Prothomalo:
2025-01-31@12:11:10 GMT

বিপন্ন প্রাণীর বন্ধু তিনি

Published: 13th, January 2025 GMT

পাশাপাশি বসে খাচ্ছে তিনটি লক্ষ্মীপ্যাঁচা। একবার চোখ মেলে তাকায়, আবার ঘুম ঘুম ভাব। মুখে তুলে না দিলে যেন খাবে না! ঠিক আদরের সন্তানের মতো প্যাঁচাগুলোর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন সালাহ উদ্দিন। বিপন্ন অবস্থায় প্যাঁচাগুলোকে উদ্ধার করেছেন তিনি। সম্পূর্ণ সুস্থ হলেই তাদের মুক্ত করে দেবেন।

এর আগেও ১২টি বিপন্ন প্যাঁচা উদ্ধার করে সালাহ উদ্দিন প্রকৃতিতে ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু প্যাঁচা নয়, প্রায় ৫০টি বিপন্ন পাখি, ২০০টি কুকুর, ২৫০টি বিড়াল, ১৫০টি সাপ উদ্ধারের পরে শুশ্রূষা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

সালাহ উদ্দিনের ডাকনাম নীল। বয়স ৩৭। চাকরি করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণাগারে। বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার সমসাদীপুর এলাকায়। ভয়াবহ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন। এর আগে চাকরি করেছেন ঢাকায় আইসিডিডিআরবি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে। ২০১৭ সালে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় মধুর যন্ত্রণায় পড়তে হয়েছে সালাহ উদ্দিনকে। যেদিন বিয়ে করতে যাবেন, সেদিন তাঁর বাড়িতে ছিল ২৪টি বিড়াল ও ২০০টি সুইচ অ্যালবিনো জাতের ইঁদুর। স্ত্রী এসব দেখে মন খারাপ করতে পারে, তাই বিড়ালগুলো মানুষকে দিয়ে দেন। ইঁদুরগুলো লুকিয়ে রাখেন একজনের বাড়িতে।

কুড়িয়ে পাওয়া এই জাতের ইঁদুর পুষতে গিয়ে সালাহ উদ্দিনের বাড়িতে শেষ পর্যন্ত ইঁদুরের ছোট্ট একটা খামার দাঁড়িয়ে যায়। এ থেকে কিছু আয়ও হয়। স্ত্রী এসে সব শুনে বললেন, ‘খারাপ কী? ইঁদুরগুলো বাড়িতে নিয়ে আসা হোক।’ এরপর ইঁদুরগুলো আবার বাড়িতে এল। ইঁদুরের সুবাদে বন্য প্রাণী উদ্ধার ও সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার কাজও চলতে থাকল তাঁর। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ নিলেন সাপ উদ্ধারের জন্যও।

সালাহ উদ্দিন সবচেয়ে বিপত্তির মুখে পড়েন প্যাঁচা নিয়ে। প্রথম উদ্ধার করেছিলেন হুতুম প্যাঁচা। এই প্যাঁচা বাড়িতে আনার পরে তাঁর বাবা ভীষণ চটে যান। মানুষ মনে করে, প্যাঁচা অলক্ষুনে বা অপয়া। এই প্যাঁচার কারণে বাড়ির কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে। সালাহ উদ্দিন বোঝাতে সক্ষম হন, এটা ভুল ধারণা। বরং প্যাঁচা উপকারী প্রাণী। শুধু ইঁদুর খেয়েই একটা প্যাঁচা তার জীবনে প্রায় ২৫ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে।

একবার এক ঘটনা ঘটল। একটি প্যাঁচাকে সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলেও সে যায় না। তিনবার ফিরে আসে প্যাঁচাটি। সালাহ উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে, প্যাঁচাও তাঁর সঙ্গে গিয়ে গবেষণাগারে বসে থাকে। ফেরার সময় আবার তাঁর সঙ্গে বাড়ি ফেরে। সব শুনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সালেহ রেজা প্যাঁচাটি প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি পরামর্শ দেন। এ জন্য প্যাঁচাটিকে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। খাবার বন্ধ করে দিলে প্যাঁচাটি চলে যায়।

সালাহ উদ্দিনের বাড়ির বুকশেলফের ফাঁকা জায়গায় বসবাস করে লক্ষ্মীপ্যাঁচা তিনটি।.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্ঘটনায় আহত অভিনেত্রী খুশি, চোখের ওপর পড়েছে ১০ সেলাই

দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ছোটপর্দার অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। বুধবার সকালে রমনা পার্ক থেকে বাড়ি ফেরার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় তিনি আহত হন। অভিনেত্রীর ছেলে সৌম্য জ্যোতি সমকালকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বুধবার সকালে আম্মু রমনা পার্কে হাটতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাসায় ফেরার সময় গলির মধ্যে একটি অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দিলে আম্মু ছিটকে পড়ে যায় এবং তার ঠিক চোখের ওপর জখম হয়। পরে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন তিনি আপাতত ভালো আছেন।’

এদিকে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান শাহনাজ খুশি। সেখানে তিনি বলেন, ‘বেশি না, মাত্র ১০টা সেলাই পড়েছে। এ আর এমন কি বলেন? চোখটা অন্ধ হয় নাই, হয় নাই ব্রেইন হ্যামারেজের মত শেষ অবস্থা! সেটাই তো অনেক বেশি পাওয়া! এ তেমন কিছু না, চোখের উপরের সেনসেটিভ জায়গায় মাত্র ১০ টা সেলাই লেগেছে! আমি যে প্রাণে বেঁচে আছি এ জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা কাছে শুকরিয়া আদায় করছি!’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিচ্ছু চাই না আমি, শুধু যে মায়েরা/বাবারা ছোট্ট বাচ্চাটার হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে স্কুলে আসেন অথবা নানান প্রয়োজনে রাস্তায় যান, তাদের সতর্ক করতে পোস্টটা দিলাম। আমি হয়ত ভেঙেচুরে বেঁচে গেছি। কোন বাচ্চা এ আঘাত নিতে পারবে না! ব্যাটারি চালিত অসভ্য/বর্বর যানবাহনটি এবং তার অসভ্য চালক থেকে সর্বদা সতর্ক থাকবেন। যদিও আমি গলির ভেতরের রাস্তায়, প্রাতঃ ভ্রমণ শেষে অতি সর্তকতার সাথেই একেবারে কিনার দিয়ে হেঁটে ফিরছিলাম! ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বীরদর্পে চলে গেছে! ওরা মেধাবী যান চালক, কারো জীবনের ক্ষতির তোয়াক্কা করে না! আপনার এবং আপনার সন্তানের দায়িত্ব একান্তই আপনার। আজ চারদিন পরও মাথার অর্ধেকে কোন বোধশক্তি নাই!

সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘জানি না স্বাভাবিক চেহারায় ফিরবো কিনা, সেটা যদিও ফিরি রক্তাক্ত সেই পথে পড়ে থাকা সকালের ট্রমা অনেককাল ভুলবো না! কাতর অবস্থায় বিছানায় পরে থেকে বারবার একটা প্রশ্ন মনে আসছে, এই যে যত্রতত্র কুপিয়ে জখম, ট্রেন-বাস, রিকশা কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে দিনেরাতে ছিনতাই। কার কাছে চাইব আমাদের সন্তানদের নিরাপদ পথচলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ