‘৩০ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়া না দিলে বাড়ি পাব না’
Published: 13th, January 2025 GMT
পাঁচ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্যালিসেইডস’ দাবানলে সবকিছু হারিয়েছেন মায়া লিবারম্যান। মাথা গোঁজার ঠাঁইও নেই। এ পরিস্থিতিতে বাস করার জন্য একটি বাসা খুঁজে পেতে মরিয়া তিনি। কিন্তু অসাধু বাড়িওয়ালারা এই দুঃসময়ের সুযোগ নিচ্ছেন। তাঁরা বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন এলাকায় আকাশছোঁয়া বাড়িভাড়ার এমন চিত্র দেখা গেছে।
পেশায় স্টাইলিস্ট ৫০ বছর বয়সী মায়া বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধি চরমে পৌঁছেছে। এটা নোংরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যাওয়ার জন্য আর কোনো জায়গা পাচ্ছি না।’
গত মঙ্গলবার থেকে ভয়াবহ দাবানলে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। পাঁচ দিনেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুড়ে গেছে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার এলাকা। ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১০ হাজার স্থাপনা। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শহরের পশ্চিম দিকে সান্তা মোনিকা থেকে মালিবু এলাকা পর্যন্ত জ্বলতে থাকা দাবানল থেকে বাঁচতে এরই মধ্যে দেড় লক্ষাধিক মানুষকে শহরটি ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দাবানলে মৃত্যুর সংখ্যা ১৬–তে পৌঁছেছে।
মাসে ১৭ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়ায় একটি বাড়ি পেতে আবেদন করেছিলাম। এখন বাড়িওয়ালা বলছে, ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়া না দিলে বাড়ি পাব না। মায়া লিবারম্যান, লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দাএকটি দাবানলে ছাই হয়ে গেছে প্যাসিফিক প্যালিসেইডস নামে একটি বিলাসবহুল এলাকা। এ এলাকায় এক সপ্তাহ আগেও বিলি ক্রিস্টাল ও কেট বেকিনসেলের মতো তারকাদের বসবাস ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আগ্রহের আবাসন এলাকা হিসেবেও এর পরিচিতি ছিল। কিন্তু ওই এলাকা এখন পুরোপুরি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় যাঁদের ঘরবাড়ি এখনো টিকে আছে, তাঁদেরও অন্যত্র জায়গা খুঁজে নিতে বলা হয়েছে।
এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন সেখানকার গড়পড়তা আয়ের লোকজন। একে কাজে লাগাচ্ছেন কিছু সুযোগসন্ধানী বাড়িওয়ালা। মানুষের দুর্দশাকে পুঁজি করে তাঁরা অর্থ আয় করছেন।
লিবারম্যান বলেন, ‘মাসে ১৭ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়ায় একটি বাড়ি পেতে আবেদন করেছিলাম আমি। এখন বাড়িওয়ালা বলছে, ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়া না দিলে বাড়ি পাব না।’
লিবারম্যান অভিযোগ করেন, বাড়িওয়ালা তাঁকে বলেছেন, অন্যরা আরও বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি নিতে প্রস্তুত এবং তাঁরা নগদ অর্থ নিয়ে বসে আছেন। এটি পুরোপুরি উন্মত্ততা।
লিবারম্যানের মতো এ ধরনের ঘটনা লস অ্যাঞ্জেলেসে এখন প্রচুর ঘটছে।
বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া টিভি প্রযোজক অ্যালেক্স স্মিথ বলেন, ‘আমার কয়েকজন বন্ধু লস অ্যাঞ্জেলেসের বাইরে হোটেল ভাড়া করেছে। তারা সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের কাছে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়েছে।’
বাড়িভাড়া এভাবে হঠাৎ বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বোন্টা। শনিবার তিনি সতর্ক করে বলেন, সুযোগে বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে আইন রয়েছে।
রব বোন্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘জরুরি পরিস্থিতিতে বাড়িভাড়া বাড়ানো অবৈধ। আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেব। যারা এসব করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, একবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে কোনো সেবাদাতা ১০ শতাংশের বেশি মূল্য বৃদ্ধি করতে পারবেন না। ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় কোম্পানিগুলোর জন্যও এ নীতি প্রযোজ্য।
বাড়িভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ও দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে গাড়িতেই ঘুমাচ্ছেন ৬৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, বাড়িভাড়া বাড়ানোর বিরুদ্ধে যেসব আইন রয়েছে, সেগুলো অকার্যকর।
৬৯ বছর বয়সী ব্রায়ান প্যাসিফিক প্যালিসেইডসের একটি ছোট্ট ভাড়া করা ভবনে দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাস করছিলেন। কিন্তু দাবনালে সবকিছু পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জন্য বাড়িভাড়া বাড়বে না, এমন নিশ্চয়তাটুকুও উড়ে গেছে। তিনি অবসরজীবনে যে পেনশন পান, তা দিয়ে শহরে বাড়ি ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য হবে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের শহরাঞ্চলে গত এক দশকে বাড়িভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ঘরপোড়া মানুষগুলোর বসবাসের প্রয়োজনে হঠাৎ করে শহরে ভিড় বাড়তে থাকায় বাড়িভাড়া আরও বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ব্রায়ান বলেন, ‘আমি হাজারো মানুষের সঙ্গে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার বাজারে এসে পড়েছি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ প্লে অফে রিয়াল-ম্যানসিটি মুখোমুখি
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার সিটির খারাপ সময় যেন শেষই হচ্ছে না। নতুন ফরম্যাটের গ্রুপ পর্বে খারাপ সময় পার করেছে দু’দলই। ম্যানসিটি গ্রুপের শেষ ম্যাচে জিতে প্লে অফ নিশ্চিত করেছে।
রিয়াল মাদ্রিদের প্লে অফে উঠতে খুব বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। তবে সেরা আটে থেকে সরাসরি শেষ ষোলো নিশ্চিত করতে পারেনি কার্লো আনচেলত্তির দল।
সেরা আটে থাকতে না পারার শাস্তিই যেন পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। সেরা ষোলোয় যাওয়ার লড়াইয়ে প্লে অফ খেলতে হবে রিয়ালের। ওই লড়াইয়ে ম্যানচেস্টার সিটিকে পেয়েছে লস ব্লাঙ্কোসরা।
আগামী ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্লে অফের প্রথম লেগ মাঠে গড়াবে। ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি মাঠে গড়াবে প্লে অফের দ্বিতীয় লেগ। শেষ ষোলোর লড়াই ৪ ও ৫ মার্চ এবং ১১ ও ১২ মার্চ মাঠে গড়াবে।
কোয়ার্টার ফাইনাল হবে ৮ ও ৯ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় লেগ হবে ১৫ ও ১৬ এপ্রিল। এছাড়া ২৯ ও ৩০ এপ্রিল সেমিফাইনালের প্রথম লেগ এবং ৬ ও ৭ মে দ্বিতীয় লেগ মাঠে গড়াবে। ৩১ মে হবে ফাইনাল।