পাঁচ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্যালিসেইডস’ দাবানলে সবকিছু হারিয়েছেন মায়া লিবারম্যান। মাথা গোঁজার ঠাঁইও নেই। এ পরিস্থিতিতে বাস করার জন্য একটি বাসা খুঁজে পেতে মরিয়া তিনি। কিন্তু অসাধু বাড়িওয়ালারা এই দুঃসময়ের সুযোগ নিচ্ছেন। তাঁরা বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন এলাকায় আকাশছোঁয়া বাড়িভাড়ার এমন চিত্র দেখা গেছে।

পেশায় স্টাইলিস্ট ৫০ বছর বয়সী মায়া বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধি চরমে পৌঁছেছে। এটা নোংরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যাওয়ার জন্য আর কোনো জায়গা পাচ্ছি না।’

গত মঙ্গলবার থেকে ভয়াবহ দাবানলে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। পাঁচ দিনেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুড়ে গেছে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার এলাকা। ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১০ হাজার স্থাপনা। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শহরের পশ্চিম দিকে সান্তা মোনিকা থেকে মালিবু এলাকা পর্যন্ত জ্বলতে থাকা দাবানল থেকে বাঁচতে এরই মধ্যে দেড় লক্ষাধিক মানুষকে শহরটি ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দাবানলে মৃত্যুর সংখ্যা ১৬–তে পৌঁছেছে।

মাসে ১৭ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়ায় একটি বাড়ি পেতে আবেদন করেছিলাম। এখন বাড়িওয়ালা বলছে, ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়া না দিলে বাড়ি পাব না। মায়া লিবারম্যান, লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা

একটি দাবানলে ছাই হয়ে গেছে প্যাসিফিক প্যালিসেইডস নামে একটি বিলাসবহুল এলাকা। এ এলাকায় এক সপ্তাহ আগেও বিলি ক্রিস্টাল ও কেট বেকিনসেলের মতো তারকাদের বসবাস ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আগ্রহের আবাসন এলাকা হিসেবেও এর পরিচিতি ছিল। কিন্তু ওই এলাকা এখন পুরোপুরি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় যাঁদের ঘরবাড়ি এখনো টিকে আছে, তাঁদেরও অন্যত্র জায়গা খুঁজে নিতে বলা হয়েছে।

এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন সেখানকার গড়পড়তা আয়ের লোকজন। একে কাজে লাগাচ্ছেন কিছু সুযোগসন্ধানী বাড়িওয়ালা। মানুষের দুর্দশাকে পুঁজি করে তাঁরা অর্থ আয় করছেন।

লিবারম্যান বলেন, ‘মাসে ১৭ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়ায় একটি বাড়ি পেতে আবেদন করেছিলাম আমি। এখন বাড়িওয়ালা বলছে, ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়া না দিলে বাড়ি পাব না।’

লিবারম্যান অভিযোগ করেন, বাড়িওয়ালা তাঁকে বলেছেন, অন্যরা আরও বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি নিতে প্রস্তুত এবং তাঁরা নগদ অর্থ নিয়ে বসে আছেন। এটি পুরোপুরি উন্মত্ততা।

লিবারম্যানের মতো এ ধরনের ঘটনা লস অ্যাঞ্জেলেসে এখন প্রচুর ঘটছে।

বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া টিভি প্রযোজক অ্যালেক্স স্মিথ বলেন, ‘আমার কয়েকজন বন্ধু লস অ্যাঞ্জেলেসের বাইরে হোটেল ভাড়া করেছে। তারা সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের কাছে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়েছে।’

বাড়িভাড়া এভাবে হঠাৎ বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বোন্টা। শনিবার তিনি সতর্ক করে বলেন, সুযোগে বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে আইন রয়েছে।

রব বোন্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘জরুরি পরিস্থিতিতে বাড়িভাড়া বাড়ানো অবৈধ। আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেব। যারা এসব করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, একবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে কোনো সেবাদাতা ১০ শতাংশের বেশি মূল্য বৃদ্ধি করতে পারবেন না। ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় কোম্পানিগুলোর জন্যও এ নীতি প্রযোজ্য।

বাড়িভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ও দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে গাড়িতেই ঘুমাচ্ছেন ৬৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, বাড়িভাড়া বাড়ানোর বিরুদ্ধে যেসব আইন রয়েছে, সেগুলো অকার্যকর।

৬৯ বছর বয়সী ব্রায়ান প্যাসিফিক প্যালিসেইডসের একটি ছোট্ট ভাড়া করা ভবনে দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাস করছিলেন। কিন্তু দাবনালে সবকিছু পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জন্য বাড়িভাড়া বাড়বে না, এমন নিশ্চয়তাটুকুও উড়ে গেছে। তিনি অবসরজীবনে যে পেনশন পান, তা দিয়ে শহরে বাড়ি ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য হবে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের শহরাঞ্চলে গত এক দশকে বাড়িভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ঘরপোড়া মানুষগুলোর বসবাসের প্রয়োজনে হঠাৎ করে শহরে ভিড় বাড়তে থাকায় বাড়িভাড়া আরও বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ব্রায়ান বলেন, ‘আমি হাজারো মানুষের সঙ্গে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার বাজারে এসে পড়েছি।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মার্কিন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধির টেলিকনফারেন্স

যুক্তরাষ্ট্রের উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অ্যালেক্স এন ওং বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ (উচ্চ প্রতিনিধি) ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে টেলিকনফারেন্স করেছেন। দুই কর্মকর্তা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে বলেন, নতুন মার্কিন প্রশাসন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ।

মার্কিন সরকার সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী। ২০১৭ সাল থেকে তারা প্রায় ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রেখেছে এবং জাতিসংঘকে জরুরি খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্র জুলাই বিদ্রোহের সময় বাংলাদেশের ছাত্রী প্রতিবাদী নেতাদের মর্যাদাপূর্ণ ম্যাডেলিন অ্যালব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ