আ. লীগ আমলে নেওয়া ১৯০ সেতু বাতিল, বাঁচল ৬৩৯ কোটি টাকা
Published: 13th, January 2025 GMT
বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার জন্য নেওয়া ১৯০টি লোহার সেতু নির্মাণ প্রস্তাব বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাতিলের পেছনে সরকারের যুক্তি হচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব সেতু প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছিল, যার কোনো প্রয়োজন নেই।
স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তদবিরে অপ্রয়োজনীয় সেতুর তালিকা করা হয়েছিল। অথচ অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোহার সেতু সংস্কারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। গত বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অপ্রয়োজনীয় ১৯০টি সেতুর প্রস্তাব বাতিল করা হয়। এতে সরকারের সাশ্রয় হবে ৬৩৯ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় (বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা, ঝালকাঠি ও বরগুনা) নদী ও খালের ওপর অনেক লোহার সেতু করা হয়। ২০১৮ সালে ২ হাজার ৪৯টি লোহার সেতু পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন’ শিরোনামের প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। সেতুগুলোর দৈর্ঘ্য ৩০ থেকে ৩৫ মিটার। ২০২১ সালের প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা করা হয়।
দ্বিতীয় দফায় গত বছরের জুন মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে প্রকল্পের ব্যয় ৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বাড়িয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় এলজিইডি। নির্ধারিত সময়ে লোহার সেতু নির্মাণকাজ শেষ না করে কেন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়, গত ১২ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের এক সভায় তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, চারটি দিক বিবেচনায় ১৯০টি সেতু বাতিল করা হয়েছে। এক, স্থানীয় লোকজনের জন্য সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। দুই, উজান-ভাটিতে কাছাকাছি আরেকটি সেতু রয়েছে। সেতুর কাছাকাছি কোনো গ্রোথ সেন্টার বা গ্রামীণ হাটবাজার নেই। চার, চলমান অর্থনৈতিক সংকটকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।জবাবে এলজিইডি থেকে জানানো হয়, নতুন করে ১৯৬টি লোহার সেতু যোগ করায় প্রকল্পের খরচ বাড়ছে। ওই দিনের সভায় প্রস্তাবিত সেতু নিয়ে প্রশ্ন তোলে কমিশন। সেতুগুলোর অবস্থান, প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় স্বপ্রণোদিত হয়ে গত বছর জুন মাসে বরগুনার আমতলীতে মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে নয়জনের প্রাণহানি হওয়া লোহার সেতুটির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি এ প্রকল্পে ঢোকানো হয়নি। পরে ভেঙে যাওয়া সেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সেতু প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। বাকি ১৯০টি সেতু বাতিলের সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরেকটি প্রকল্প নিয়ে এসব সেতু করা যেতে পারে বলছে কমিশন।
গত বছর ২২ জুন বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়াহাট লোহার সেতু ভেঙে একটি মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে প্রাণ হারান ৯ জন। বরযাত্রী নিয়ে মাইক্রোবাসটি সেতুর মাঝখানে গেলে জরাজীর্ণ সেতুটি ভেঙে যায়। সেতুটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছেন, কিন্তু সেতুটি আয়রন ব্রিজ প্রকল্পে ছিল না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ সেতুর জন্য কেউ তদবির করেননি।
কয়েক মাস আগে তাঁকে এ প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই অনেক কিছুই তাঁর অজানা। তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেতু এ প্রকল্পে আগে ঢোকানো হয়নি। আবার অনেক অগুরুত্বপূর্ণ সেতু তালিকায় ঢুকেছে। আগে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা কেন এমনটা করেছেন, তা জানা নেই তাঁর। প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আদনান আক্তারুল আজমএলজিইডির প্রস্তাবিত ৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকার লোহার সেতু প্রকল্প থেকে ৬৩৯ কোটি টাকা কমিয়ে প্রকল্পের ব্যয় ২ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করে বুধবার একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, আয়রন ব্রিজ প্রকল্প থেকে ১৯০টি সেতু বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব সেতু জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে বেশি। এ মুহূর্তে এসব সেতুর প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব সেতুর কাছাকাছি অন্য সেতু রয়েছে। একই সঙ্গে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশন উদ্যোগী হয়ে বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়াহাট লোহার সেতু প্রকল্পে ঢুকিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কামারখালী থেকে কালিসুরি মাতব্বরহাট সড়কের একটি সেতু এ প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছিল। ২২ মিটার সেতুটির এখন কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই সেতুটি বাতিল করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, চারটি দিক বিবেচনায় ১৯০টি সেতু বাতিল করা হয়েছে। এক, স্থানীয় লোকজনের জন্য সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। দুই, উজান-ভাটিতে কাছাকাছি আরেকটি সেতু রয়েছে। সেতুর কাছাকাছি কোনো গ্রোথ সেন্টার বা গ্রামীণ হাটবাজার নেই। চার, চলমান অর্থনৈতিক সংকটকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এলজিইডি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এ প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৪৯টি সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ১ হাজার ১২৯টি, চলমান আছে ৬৪৮টি। জমি অধিগ্রহণ, ঠিকাদারের সঙ্গে সমস্যা, আইনি জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে ৮২টি সেতু বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা চলছে। বাকি ১৯০টি সেতু বাতিল করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের শুরুতে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ছিলেন সৈয়দ আহমদ আলী। লোহার সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মে তাঁর যুক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ আহমদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন দুই বছর আগে। এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।
বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আদনান আক্তারুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক মাস আগে তাঁকে এ প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই অনেক কিছুই তাঁর অজানা। তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেতু এ প্রকল্পে আগে ঢোকানো হয়নি। আবার অনেক অগুরুত্বপূর্ণ সেতু তালিকায় ঢুকেছে। আগে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা কেন এমনটা করেছেন, তা জানা নেই তাঁর।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সরকার বেশি দামে ধান কেনায় বাজারে দাম বাড়তে পারে: ভূমি উপদেষ্টা
খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার কৃষকের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনছে সরকার। অতীতে কেউ এই দাম দেয়নি। কৃষকরা এবার ধানের সঠিক মূল্য পেয়েছেন। এ জন্য বাজারে ধান-চালের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামে বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে সিন্ডিকেট নিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, গত আমন মৌসুমে ধান কেনায় কোনো সিন্ডিকেট কাজ করতে পারেনি। এবারও পারবে না। এমন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে ধান বিক্রির টাকা সরাসরি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। গুদামে ধান দিতে এসে কোনো কৃষক হয়রানির শিকার হলেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন দায়িত্বে থাকবে– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, সেটা প্রধান উপদেষ্টা জানেন। এ বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই। আমাকে খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হুমায়ুন কবির, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা।
চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলা থেকে সরকার ১৪ হাজার ৬৪৫ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আর সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে ১৩ হাজার ৮১৬ টন।