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে কাজ করে, সেসব চ্যাটবট সবার কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে দিচ্ছে। মানসিক সহায়তা পাওয়ার জন্য অনেকে প্রথমেই এআইয়ের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কারণ, এআই খুব চমৎকারভাবে দ্রুত উত্তর দেয়। কোনো ব্যক্তিকে বিচার বা তার দুরবস্থার জন্য তাকেই দোষারোপ করার প্রবণতাও চ্যাটবটগুলোর মধ্যে নেই। এই বিষয়টি যেকোনো মানসিক সংকট প্রাথমিকভাবে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুনএআই নিয়ে পড়তে চাই, কাজ করতে চাই, কী করব০১ ডিসেম্বর ২০২৪কখন এআই চ্যাটবট ব্যবহার করা ভালোপ্রাথমিক সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে এআই চ্যাটবটের কাছ থেকে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ নেওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অতটা তীব্র নয়, এমন সমস্যা (যেমন দুশ্চিন্তা কিংবা অবসাদ) দূর করার ক্ষেত্রে চ্যাটবট কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
সাইকোথেরাপির প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি বেশ জনপ্রিয়। মুঠোফোনের কিছু অ্যাপেও কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপির সুবিধা মেলে। এসব অ্যাপ ব্যবহারকারীদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা চিহ্নিত এবং মোকাবিলা করতে সহায়তা করে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা। মানসিক রোগের চিকিৎসা নেওয়ার বেলায় অনেকের মধ্যেই অনীহা দেখা যায়। এসব অ্যাপ মানসিক রোগের চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে সমাজের ভ্রান্ত ও নেতিবাচক ধারণাগুলো দূর করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এ ছাড়া চ্যাটবটগুলো আবেগ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে পরামর্শ দিতে এবং ধারাবাহিকভাবে একজন ব্যক্তির মানসিক অবস্থাসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করতে সক্ষম তো বটেই।
কখন এআই চ্যাটবট ব্যবহার করা ভালো নয়কিছু নির্দিষ্ট সমস্যার ক্ষেত্রে এআই পর্যাপ্ত সহযোগিতা করতে পারে না। কিছু কিছু জটিল সমস্যা সামাধানের ক্ষেত্রে একজন পেশাদার মনোবিদের জ্ঞানের গভীরতা এবং পারদর্শিতার তুলনায় এআইয়ের ক্ষমতা নিতান্তই সীমিত। দীপক পাটকারের মতে, চ্যাটবটগুলো জটিল মানসিক রোগ নির্ণয় ও নিরাময় করতে সক্ষম নয়। কারণ, মানুষের মন বুঝতে পারার জন্য প্রয়োজনীয় সহমর্মিতা আর বোধশক্তি চ্যাটবটের নেই। অনলাইনে পদে পদে যেখানে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেখানে চ্যাটবটের কাছে ব্যক্তিগত মানসিক সমস্যার কথা বলা কতটা নিরাপদ, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ ছাড়া চ্যাটবট অনেক সময় মানুষের বক্তব্য বুঝতে ভুল করে। গুরুতর এবং নৈতিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো সামাল দিতেও চ্যাটবট অপারগ।
আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটি ও অন্যান্য এআইয়ের সঙ্গে কেন ভদ্র আচরণ করবেন১৮ নভেম্বর ২০২৪ব্যবহারের সীমা নির্ধারণতাহলে উপায় কী? চ্যাটবট কি মোটেও ব্যবহার করা যাবে না? চ্যাটবট ব্যবহার অবশ্যই করবেন। কিন্তু আপনাকে জানতে হবে চ্যাটবটের পরামর্শের ওপর কখন, কতটা আস্থা রাখা যায়। এ বিষয়ে দীপক পাটকারের মত হচ্ছে চ্যাটবটের কাছে ছোটখাটো ব্যাপার, যেমন কীভাবে অবসাদ কমানো যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া যেতে পারে। একজন মনোবিদের তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় যদি আপনি চ্যাটবটের সাহায্য নেন, তাহলে চ্যাটবট চমৎকার কাজ করবে। কিন্তু চ্যাটবট কখনোই একজন মনোবিদের বিকল্প হতে পারে না।
কারও আত্মঘাতী হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকলে, মানসিকভাবে চরম অশান্তিতে থাকলে, কখনোই মন ভালো না থাকলে অবশ্যই পেশাদার মানসিক চিকিৎকের কাছে যেতে হবে। চ্যাটবট শুধু ব্যক্তির অনুভূতি সম্পর্কে আরও জানার একটি মাধ্যম হতে পারে, কিন্তু গুরুতর সমস্যাগুলোর সমাধান হতে পারে না।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
আরও পড়ুনএআই ব্যবহার করে অনলাইনে আয়ের ৫টি উপায়০৯ ডিসেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অস্কার মঞ্চে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরে কাঁদলেন মার্কিন অভিনেত্রী
জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। এবারের আসরে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগের পুরস্কার জিতেছেন আমেরিকান তারকা জো সালদানা। ‘এমিলিয়া পেরেজ’ চলচ্চিত্রে একজন আইনজীবীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে এই স্বীকৃতি উঠেছে তাঁর হাতে।
স্প্যানিশ-ভাষার সংগীতনির্ভর ছবিটি পরিচালনা করেছেন ফ্রান্সের জ্যাক অঁদিয়ার। অস্কারের মতো এমন অর্জন হাতে নেওয়ার পর অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী।
মঞ্চে উঠে আবেগাপ্লুত জোয়ি তাঁর মাকে স্মরণ করেন এবং ‘এমিলিয়া পেরেজ’-এর সব শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি শিল্প জগতে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমার দাদি ১৯৬১ সালে এই দেশে এসেছিলেন। আমি গর্বিত একজন অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান, যারা স্বপ্ন, সম্মানবোধ ও কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা নিয়ে বড় হয়েছেন। আমি ডোমিনিকান বংশোদ্ভূত প্রথম আমেরিকান, যে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করছে। আমি জানি, আমি শেষ ব্যক্তি নই। আমি আশা করি, এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই চরিত্রে আমি গান গাওয়ার ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। যদি আমার দাদি আজ বেঁচে থাকতেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হতেন।’
তার এই বক্তব্য এমন এক সময়ে দিলেন যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে কঠোর আগ্রাসন চালাচ্ছে।
চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ একাডেমি পুরস্কার তথা অস্কারের আয়োজন চলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায়। আয়োজনের প্রথম পুরস্কারটি পেয়েছেন আমেরিকান অভিনেতা কিয়েরান কালকিন। ‘আ রিয়েল পেইন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতার স্বীকৃতি পেলেন তিনি।
অন্যদিকে, এবার সেরা অ্যানিমেশন ছবি (স্বল্পদৈর্ঘ্য) হিসেবে ‘ইন দ্য শ্যাডো অব সাইপ্রেস’, ফিচার অ্যানিমেশন হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ‘ফ্লো’। সেরা মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইল বিভাগে পুরস্কার জিতেছে গেল বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’।
সেরা অ্যাডাপ্ট চিত্রনাট্যর পুরস্কার পেয়েছে আলোচিত ছবি ‘কনক্লেভ’। এছাড়া পল ট্যাজওয়েল ‘উইকেড’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পোশাক পরিকল্পনাকারী এবং শন বেকার ‘আনোরা’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন।