ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) শীর্ষ সাতটি পদ এখন ফাঁকা। করপোরেশনের নিজস্ব জনবল দিয়ে আপাতত কাজ চালিয়ে নিলেও ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা। স্থবির হয়ে পড়েছে উন্নয়নমূলক কাজ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে, শূন্য পদে পদায়নের কাজ চলছে। তবে কবে নাগাদ পদায়ন হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এসব সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সরকারের দুজন অতিরিক্ত সচিব প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ছয় দিন ধরে এই পদ খালি আছে।

গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করতে গিয়ে যাচাই-বাছাই করতে হচ্ছে। তাই কিছুটা সময় লাগছে। মো.

নিজাম উদ্দিন, সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ

দায়িত্ব পালন করা প্রশাসকের মধ্যে একজন এক মাস দায়িত্ব পালনের পর অবসরে গেছেন। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে এই কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। এর পর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির শীর্ষ এই পদে আর কাউকে পদায়ন করা হয়নি।

করপোরেশনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা প্রধান নির্বাহী পদেও কেউ নেই তিন সপ্তাহ ধরে। সর্বশেষ এই পদে অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ২৪ ডিসেম্বর তিনি শেষ দিনের মতো অফিস করেছেন। এর পর থেকে এই পদ খালি। পরে সংস্থাটির সচিব মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঞাকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই পদে কর্মকর্তা না থাকার কারণে প্রশাসনিক ও মাঠপর্যায়ের প্রায় সব কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসক না থাকার কারণে উন্নয়নকাজের নথি অনুমোদন নেওয়া যাচ্ছে না। সেবামূলক সংস্থা হিসেবে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়। এসব কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ভিন্ন পরিস্থিতিতে একেক দিন একেক রকম সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনেক কাজের চাহিদা আছে, সুপারিশ থাকে—এসব বাস্তবায়ন করার কেউ নেই।

বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা, নিরীক্ষা কর্মকর্তা ও জনসংযোগ কর্মকর্তার পদে কেউ নেই। সংস্থাটির সূত্রগুলো বলছে, এসব পদে সরকার অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পদায়ন করে থাকে। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তুলনামূলক নিচের কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

শীর্ষ পর্যায়ের সাত কর্মকর্তার পদ খালি থাকায় কীভাবে করপোরেশন পরিচালনা করা হচ্ছে—এমন প্রশ্নে বশিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ কর্মকর্তার রুটিন বদলি হয়েছে। তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের অন্য কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, হিসাব বিভাগে টাকা ছাড় করতে গিয়ে আইনের নানা দিক দেখতে হয়। কিন্তু অভিজ্ঞ কেউ না থাকায় চরম ভোগান্তি হচ্ছে। আবার ৫ আগস্টের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিরুদ্ধে মামলা করার প্রবণতা বাড়ছে। এসবের সমাধানে আইন কর্মকর্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু এই পদেও লোক নেই।

সব মিলিয়ে সংস্থাটির সেবামূলক নানা কাজ গতিশীলভাবে চালিয়ে নিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করতে গিয়ে যাচাই–বাছাই করতে হচ্ছে। তাই কিছুটা সময় লাগছে। তবে দ্রুত যাতে এসব পদে পদায়ন করা হয়, সেই চেষ্টা তাঁরা করছেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সামারিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ

চলতি বছর সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে সমীক্ষায়।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এরপরে পরে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫তম অবস্থানে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে উত্তর কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে মোট সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার ১০০ সেনা। 

অন্যদিকে, মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। মিয়ানমারের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫ হাজার সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬ হাজার সেনা। 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ