Prothomalo:
2025-03-03@14:14:05 GMT

বিপন্ন প্রাণীর বন্ধু তিনি

Published: 13th, January 2025 GMT

পাশাপাশি বসে খাচ্ছে তিনটি লক্ষ্মীপ্যাঁচা। একবার চোখ মেলে তাকায়, আবার ঘুম ঘুম ভাব। মুখে তুলে না দিলে যেন খাবে না! ঠিক আদরের সন্তানের মতো প্যাঁচাগুলোর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন সালাহ উদ্দিন। বিপন্ন অবস্থায় প্যাঁচাগুলোকে উদ্ধার করেছেন তিনি। সম্পূর্ণ সুস্থ হলেই তাদের মুক্ত করে দেবেন।

এর আগেও ১২টি বিপন্ন প্যাঁচা উদ্ধার করে সালাহ উদ্দিন প্রকৃতিতে ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু প্যাঁচা নয়, প্রায় ৫০টি বিপন্ন পাখি, ২০০টি কুকুর, ২৫০টি বিড়াল, ১৫০টি সাপ উদ্ধারের পরে শুশ্রূষা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

সালাহ উদ্দিনের ডাকনাম নীল। বয়স ৩৭। চাকরি করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণাগারে। বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার সমসাদীপুর এলাকায়। ভয়াবহ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন। এর আগে চাকরি করেছেন ঢাকায় আইসিডিডিআরবি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে। ২০১৭ সালে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় মধুর যন্ত্রণায় পড়তে হয়েছে সালাহ উদ্দিনকে। যেদিন বিয়ে করতে যাবেন, সেদিন তাঁর বাড়িতে ছিল ২৪টি বিড়াল ও ২০০টি সুইচ অ্যালবিনো জাতের ইঁদুর। স্ত্রী এসব দেখে মন খারাপ করতে পারে, তাই বিড়ালগুলো মানুষকে দিয়ে দেন। ইঁদুরগুলো লুকিয়ে রাখেন একজনের বাড়িতে।

কুড়িয়ে পাওয়া এই জাতের ইঁদুর পুষতে গিয়ে সালাহ উদ্দিনের বাড়িতে শেষ পর্যন্ত ইঁদুরের ছোট্ট একটা খামার দাঁড়িয়ে যায়। এ থেকে কিছু আয়ও হয়। স্ত্রী এসে সব শুনে বললেন, ‘খারাপ কী? ইঁদুরগুলো বাড়িতে নিয়ে আসা হোক।’ এরপর ইঁদুরগুলো আবার বাড়িতে এল। ইঁদুরের সুবাদে বন্য প্রাণী উদ্ধার ও সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার কাজও চলতে থাকল তাঁর। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ নিলেন সাপ উদ্ধারের জন্যও।

সালাহ উদ্দিন সবচেয়ে বিপত্তির মুখে পড়েন প্যাঁচা নিয়ে। প্রথম উদ্ধার করেছিলেন হুতুম প্যাঁচা। এই প্যাঁচা বাড়িতে আনার পরে তাঁর বাবা ভীষণ চটে যান। মানুষ মনে করে, প্যাঁচা অলক্ষুনে বা অপয়া। এই প্যাঁচার কারণে বাড়ির কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে। সালাহ উদ্দিন বোঝাতে সক্ষম হন, এটা ভুল ধারণা। বরং প্যাঁচা উপকারী প্রাণী। শুধু ইঁদুর খেয়েই একটা প্যাঁচা তার জীবনে প্রায় ২৫ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে।

একবার এক ঘটনা ঘটল। একটি প্যাঁচাকে সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলেও সে যায় না। তিনবার ফিরে আসে প্যাঁচাটি। সালাহ উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে, প্যাঁচাও তাঁর সঙ্গে গিয়ে গবেষণাগারে বসে থাকে। ফেরার সময় আবার তাঁর সঙ্গে বাড়ি ফেরে। সব শুনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সালেহ রেজা প্যাঁচাটি প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি পরামর্শ দেন। এ জন্য প্যাঁচাটিকে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। খাবার বন্ধ করে দিলে প্যাঁচাটি চলে যায়।

সালাহ উদ্দিনের বাড়ির বুকশেলফের ফাঁকা জায়গায় বসবাস করে লক্ষ্মীপ্যাঁচা তিনটি।.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দেড় ঘণ্টায় শেষ সুলভ মূল্যের ডিম-দুধ, পাননি অনেকেই

নির্ধারিত এলাকায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গাড়ি পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এরপর শুরু হয় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও গরুর মাংস বিক্রি। দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল গাড়িতে ডিম ও দুধ নেই। কেবল ১৬ কেজি গরুর মাংস অবশিষ্ট রয়েছে। অর্থাৎ মাত্র দেড় ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য আনা দুধ ও ডিম।

আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী ওয়্যারলেস এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিন নগরের ওয়্যারলেস ও টেক্সটাইল এলাকায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। এই কর্মসূচির আওতায় পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ প্রতিটি গাড়িতে ২০০ লিটার দুধ, ১ হাজার ৫০০ পিস ডিম ও ৭৫ কেজি করে মাংস ছিল। সে হিসেবে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ২০০ লিটার দুধ ও ১২৫ ডজন ডিম বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। তবে দুপুর ১২টার দিকে তেমন ভিড় দেখা যায়নি সেখানে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁরা অনেকে আগে এসেও পণ্য পাননি।

এদিন অন্তত ১০ ক্রেতা দুধ-ডিম না পেয়ে ফেরত গেছেন। ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি দুপুর ১২টার দিকে এসে ডিম পাই নাই। বাসা থেকে আসতে আসতেই দেখি সব শেষ। তাঁরা নাকি দেড় হাজার ডিম আনছে। তাহলে আমরা পাই নাই কেন?’

গাড়ি থেকে এসব পণ্য কেনার জন্য প্রথমে টাকা দিয়ে স্লিপ নিতে হয়। কর্মকর্তারা জানান, একজন সর্বোচ্চ এক ডজন ডিম, এক বা দুই লিটার দুধ ও এক কেজি মাংস কিনতে পারেন। কেউ চাইলে শুধু ডিম, দুধ অথবা মাংস কিনতে পারবেন। তবে মাংসের চাহিদা তুলনামূলক কম।

দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় ফ্রিজার ট্রাক রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য পণ্য নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রামে সে সুযোগ নেই। তাই পরিমাণ কম। আবার দ্রুত ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সবাইকে পণ্য দেওয়া হয়েছে। মাংসের চাহিদা কম থাকায় কিছু মাংস থেকে গেছে। ডিমের চাহিদা বেশি ছিল। দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ