যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ৫০ দফার পরিকল্পনা প্রকাশ করতে যাচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ‘বৈশ্বিক নেতা’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। স্টারমারের এই পরিকল্পনা ‘দেশ গড়ার দশক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

পরিকল্পনাটির নাম ‘এআই অপরচুনিটিস অ্যাকশন প্ল্যান’। স্থানীয় সময় আজ সোমবার এই পরিকল্পনা উন্মোচন করে ভাষণ দেওয়ার কথা স্টারমারের।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং দেশটির বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিভাগ গতকাল রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এআই প্রবৃদ্ধি অঞ্চল (গ্রোথ জোন) গড়ে তোলা হবে। এসব অঞ্চল মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, প্রথম এআই প্রবৃদ্ধি অঞ্চলটি গড়ে তোলা হবে অক্সফোর্ডশায়ারের কুলহামে। এসব প্রবৃদ্ধি অঞ্চলে তথ্যকেন্দ্রগুলোর জন্য দ্রুত পরিকল্পনা অনুমোদন এবং জ্বালানি গ্রিডে আরও ভালো প্রবেশাধিকারের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।

পুঁজিবাদী ম্যাট ক্লিফোর্ডের নেতৃত্বে গত বছর যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সরকার কমিশন গঠন করেছিল। ওই কমিশনের প্রতিবেদনের ৫০টি সুপারিশের সব কটি গ্রহণ করেছেন কিয়ার স্টারমার। পরিকল্পনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এআই কম্পিউটিং সক্ষমতা ২০ গুণ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি জাতীয় তথ্য পাঠাগার (ডেটা লাইব্রেরি) এবং একটি নিবেদিতপ্রাণ এআই শক্তি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার কথাও বলা আছে।

কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘আমাদের দেশের অভূতপূর্ব পরিবর্তনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই শিল্পের জন্য এমন একটি সরকার প্রয়োজন, যারা তাদের পাশে থাকবে, কিছু না করে বসে থাকবে না এবং সুযোগগুলো হাতছাড়া করতে দেবে না। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে আমরা চুপ করে থাকতে পারি না।’

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুন্য শতাংশে আটকে ছিল। বছরখানেকের মধ্যে আবারও মন্দার কবলে পড়বে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি—এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

এই পরিস্থিতিতে সংকট উত্তরণের পথ হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্প থেকে এক দশকের বেশি সময়ে প্রতি বছর ৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের অর্থনৈতিক অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এটা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, প্রযুক্তির উৎকর্ষে প্রতিবছর ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে পারবে যুক্তরাজ্য।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত দক্ষতায় বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য। শুরুতে চীনের অবস্থান। এর পরেই আছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ২০২৩ সালের ‘গ্লোবাল এআই ভাইব্রেন্সি র‍্যাঙ্কিং’-এ এটা বলা হয়েছে।

নতুন পরিকল্পনার বিষয়ে কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা হলো যুক্তরাজ্যকে বিশ্বের বুকে নেতৃত্বের আসনে নিয়ে যাওয়া।’ তাঁর মতে, এই পরিকল্পনা দেশটিতে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াবে। মানুষের পকেটে আরও বেশি অর্থ ভরবে। সরকারি কাজের ধরন বদলে দেবে। আর পরিবর্তনগুলো এই সরকার আনছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি

হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে স্মারকলিপি দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা–কর্মচারী। 

বৃহস্পতিবার ২৮ হাজার ৩০৭ কর্মীর সই করা এক হাজার ৪২৮ পৃষ্ঠার এই স্মারকলিপি উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়। 

এতে বলা হয়, সংস্কার দাবির কারণে মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও গত ১৬ অক্টোবর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ১০ জন কর্মকর্তাকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করে। একই দিন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরদিন সকাল থেকে শুরু হয় কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার এবং আরও ১৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এই ঘটনায় সমিতির কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়, যার ফলে কিছু এলাকায় সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।

স্মারকলিপি আরও বলা হয়, আরইবি এখনও মামলা, চাকরিচ্যুতি, বদলি, সাসপেন্ড বিভিন্ন হয়রানিমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। শুধু স্মারকলিপিতে সই দেওয়ার কারণেও সম্প্রতি মাদারীপুর ও রাজশাহীর কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সংযুক্ত করে তদন্তের নামে হয়রানি ও শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। চাকরি হারিয়ে, মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি সমিতির ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সই করা স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

স্মারকলিপিতে মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ